পাকিস্তানকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান আফগানিস্তানের

আফগানিস্তানে হামলা পরিচালনাকারী পাকিস্তানি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইসলামাবাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আফগানিস্তান। আফগানিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা র‌্যাংগিন দাদফার স্পান্তা গত সোমবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ আহ্বান জানান।
দাদফার স্পান্তা জানান, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ তালেবান যোদ্ধাদের আফগানিস্তানে হামলা পরিচালনা করার জন্য তাদের ভূমি ব্যবহার করতে দিচ্ছে। এ ব্যাপারে আফগান কর্তৃপক্ষের হাতে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে তা ইসলামাবাদের কাছে হস্তান্তরও করা হয়েছে।
দাদফার স্পান্তা আরও জানান, এটা এখন আর গোপন কোনো খবর নয় যে সন্ত্রাসীদের আস্তানা রয়েছে পাকিস্তানে। সেখানে তাদের প্রশিক্ষণ শিবিরও আছে। তারা আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে নির্বিঘ্নে আবার পাকিস্তানে অবস্থিত ঘাঁটিতে ফিরে যায়।
স্পান্তা এও জানান, সীমান্তে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের দমনে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, ‘আশা করছি, হয়তো আগামী মাসে কাবুলে অথবা ইসলামাবাদে আমরা এ ব্যাপারে একটি গঠনমূলক আলোচনা শুরু করতে পারব।’
সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তালেবানদের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছার ব্যাপারে। এর মাধ্যমে আফগানিস্তানে নয় বছর ধরে চলা যুদ্ধের একটি ইতি টানতে চাইছেন তিনি।
জামাত-উদ-দাওয়াকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা: পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠন জামাত-উদ-দাওয়াকে (জেইউডি) সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে সে দেশের কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার বিবিসি উর্দুতে প্রচারিত একটি খবরে এ কথা জানানো হয়। খবরে বলা হয়, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের স্বরাষ্ট্র দপ্তর বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। ওই দলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, বিশেষ শাখা ও সন্ত্রাসবিরোধী বাহিনীর সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একাধিক দল বিভিন্ন জেলায় কাজ করবে। প্রতিটি টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে থাকবেন জেলা পুলিশের প্রধান।
তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে: লস্কর-ই-তাইয়েবা, জামাত-উদ-দাওয়া, জইশে মুহাম্মদ, লস্কর-ই-ঝাংভি, সিপাহ-ই-সাহাবা, তেহরিক-ই-নিফাজ-ই-শরিয়াহ মুহাম্মদি, সিপাহ-ই-মুহাম্মদ পাকিস্তান, তেহরিক-ই-জাফরিয়া পাকিস্তান, মিল্লাত-ই-ইসলামিয়া পাকিস্তান, খুদামুল ইসলাম, ইসলামি তেহরিক পাকিস্তান, হিজব-উত-তেহরির, জামায়াত-উল-আনসার, জামায়াত-উল-ফুরকান, খাইর-উন-নাস ইন্টারন্যাশনাল ট্রাস্ট, ইসলামিক স্টুডেন্টস মুভমেন্ট ও বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি। তবে তালিকার বাইরে থাকা তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে না এই টাস্কফোর্স।
পাঞ্জাবের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যে এই সংগঠনগুলোর ঘাঁটিতে অভিযান চালানো এবং এদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিক বলেন, লস্কর-ই-ঝাংভি ও সিপাহ-ই-সাহাবার সঙ্গে কাজ করছে আল-কায়েদা ও তালেবান সদস্যরা। বিশেষ করে পাঞ্জাবে তাদের তৎপরতা বেশি।
পাকিস্তানে ২৩ জঙ্গি নিহত: পাকিস্তানের পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গতকাল মঙ্গলবার দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সেনা অভিযানে ২৩ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে।
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় লোয়ারদির জেলার পুলিশ প্রধান মুমতাজ জিরিন জানান, লোয়ারদির জেলার প্রত্যন্ত কিলপানি গ্রামে জঙ্গিদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ হয়। জঙ্গিরা সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে ২৩ জঙ্গি নিহত হয়।
৩৩৪ জন বিদেশি সেনা নিহত: আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে আরও তিন জন বিদেশি সেনার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশটিতে চলতি বছর নিহত বিদেশি সেনার সংখ্যা ৩৩৪ জনে পৌঁছেছে। ন্যাটো বাহিনীর বিবৃতিতে জানানো হয়, গত সোমবার এক বোমা হামলায় ওই তিন সেনার মৃত্যু হয়েছে। তবে তাঁদের জাতীয়তা সম্পর্কে জানানো হয়নি।
২০০৯ সালে সেখানে ৫২০ জন বিদেশি সেনার মৃত্যু হয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.