শেষ ম্যাচটাই শেষ করল সব by মাসুদ আলম

১৯৯১ সাফ গেমসের ফাইনালে হার। ২০০৬ সাফ গেমসের সেমিফাইনালের আগেই বিদায়। ২০০৮ সাফ ফুটবলেও একই ফল। দু বছর পর সেই কলম্বো আবারও হতাশ করল বাংলাদেশকে। এবার এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের সেমিফাইনালে ওঠা হলো না।
প্রথম ম্যাচে তাজিকিস্তানকে ২-১ গোলে হারিয়ে দুর্দান্ত শুরু, পরের ম্যাচে ভালো খেলেও মিয়ানমারের কাছে ১-২ গোরে হার। শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৪-৫ গোলে হারিয়ে চ্যালেঞ্জ কাপের দরজাটা খোলার সুযোগ ছিল। কিন্তু উল্টো ওই ম্যাচে ০-৩ গোলে হার। শুরুর সঙ্গে শেষের এমন অমিল!
আজ সকালে বাংলাদেশ দল পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকায়। দেশে গিয়ে হয়তো শেষ ম্যাচটাকে ভুলে যেতে চাইবে তারা, কিন্তু এই পরাজয় ভোলার মতো নয়!
কাল সকালে বাংলাদেশ দলের হোটেলে গিয়ে জানা গেল, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি পালন উপলক্ষে গোটা দলকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কলম্বোয় বাংলাদেশ হাইকমিশনে। সেখানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গানও গেয়েছেন বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক ডিফেন্ডার ওয়ালি ফয়সাল, যার ভুলে শ্রীলঙ্কার কাছে বাংলাদেশ খেয়েছে প্রথম গোলটা।
পরাজয় সব সময়ই বেদনার। খেলোয়াড়দের মুখের হাসি কেড়ে নেয়। এর সঙ্গে বাংলাদেশের ফুটবলাররা এমনই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন যে ‘এ আর নতুন কী’ বলেই মনে হয় তাঁদের কাছে। তবে এই সফরটটাকে তারা সেভাবে না দেখে বরং এটাই বলছেন, শেষ ম্যাচ একটা দুর্ঘটনা। এটা হতেই পারে। ক্লান্তির কারণেই ম্যাচটা বাজে গেছে!
আমিনুল লাল কার্ড দেখার পর পোস্ট আগলেছেন যিনি, সেই গোলরক্ষক বিপ্লব সবকিছু পেছনে রেখে সফরটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখতে চান, ‘অনেক প্রাপ্তি আছে এই সফরে। শেষ ম্যাচটা খারাপ হয়ে গেছে বলে গোটা সফরের অর্জনটাকে তো খাটো করে দেখা যায় না। আমাদের ফুটবল ভালোর দিকে যাচ্ছে। আমরা ভালো ফুটবল খেলেছি প্রথম দুই ম্যাচে।’
‘ভালো ফুটবল’ মানে ‘প্রেসিং ফুটবল’। প্রতিপক্ষের সীমানায় তাদের খেলতে না দেওয়ার এই কৌশলকেই সফরের বড় অর্জন মনে করেন ভারপ্রাপ্ত কোচ সাইফুল বারী, ‘আগে এভাবে প্রেসিং ফুটবল খেলত না বাংলাদেশ। এবার খেলেছে এবং খেলায় অনেক উন্নতি হয়েছে। শেষ ম্যাচটা বাদ দিয়ে আর সবই ঠিক ছিল এখানে।’
বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগ পর্যন্ত খুশিই ছিলেন, ‘দল ভালো খেলছে।’ কিন্তু শেষ ম্যাচটা তাঁকে এমনই হতাশ করেছে যে শেষ দিকে মাঠ থেকেই চলে যান। কাল দুপুরে হোটেল কক্ষে বসে বললেন, ‘বিশ্রী ফুটবল খেলেছে দল।’
‘বিশ্রী ফুটবল’ খেলার কারণটাও বলে দিলেন বাফুফে সভাপতি, ‘ম্যাচের আগে গরমের মধ্যে ৪০-৪৫ মিনিট ওয়ার্মআপ করাটা ঠিক হয়নি। ওখানেই দলের শক্তি শেষ।’
তবে এক খেলোয়াড় জানালেন, জোরান জর্জেভিচ এভাবেই অনুশীলন করাতেন। তাঁর কোনো কিছুই বদলানো হয়নি। এমনকি স্ট্রাইকার নাসিরউদ্দিনকে জর্জেভিচ স্টপার হিসেবে খেলাতে চেয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত কোচও সেটাই করলেন!
কর্মকর্তা শওকত আলী খানের মন্তব্য, ‘খেলোয়াড়েরা দায়বদ্ধ ছিল না।’ ম্যানেজার হাসানুজ্জামান খান তো কথাই বললেন না। অতি শোকে ঘুমিয়েই কাটিয়েছেন। হতাশ বাদল রায়ের আত্মপক্ষ সমর্থন, ‘আগে তো এটুকুও খেলতে পারত না!’
পরশুর ওই হারের পর শ্রীলঙ্কান ফুটবলের অধীশ্বর মনিলাল ফার্নান্ডো বাংলাদেশ দলের কর্মকর্তাদের কাছে বলেছেন, শ্রীলঙ্কার এমন জয়ে তারাও অবাক। বাংলাদেশ বেশি চাপ নিয়ে ফেলেছে এবং সে কারণেই এভাবে হেরে যেতে হলো। কথাটা ভুল নয়, বাংলাদেশ আসলেই চাপ নিয়ে ফেলেছিল বেশি। তার ওপর ছিল অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, ‘শ্রীলঙ্কা তো দাঁড়াতেই পারবে না আমাদের সামনে!’
এত কিছুর পরও বাংলাদেশ শিবির থেকে বলা হলো, শ্রীলঙ্কা কোনো দলই না! নিজেদের খেলাটা খেলতে পারলে ওদের বড় ব্যবধানেই হারানো যেত। কাল সারা দিন বাংলাদেশ দলে এসব কথাবার্তাই আলোচিত হলো বেশি।
সালাউদ্দিন এক ফাঁকে দুঃখ প্রকাশ করলেন, ‘এই ম্যাচটা ছিল বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম বড় একটা ম্যাচ। আর তাতে কি না দল খেলল ছন্নছাড়া ফুটবল।’ তাঁর ধারণা, সেমিফাইনালে উঠলে কোনো টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ আয়োজন করতে চাইলে এএফসি ‘না’ করত না। এখন কোন মুখে বড় টুর্নামেন্ট চাইবেন!
এসবই হেরে যাওয়া গল্পের পাণ্ডুলিপি। যা মুছে ফেলে সামনে এগোনোর কথা বলেছেন ভারপ্রাপ্ত কোচ। আগামী অক্টোবরে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব। তার আগে এপ্রিল মাসেই ২০১২ এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের বাছাইপর্ব হতে পারে। এখন বাংলাদেশ দল নিয়ে নতুন কী পরিকল্পনা, সেই প্রশ্নটি ঘুরেফিরে চলে আসছেই।
সালাউদ্দিন জানালেন, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ব্রিটিশ কোচের সঙ্গে তাঁর প্রাথমিক কথা হয়েছে। আগামীতে এটা নিয়ে এগোতে পারেন। জোরান জর্জেভিচ ফিরে আসার আকুতি জানালেও তাঁর অধ্যায় শেষ। তবে চ্যালেঞ্জ কাপের বাছাইপর্বে খেলতে হলে কোচ তো এখনই দরকার। সালাউদ্দিন এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বললেন না। শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর তিনি একটু হলেও উত্সাহ হারিয়ে ফেলেছেন!

No comments

Powered by Blogger.