যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে দায়ী করেছে ইরান

ইরানের শীর্ষস্থানীয় পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে দায়ী করেছে তেহরান। তেহরান অভিযোগ করেছে, পরমাণুবিজ্ঞানী মাসুদ মোহাম্মাদিকে হত্যার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হাত রয়েছে। এই দুই বিদেশি সংস্থাই পরিকল্পিতভাবে মাসুদ মোহাম্মাদিকে হত্যা করেছে। ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকার এ হত্যাকাণ্ডের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছেন। তবে ওয়াশিংটন তেহরানের এসব অভিযোগকে ‘উদ্ভট’ বলে অভিহিত করে তা অস্বীকার করেছে। খবর এএফপি ও বিবিসির।
মঙ্গলবার তেহরানে নিজের বাড়ির কাছে বোমা বিস্ফোরণে মারা যান ৫০ বছরের মাসুদ আলী মোহাম্মাদি। তিনি তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যাপনা করতেন।
বার্তা সংস্থা আইএসএনএ ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকার আলি লারিজানির বরাত দিয়ে বলেছে, এ ধরনের ন্যক্কারজনক হামলা চালানো সহজ বটে, তবে এর ফলাফল মোটেই ভালো নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে উদ্দেশ করে লারিজানি বলেন, ‘আপনিই সন্ত্রাসবাদের উসকানি দিচ্ছেন।’
ইরানের পুলিশ অথবা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কেউই এখনো পর্যন্ত মাসুদ মোহাম্মাদির নিহত হওয়ার ঘটনায় কে বা কারা জড়িত সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে স্পিকার লারিজানি এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সিআইএ এবং মোসাদকে দায়ী করেছেন।
লারিজানি বলেন, ‘এ ঘটনার (মোহাম্মাদি হতাকাণ্ড) আগেই আমাদের কাছে তথ্য এসেছিল যে ইসরায়েলের গোয়েন্দা বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের সহায়তায় তেহরানে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে।’ তিনি বলেন, সিআইএ ও মোসাদ ভেবেছে, ইরানের কিছু অভ্যন্তরীণ সমস্যার সুযোগে সেখানে হামলা চালানো যেতে পারে, যা কিনা ইরানের শিক্ষাবিদদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করবে এবং পরমাণু গবেষণা কাজকে বাধাগ্রস্ত করবে।
লারিজানি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইরানকে পরমাণুবিজ্ঞানী-শূন্য করতে চাইছে। কিন্তু এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কোনো লাভ হবে না। মোহাম্মাদির হত্যার ঘটনা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। পরমাণু সফলতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে ইরান।
ইরানের টেলিভিশন তদন্ত কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলেছে, হামলার কৌশল এবং ব্যবহূত সরঞ্জামের সঙ্গে কয়েকটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা বিশেষ করে ইসরায়েলের মোসাদের কৌশল ও সরঞ্জামের মিল পাওয়া গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এ সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের ভাড়া করা গোয়েন্দাদের জড়িত থাকার নিদর্শন পাওয়া গেছে।’
কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মার্ক টোনার তেহরানের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ইরানের অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
ইরানের একজন বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা জানান, মাসুদ মোহাম্মাদি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তবে তাঁর হত্যাকাণ্ডের পেছনে ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে একাধিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে বিরোধী নেতা মীর হোসেন মৌসাভির সমর্থনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি তালিকা করা হয়। সেই তালিকায় মোহাম্মাদির নাম ছিল।

No comments

Powered by Blogger.