সিরিয়ায় সরকারি বাহিনীর হামলা অব্যাহত: বিষাক্ত গ্যাসে বিপন্ন শিশুদের জীবন

বিষাক্ত গ্যাসে বিপন্ন হয়ে পড়েছে সিরিয়ার শিশুদের জীবন। দামেস্কের উপকন্ঠে ইস্টার্ন ঘৌটায় চলমান হামলার অংশ হিসেবে সেখানে বিষাক্ত গ্যাস ‘ক্লোরিন’ ব্যবহার করতে শুরু করেছে সরকারি বাহিনী। প্রাপ্তবয়স্করা কোন রকমে আত্মরক্ষা করতে পারলেও এর নির্মম শিকার হচ্ছে অল্পবয়স্ক শিশুরা। শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত জটিলতার পাশাপাশি ত্বক ও চোখে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করছে তারা। সিরিয়ার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হোয়াইট হেলমেট বলেছে, এখন পর্যন্ত বিষাক্ত ক্লোরিনের শিকার হয়ে একজন শিশুর মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে আরো এক ডজনেরও বেশি শিশু।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আহতদের মধ্যে বিষাক্ত ক্লোরিন গ্যাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা গেছে। নিকটবর্তী এর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাদেরকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সেখানকার চিকিৎসক ইয়াকুব বলেন, বেশিরভাগ রোগীর শরীর থেকেই ক্লোরিনের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া অসুস্থতার লক্ষণ থেকেও তাদের ক্লোরিন গ্যাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি বোঝা যায়। লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, রোববার ইস্টার্ন ঘৌটায় সরকারি বাহিনীর এক হামলার পর থেকে ১৪ শিশু শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত জটিলতায় ভুগছে। আর সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, গ্যাস হামলায় অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষও আক্রান্ত হয়েছে। আহত এক নারী বেশ সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে, ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহারের জন্য উল্টো বিদ্রোহীদেরকে দায়ী করেছে সিরিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া। তারা অভিযোগ করেছে, বিদ্রোহীরা নিজেরাই ক্লোরিন ব্যবহার করে সরকারি বাহিনীকে দোষ দিচ্ছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেছেন, নিজেরাই বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহার করে তারা উত্তেজনা উস্কে দিচ্ছে। পরে এর জন্য সরকারি বাহিনীকে দায়ী করছে তারা। রাশিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে একই কথা বলেছে সিরিয়ার সরকার। পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এর আগেও গত মাসে ২১ জন শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছিল ইস্টার্ন ঘৌটার অধিবাসীরা। তখনও সরকারি বাহিনীর ক্লোরিন গ্যাসের শিকার হয়েছিলেন তারা।  
উল্লেখ্য, ২০১৩ সাল থেকে ইস্টার্ন ঘৌটা বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেখান থেকে বিদ্রোহীদের উৎখাত করতে কয়েক বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে সরকারি বাহিনী। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় সম্প্রতি সেখানে বড় ধরণের অভিযান শুরু করেছে তারা। বিদ্রোহীদের মূল ঘাটি আল শিফোনিয়াহকে লক্ষ্য করেই বেশিরভাগ হামলা চালাচ্ছে তারা। কিন্ত শত শত বেসামরিক নাগরিক এই হামলার শিকার হচ্ছে। পুরো অঞ্চলটিই এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মূলত এসব বিমান হামলা চালিয়ে সরকারি বাহিনী তাদের স্থলবাহিনীকে প্রবেশ করার সুযোগ করে দিচ্ছে। সরকারি বাহিনীর হামলায় প্রতিদিনই কয়েক ডজন করে মানুষ মারা যাচ্ছে। সোমবার নিহত হয়েছে ১৬ জন। একদিন আগে রোববার বোমার আঘাতে নিহত হয়েছে আরো ২৭ বেসামরিক নাগরিক। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, নয় দিন ধরে চলমান হামলায় নিহতরে সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইস্টার্ন ঘৌটায় যুদ্ধবিরতির জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতি আহবান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। কিন্তু তাও কোন কাজে আসছে না। প্রস্তাব পাসের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই নতুন উদ্যমে ঘৌটায় হামলা চালায় সরকারি বাহিনী।

No comments

Powered by Blogger.