অং সান সু চিকে আরও অপেক্ষায় রাখল মিয়ানমারের জান্তা

জাপানে বসবাসরত মিয়ানমারের নাগরিকেরা
টোকিওতে গতকাল গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং
সান সু চির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে।
মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা গতকাল শুক্রবার শেষ মুহূর্তে মুলতবি করা হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বিচারকেরা মামলাটি পুনর্বিবেচনা করতে চান। তাই শেষ মুহূর্তে রায় ঘোষণার তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগামী ১১ আগস্ট রায় ঘোষণা করা হতে পারে। খবর এএফপি ও রয়টার্স অনলাইনের।
গৃহবন্দীর শর্ত ভাঙার খোঁড়া অভিযোগে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নেত্রী সু চির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত শুনানি গত সোমবার শেষ হয়। শুনানিতে সু চি এবং তাঁর দুই গৃহপরিচারিকা ও মার্কিন নাগরিক জন ইয়েত্তার আইনজীবীরা যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেন। গতকাল মামলার রায় ঘোষণার কথা ছিল। এ উপলক্ষে ইয়াঙ্গুনের কুখ্যাত ইনসেন কারাগারের বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ওই কারাগারেই সু চিকে রাখা হয়েছে। সেখানেই বিশেষ আদালতে নেত্রীর বিচার চলছে।
গৃহবন্দী অবস্থায় সু চির বাড়িতে মার্কিন নাগরিক জন ইয়েত্তার অনুপ্রবেশকে গৃহবন্দীর শর্ত ভঙ্গ হিসেবে আদালতে উত্থাপন করা হয়। এটাকে দেশের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক তৎপরতা বলে জান্তার আইনজীবীরা উল্লেখ করেন। ওই নাশকতা থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষার জন্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনের ২২ ধারায় সু চির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
সু চির আইনজীবীরা মঙ্গলবার আদালতে বলেন, পরিস্থিতির ওপর সু চির হাত ছিল না। তা ছাড়া যে আইনের আওতায় সু চিকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, সেটি ১৯৪৭ সালের সাংবিধানিক আইন। ২৫ বছর আগেই ওই আইনটির বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে।
সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেতারা দাবি করে আসছেন, খোঁড়া যুক্তিতে সু চির বিচারের নামে প্রহসন করা হচ্ছে। জান্তা সরকারের আসল মতলব দেশটিতে ২০১০ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন থেকে তাঁকে দূরে সরিয়ে রাখা।
সু চির বিচারের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারের জান্তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে রয়েছে। এ মামলার শুনানি চলাকালে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাঁর মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার তোপের মুখে রয়েছে মিয়ানমার।
মিয়ানমারের মুখপাত্র এবং পশ্চিমা কূটনৈতিক সূত্র গতকাল জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে জান্তা নিজের মুখ রক্ষার শেষ চেষ্টা করছে। যদিও বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, অনেক আগেই বিচারের রায় তৈরি করে রাখা হয়েছে। এ মামলায় দোষী সাব্যস্ত দেখিয়ে সু চিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে।
গত ২০ বছরের মধ্যে ১৪ বছরই মিয়ানমারের জান্তার হাতে বন্দী রয়েছেন সু চি। তাঁর আইনজীবী নিয়ান উইন গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘সু চি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছেন। বিচারে সর্বোচ্চ শাস্তির জন্যও তৈরি আছেন তিনি। এর প্রস্তুতি হিসেবে তিনি বেশকিছু বই ও ওষুধ সংগ্রহ করেছেন।’

No comments

Powered by Blogger.