আইএমএফের চাপে এবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমাতে যাচ্ছে সরকার

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমাতে চাইছে সরকার। আগামী জুলাই থেকেই এই হার কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নিয়ে আইএমএফের একটি পর্যালোচনা রয়েছে। এতে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর কথা বলা হয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতির হারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তিনি।
সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোকে যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত করতে একটি কমিটি করা হয়েছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। কমিটি আগামী জুনের মধ্যে এই হার নির্ধারণ করবে, যাতে জুলাই থেকে তা কার্যকর করা যায়।
গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ক এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা জানিয়েছেন। বৈঠকে অর্থ বিভাগ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দেশে অনেক ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। একেকটার সময়কাল একেক রকম, যার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। সঞ্চয়পত্র বড়জোর দুই ধরনের হতে পারে।
বর্তমানে সঞ্চয়পত্রগুলোর সুদের হার অনেক বেশি উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হারে কোনো শৃঙ্খলা নেই। ওয়েজ আর্নার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। কোনোটির ওপর আবার কর ধার্য করা নেই। সব মিলিয়ে বিষয়টি একধরনের জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।
বন্ডের সুদের হারও পরিবর্তন করা দরকার বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রীর মতে, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা অর্থ প্রকৃতপক্ষে অলস টাকা। ব্যাংকব্যবস্থার মাধ্যমে এনে কিছু সুদ দেওয়া হয়। তবে কিছু কিছু পারিবারিক সঞ্চয়পত্র রয়েছে নেহাতই উদ্দেশ্যমূলক। বাজারের সঙ্গে এর সুদের হারের কোনো সম্পর্ক নেই।
জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে চালু হওয়া পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনারস সঞ্চয়পত্রের মেয়াদান্তে সুদ সাড়ে ১২ শতাংশ। যেকোনো সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত এতে বিনিয়োগ করতে পারেন।
বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য রয়েছে ১৯৮১ সালে চালু হওয়া পাঁচ বছর মেয়াদি ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড। বিনিয়োগের কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই। চক্রবৃদ্ধি হারে এর সুদের হার ১২ শতাংশ।
বৈদেশিক মুদ্রার ব্যাংক হিসাব থাকা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ২০০২ সালে চালু হওয়া তিন বছর মেয়াদি মার্কিন ডলার প্রিমিয়াম বন্ডের সুদের হার সাড়ে সাত শতাংশ। এর অবশ্য তিনটি অংশ রয়েছে। এক বছরের জন্য সাড়ে ছয় শতাংশ, দুই বছরের জন্য সাত এবং তিন বছরের জন্য সাড়ে সাত শতাংশ।
মার্কিন ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের সুদের হার এক বছরের জন্য সাড়ে পাঁচ, দুই বছরের জন্য ছয় এবং তিন বছরের জন্য সাড়ে ছয় শতাংশ।
সব আয় ও পেশার ব্যক্তির জন্য রয়েছে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের আওতায় সাধারণ হিসাব ও মেয়াদি হিসাব—এই দুই ধরনের সঞ্চয়পত্র।
সাধারণ হিসাবে একক নামে ২৫ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। সুদের হার সাড়ে সাত শতাংশ।
আর মেয়াদি হিসাবে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে তিন বছরের জন্য। এতে একক নামে ৫০ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে এক কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যায়। এর সুদের হার ১২ শতাংশ। তবে উভয়টিরই দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত সুদ আয়করমুক্ত।
এ ছাড়া পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন বছর মেয়াদি (ত্রৈমাসিক সুদ দেয়) সঞ্চয়পত্র এবং পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার (ত্রৈমাসিক সুদ দেয়) সঞ্চয়পত্রের মেয়াদান্তে মুনাফার হার যথাক্রমে ১২, সাড়ে ১১ ও সাড়ে ১২ শতাংশ।

No comments

Powered by Blogger.