‘ঘুষ চাইলেই ঘুষি’ by ইমরান হোসেন সুজন
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন শিক্ষার্থীরা। দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়বে এমন প্রত্যয় প্রতিটি শিক্ষার্থীর হৃদয়ে। বিভিন্ন রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের কাজও করছে সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্কাউটের সদস্যরা। শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন সচেতন নাগরিকরা। শুধু রাস্তা পরিষ্কার ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে বসে নেই শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে সরকারি হাসপাতাল ও ভূমি অফিসকে দালাল ও ঘুষমুক্ত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শনিবার কয়েকজন দালালকে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বিতাড়িত করেছে তারা। কাউকে চাঁদা না দিতে মাইকিংয়ের পাশাপাশি রাস্তাঘাটে আল্পনা এঁকে জনগণকে সচেতন করছে শিক্ষার্থীরা।
রোববার সকালে দোহার ও নবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দোহার থানা মোড়, কলেজ মোড়, কার্তিকপুর বাজার, লটাখোলা বাজার, করমআলী মোড়, জয়পাড়া ওয়ান ব্যাংক মোড়, বাঁশতলা, পালামগঞ্জ ও নবাবগঞ্জ সদর চৌরাঙ্গি, বাগমারা বাজার, বান্দুরা ব্রিজসহ বিভিন্ন জায়গায় ট্রাফিকের কাজ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিভিন্ন হাটবাজারে মাইকিং করে কাউকে চাঁদা না দিতে ব্যবসায়ীদের আহ্বান করেন তারা। সেই সঙ্গে সবাইকে যত্রতত্র ময়লা না ফেলতে এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলার অনুরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন লেখনীর মাধ্যমে সচেতন করা হচ্ছে জনসাধারণকে।
দুই উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ও সড়কে ‘পানি লাগবে পানি’, ‘স্বাধীনতা এনেছি, সংস্কারও আনবো’, ‘ঘুষ চাইলেই ঘুষি’সহ বিভিন্ন সচেতনমূলক লেখা লিখে জনগণকে সচেতন করছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এমন কাজে খুশি সাধারণ মানুষ। শিক্ষার্থীদের হাতেই আপাতত বাংলাদেশ নিরাপদ এমনটাই মনে করছে তারা।
বান্দুরা ব্রিজের ট্রাফিকের কাজে ব্যস্ত আতিক, নবীন, নিঝুমসহ প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী। তারা বলেন, আজ বান্দুরা বাজারের ব্যবসায়ীদের বলে দিছি কাউকে চাঁদা দিবেন না। একটু পর ভূমি অফিসে যাবো। ছাত্রদের স্পষ্ট বার্তা ভূমি অফিসসহ প্রতিটি অফিস দালালমুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি কাজের বিনিময়ে কেউ ঘুষ চাইলে ঘুষি দিয়ে তাকে প্রতিহত করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, ছাত্রদের হাত ধরে নবাবগঞ্জের প্রতিটি সেক্টর ঘুষ ও দালালমুক্ত হবে।
তারা আরও বলেন, প্রতিটি সরকারি কর্মকর্তা সরকার থেকে বেতন পায়। তাহলে তারা কেন ঘুষ খাবে। বিশেষ করে ভূমি অফিস হলো ঘুষের আখড়া। ভূমি অফিসে দেখা যায় অনেক বেসরকারি কর্মকর্তা। তাদের কাজ কি? তাদের বেতন দেয় কে? এসবও আমরা দেখবো। আজ বলে আসবো কাল যদি অফিসে দালাল দেখা যায় আর কোনো কর্মকর্তা ঘুষ চায় তাহলে তাকে নবাবগঞ্জ ছাড়তে হবে।
দোহারের পালামগঞ্জ বাজারেও সড়কে বড় করে ‘ঘুষ চাইলেই ঘুষি’ ট্রাফিক আইন মেনে চলুনসহ নানা আল্পনা করা হচ্ছে। লেখায় ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা জানান, শুধু স্বাধীন করলেই হবে না, স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। যেকোনো সরকারি অফিসে যাবেন, ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। আমরা এটা পরিবর্তনে মাঠে নেমেছি। এখন থেকে কোনো কর্মকর্তা বা দালালরা ঘুষ চাইলে সবাইকে প্রতিহত করতে হবে। ঘুষ বাণিজ্যের কারণে সাধারণ সেবা প্রত্যাশীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাই আমরা সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্যই বিভিন্ন দেয়াল ও সড়কে বড় করে লিখছে ঘুষ চাইলে ঘুষি। তারা আরও বলেন, কেউ কাজের বিনিময়ে ঘুষ চাইলে আমাদের জানাবেন। আমরা প্রতিহত করবো এবং তাকে দোহার নবাবগঞ্জ থেকে বিতাড়িত করবো।
শিক্ষার্থীদের এমন কর্মকাণ্ডে খুশি সাধারণ জনগণ। বান্দুরার আওয়াল হোসেন বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করছে শিক্ষার্থীরা। কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই সুন্দরভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে। শিক্ষার্থীরা দেখিয়ে দিয়েছে, মনেপ্রাণে চাইলে সহজেই দেশটা পরিবর্তন করা সম্ভব।
শিকারীপাড়ার আসিফ শেখ বলেন, বিভিন্ন স্থানে লেখা দেখলাম ঘুষ চাইলে ঘুষিসহ একাধিক সচেতনতামূলক লেখা। আসলে ওদের কাছে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আমরা এ কয়দিনে বিশ্বাসও করে ফেলেছি শিক্ষার্থীরাই চেষ্টা করলে সুন্দর ও দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে পারে। আশা করি সর্বস্তরের মানুষ তাদের সহযোগিতা করবে।
No comments