মাঠের মুখ

স্ট্যান্স নিয়ে দাঁড়াল বাঁহাতি ব্যাটসম্যানটি। বোলার বল করতেই এক পা তুলে সপাটে পুল করে দিল। ‘ক্যারিবিয়ান পুল’, ঠিক যেন ক্লাইভ লয়েড কিংবা ব্রায়ান লারা। ‘শাহরিয়ার নাফীস’—ভুল সংশোধন করে দিল ব্যাটসম্যান স্বয়ং। একটু আগে জহির খানকে কীভাবে পুল করলেন নাফীস, বাড়ি যেতে যেতে বন্ধুদের সেটাই দেখাচ্ছিল পি এইচ আমিন একাডেমির দশম শ্রেণীর ছাত্র ইহসান রহিম।
হাঁটতে হাঁটতে জমিয়ে কথা বলছিল বন্ধুদের সঙ্গে। দুনিয়ার আর কোনো দিকে যেন খেয়াল নেই। শেষে পেছন থেকে স্কুল ব্যাগ ধরে টেনে থামাতে হলো তাকে। প্রথমে বিরক্তি আর বিস্ময় পরে, অবশ্য প্রাণ খুলেই কথা বলল। বাড়ি সন্দ্বীপ, তবে বাবা-মায়ের চাকরির জন্য থাকতে হয় চট্টগ্রাম শহরেই। বাবা চাকরি করেন সীতাকুণ্ডে, মা শহরেরই একটি স্কুলে। স্কুল ড্রেস থাকলে মাঠে ফ্রি খেলা দেখা যায়, এই খবর পেয়ে স্কুল শেষে বন্ধুদের নিয়ে চলে এসেছে মাঠে। জীবনে প্রথম মাঠে আসা, কিন্তু অভিজ্ঞতাটা ভালো হলো না মোটেও। আলোকস্বল্পতায় খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাত্র ৪ ওভার দেখতে পেরেছে, এর তিন ওভারই আবার ছিল বাংলাদেশ ইনিংসের সবচেয়ে ভয়াবহ, পড়েছে তিন উইকেট।
নিজে ক্রিকেট খেলো না? হঠাত্ করেই যেন মিইয়ে গেল প্রাণোচ্ছল ছেলেটি, মুখে রাজ্যের অন্ধকার। আগে ক্রিকেট খেলত, কিন্তু মা এখন আর খেলতে দেন না। মায়ের কড়া নির্দেশ, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে পড়াশোনা করো, চুপচাপ বসে থাকো কিংবা যা-ই করো, বাইরে যাওয়া যাবে না। খারাপ লাগে না? ‘লাগে না আবার! সবাই বাইরে যায়, খেলে আর আমি বাসায় চুপচাপ বসে থাকি। অনেক কষ্ট লাগে।’ এমনকি পত্রিকা পড়লে সময় নষ্ট হবে বলে বাসায় পত্রিকাও রাখা হয় না। ফিরে যাওয়ার সময়ও চেহারায় শঙ্কার ছায়া, ‘মা যদি পেপার পড়ে জানে আমি মাঠে আসছি, তাহলে আমাকে মেরেই ফেলবে!’

No comments

Powered by Blogger.