আবাহনী-মোহামেডানের জার্সি কাদের গায়ে?

আবাহনী-মোহামেডানের জার্সি গায়ে তোলা ফুটবলারদের কাছে স্বপ্ন ছিল একসময়। কিন্তু এখন সুযোগ এমনিতেই এসে যায়। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি নামে। ঐতিহ্যবাহী আকাশি-নীল আর সাদা-কালো জার্সি নতুন মৌসুমে এমন অনেকের গায়ে উঠতে যাচ্ছে, যাঁরা আগে কখনো ভাবেননি।
এর বড় কারণ, দেশে এখন চলছে তীব্র খেলোয়াড়-সংকট। তার ওপর নবাগত শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব দুই প্রধানের ঘর ভেঙে দল গড়েছে। মোহামেডানের ১০ জন আর আবাহনীর ৪ জন খেলোয়াড় নিয়ে নিয়েছে এ দলটি। দুই প্রধানের ঘরে এরপর হাত পড়েছে মুক্তিযোদ্ধার। এখন দেখা যাচ্ছে, আবাহনী কুড়িয়ে-কাচিয়ে গতবারের ৫-৬ জনকে পেলেও মোহামেডানের সবাই দল ছেড়েছে। দলবদলের বাজারে এমন অবস্থা যে, দুটি দল গড়ার পর আর পছন্দের খেলোয়াড় নেই। ফলে অখ্যাতদের দিকে হাত বাড়াতে হচ্ছে প্রধান দুই দলকে। আবাহনী তবু পরিচিত কিছু খেলোয়াড় জোগাড় করেছে, মোহামেডান তো তাও না!
আমিনুল, আরমান আজিজ, শরিফ, কমল, এমিলি, নাসির, নাসিরুলদের শূন্যস্থান পূরণে মোহামেডান এখন পর্যন্ত কথা বলেছে গোলরক্ষক হিমেল, টিটু, উত্তমের সঙ্গে। রক্ষণে রমজান, শওকত, ভাসানী, প্রদীপ বড়ুয়া, মনু, আরাফাত রনি, রাজীব; মাঝমাঠে মলয়, রনি, কামরুল, রাজন, কবির, পাপ্পু; আক্রমণে রিদন, তৌফিক, আনোয়ারের সঙ্গে। এই খেলোয়াড়দের অনেকের কাছেই মোহামেডানের কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়া একটা বিরাট বিস্ময়!
শুকতারার রাজীব যেমন বললেন, ‘মোহামেডান কাছ থেকে ডাক পাব, এটা আমি ভাবিনি। প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রথমেই বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আসলে মোহামেডান খালি হয়ে যাওয়াতেই হয়তো আমার কথা ভেবেছেন কর্মকর্তারা।’ শেখ রাসেলের রমজানের কথা, ‘স্বপ্ন ছিল বড় দলে খেলব। তবে এভাবে যে মোহামেডান থেকে ডাক পাব, সত্যি কথা বলতে, পুরোপুরি ভাবিনি।’
টানা ৮ বার মোহামেডান অধিনায়কের বাহুবন্ধনী পরা জাকারিয়া পিন্টুর দুঃখ, ‘আগে এই জার্সি পরার জন্য কত স্বপ্ন থাকত খেলোয়াড়দের। এই জার্সি পরলে সমীহ পাওয়া যেত প্রতিপক্ষের। এখন তো এটা মামুলি ব্যাপার। যে কেউ পরতে পারে। খেলোয়াড়-সংকটের কারণে ক্লাবই বা কী করবে। কাউকে না-কাউকে তো জার্সি পরে মাঠে নামতে হবে!’
মোহামেডানের চেয়ে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে আবাহনী। গত তিনটি পেশাদার ফুটবল লিগের চ্যাম্পিয়নরা বিপ্লব, সুজন, রজনী, এনামুল, মিশু, মতিউর মুন্নাদের হারালেও দলে পাচ্ছে নজরুল, প্রাণতোষ, উজ্জ্বল, আবুল, সিরাজীদের। সঙ্গে আলফাজ, শুভ্র, অরূপ বৈদ্য, চৌমিন রাখাইন, রনিসহ আরও কয়েকজন তরুণকে নেওয়া হচ্ছে। আবাহনীর সম্ভাব্য এই দলটা তারকাসমৃদ্ধ নয়, তবে শিরোপা লড়াই দেওয়ার মতোই হবে বলে বিশ্বাস কর্মকর্তাদের। তার পরও এই দলটি কি সমর্থকদের প্রত্যাশার আবাহনী?
আবাহনী কোচ অমলেশ সেন বলছেন, ‘অবশ্যই আমরা আরও শক্তিশালী দল গড়তে চাই। কিন্তু খেলোয়াড় কোথায়? আগে খেলোয়াড়দের কাছে আবাহনী-মোহামেডানের জার্সির একটা আকর্ষণ ছিল। কিন্তু এখন খেলোয়াড়দের কাছে আকর্ষণের নাম টাকা। টাকার জন্য আজ এই ক্লাবে, কাল ওই ক্লাবে খেলছে। তাই বাধ্য হয়ে হয়তো এমন অনেক খেলোয়াড়ের গায়ে জার্সি তুলে দিচ্ছে ক্লাব, যারা ওই জার্সির জন্য তৈরি নয়।’
টাকাই মূল আকর্ষণ, জার্সি নয়? কথাটা মানলেন না গোলরক্ষক আমিনুল, যাঁর সঙ্গী হয়ে এবার জাতীয় দলের প্রায় সব খেলোয়াড়ই নাম লেখাতে যাচ্ছেন শেখ জামালে, ‘টাকাই মূল আকর্ষণ, এটা মানতে পারছি না। আমাদের দেশে আবাহনী-মোহামেডানই ফুটবলের সবকিছু নয়। অন্য দল যদি ভালো করতে চায় তাহলে অবশ্যই খেলোয়াড় হিসেবে তাদের ডাকে সাড়া দেওয়া উচিত।’
জাতীয় দলের সাবেক কোচ শফিকুল ইসলাম পুরো ব্যাপারটাকে দেখছেন এভাবে, ‘মানসম্মত খেলোয়াড় বেশি থাকলে সমস্যাটা হতো না। তবে কম পরিচিত বা একেবারেই তরুণেরা আবাহনী-মোহামেডানে সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে হয়তো এরাই হবে তারকা। দুই প্রধানের সমর্থকেরা এখন হতাশ হলেও বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে এটা ফুটবলের জন্য ভালো ফলও আনতে পারে।’
ভবিষ্যৎ নয়, দুই প্রধান ভাবছে বর্তমান নিয়ে। ভালোমানের বিদেশি খেলোয়াড় এনেই ঘাটতিটা পূরণের চেষ্টা করছে দুই দল। আবাহনী চাইছে বিদেশি কোচও আনতে। ইরান, ঘানায় যোগাযোগ হয়েছে তাদের।
দেখা যাক, মৌসুম শেষে কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় দর্শকপ্রিয় দুই ক্লাব।

No comments

Powered by Blogger.