‘সেইন্ট ইকার’

তিনবার ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলেছে তারা, শিরোপা জিতেছে দুবার। এর সর্বশেষটিতে ছিলেন তিনি নিজেও। তবে ওই তিন ফাইনাল বা অন্য কোনো ম্যাচ নয়, জার্মানির বিপক্ষে আজকের সেমিফাইনালটিকেই স্পেন ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ম্যাচ বলছেন ইকার ক্যাসিয়াস।
১৯৬৪ সালের ইউরো (সে সময়ের ইউরোপিয়ান নেশনস কাপ) জিতে ফুটবলে প্রথম বড় কোনো শিরোপা জিতেছিল স্পেন। ১৯৮৪ ইউরোর ফাইনালে হেরেছিল স্বাগতিক ফ্রান্সের কাছে। ২০০৮ ইউরো জিতে ৪৪ বছর পর আবার বড় কোনো শিরোপার স্বাদ পায় স্পেন। দুই বছর আগে ভিয়েনার ফাইনালে জার্মানিকে হারানো সেই শিরোপায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ক্যাসিয়াস। বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম সেমিফাইনালে উঠে স্পেন আবার মুখোমুখি হচ্ছে সেই জার্মানির। ক্যাসিয়াসের মতে, এই ম্যাচের সঙ্গে আগের কোনো ম্যাচেরই তুলনা হয় না, ‘কেউই কিন্তু বলছে না ২০০৮ ইউরোতে আমরা কতটা ভালো দল ছিলাম। সবাই বলছে আমাদের বিশ্বকাপ জিততে হবে। লোকে বিশ্বকাপ চায়। আমরা তাই জানি, জার্মানির বিপক্ষে সেমিফাইনালটাই আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, অস্ট্রিয়ায় ২০০৮ ইউরোর ফাইনালের চেয়েও।’
সেমিফাইনালে উঠেই অবশ্য বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা সাফল্য ছোঁয়াটা নিশ্চিত করে ফেলেছে স্পেন। সেমিফাইনাল ও তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ হারলে চতুর্থ হবে স্পেন। এখনো পর্যন্ত তাদের সেরা সাফল্য ১৯৫০ বিশ্বকাপে চতুর্থ হওয়া, সেবার অবশ্য সেমিফাইনাল বলে কিছু ছিল না। তবে তৃতীয়-চতুর্থের চিন্তা মাথায় ঢুকতেই দিচ্ছেন না ক্যাসিয়াস, ‘আমরা এখানে চতুর্থ হতে আসিনি। জার্মানিকে হারিয়ে আমরা ফাইনাল খেলতে চাই। এই মুহূর্তে আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না। আমাদের সবারই স্বপ্ন আছে, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে আমরা মাদ্রিদে ফিরতে চাই। তবে এখন প্রথম লক্ষ্যটা হলো জার্মানিকে হারানো।’
জার্মানিকে হারানোটা যে সহজ হবে না, এটা অবশ্য মানছেন ক্যাসিয়াস। জার্মানির এই তরুণ দল আর সবার মতো মুগ্ধ ও বিস্মিত করেছে স্প্যানিশ অধিনায়ককেও, ‘আমার ধারণা, বিশ্বকাপের সেরা দল ওরা। ইংল্যান্ড ও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে চার গোল করা মানে, এটা বিশেষ কিছু। একটা তরুণ দল, যাদের চার-পাঁচজনকে অনূর্ধ্ব-২১ দল থেকে আনা হয়েছে, তারা কীভাবে এমন খেলছে এটা দারুণ কৌতূহল জাগায়। এটা অবশ্যই কোচের ভালো ব্যবস্থাপনার কৃতিত্ব।’
স্পেন অধিনায়কের নিজের জন্যও বিশ্বকাপটা ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ। পেপে রেইনা ও ভিক্টর ভালদেজের মতো বিশ্বমানের দুজন গোলকিপার বসে আছেন বেঞ্চে, রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সর্বশেষ মৌসুমটায় ঠিক নিজের মান অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেননি। বিশ্বকাপের শুরুটাও হয়েছিল বাজে। দল হারল, সাংবাদিক বান্ধবীকে জড়িয়ে তাঁকে নিয়ে অনেক বিতর্কও হলো। তবে সব সমালোচনার জবাব দিয়ে আবার ফিরেছেন সেরা ফর্মে, কোয়ার্টার ফাইনালে পেনাল্টি ঠেকিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন ভক্তরা তাঁকে এমনিতেই ‘সেইন্ট ইকার’ নাম দেয়নি।
ক্যাসিয়াস তাই এখন স্বস্তি পাচ্ছেন অনেকটাই। তবে তাঁকে অবাক করেছে রোনালদো, রুনি, মেসিদের ব্যর্থতা। স্পেন অধিনায়কের উপলব্ধি, এককভাবে খুব বেশি কিছু করা এখন আর সম্ভব নয়, ‘এটা প্রমাণ করেছে যে জাতীয় দল মানে শুধু একজন ফুটবলার নয়। আগে হয়তো একজন খেলোয়াড় দলকে শিরোপা এনে দিতে পারত, ১৯৮৬ সালে মেক্সিকোয় ম্যারাডোনা যেমন আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছেন। কিন্তু এখন এটা অনেক বেশি দলীয় খেলা। একজন খেলোয়াড় হয়তো খুব ভালো পারফর্ম করতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

No comments

Powered by Blogger.