বাড়ছে চালের দাম

চালের বাজারে উত্তাপ বাড়ছে। মাসখানেক আগে দাম কিছুটা কমে উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল হয়েছিল। তবে ভারতে চালের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে দেশে আবারও দাম বাড়তে শুরু করেছে। রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও সোমবার মোটাসহ সব ধরনের চাল ২ থেকে ৩ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে চাল আমদানিতে আগের চেয়ে টনপ্রতি ১ হাজার ৬৪০ থেকে দুই হাজার ৪৬০ টাকা বেশি ব্যয় হচ্ছে। বাড়তি মূল্যে আমদানি করা এ চাল স্থানীয় বাজারেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া দেশে মজুদ ধানের সংকট রয়েছে। তাই চালের দাম কমতে এবার বোরো মৌসুম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সোমবার যুগান্তরকে বলেন, দেশে চাল ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে চালের দাম বাড়াচ্ছে। গত বছর যখন চালের বাজারে উত্তাপ ছিল, তখন সবাই তাকিয়ে ছিল আমন ফলনের দিকে। আমন চাল বাজারে আসার পরও ভোক্তাদের নাগালে আসেনি চালের দাম। এ বছর আবার বিভিন্ন অজুহাতে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার ৫০ লাখ মানুষকে ১০ টাকায় চাল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত যদি বাস্তবায়ন হয়, তবে দেশে চালের দাম কমে আসবে।
এছাড়া সরকারি গুদামে বলা হচ্ছে- ১৪ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এ মজুদ পরিস্থিতিও যদি স্থিতিশীল থাকে, তবে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে। এদিকে হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগেও ভারত থেকে মানভেদে প্রতি টন স্বর্ণ চাল আমদানি হতো ৩৪ হাজার ৪৪০ থেকে ৩৫ হাজার ২৬০ টাকায়। একই চাল আমদানিতে এখন ব্যয় হচ্ছে ৩৬ হাজার ৪০ টাকা থেকে ৩৬ হাজার ৪৯০ টাকা। একইভাবে রত্ন জাতের চালেও টনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪৬০ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে স্থলবন্দরটি দিয়ে প্রতি টন ভারতীয় রত্না চাল ৩৬ হাজার ৮০ টাকা থেকে ৩৬ হাজার ৯০০ টাকায় আমদানি হলেও এখন ব্যয় করতে হচ্ছে ৩৮ হাজার ৫৪০ টাকা। রাজধানীর চালের বৃহৎ পাইকারি আড়ত বাদামতলী ও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সোমবার কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি দরে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৫৮ টাকায়। নাজিরশাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৫৯ টাকায়। আঠাশ বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪২ টাকা কেজি। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকায়। কারওয়ান বাজারের পাইকারি চালের আড়ত আল্লাহর দাম রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, মিল মালিকরা চালের দাম বাড়ানোর সুযোগ খুঁজে। তারা ভারতে চালের দাম বেড়ে গেছে বলে এখানেও চালের দাম বেশি নিচ্ছে। এতে করে আমাদের মতো পাইকারি ব্যবসায়ীদের তাদের কাছ থেকে বেশি দামে চাল কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সামনে বৈশাখ মাস। তখন বোরো মৌসুম। সে সময় দেশে নতুন চাল উঠলে চালের দাম কমে আসবে। এদিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার নয়াবাজার ও মালিবাগ বাজারে খুচরা চাল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৩ থেকে ৬৪ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬১ থেকে ৬২ টাকায়। ভালো মানের নাজিরশাল চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৭২ টাকায়, যার কেজি গত সপ্তাহে ছিল ৬৮ টাকা। আঠাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা, যা সপ্তাহখানেক আগে বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫১ টাকা কেজি। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪৭ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৫ টাকা। মালিবাগ বাজারের খালেক রাইস এজেন্সির খুচরা চাল ব্যবসায়ী দিদার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা হঠাৎ করেই ২ থেকে ৩ টাকা বেশিতে সব ধরনের চাল বিক্রি করছে, যার প্রভাব পড়েছে রাজধানীর খুচরা চালের বাজারে।
এদিকে সোমবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) দৈনিক বাজার দরের তালিকায় চালের দাম বৃদ্ধির চিত্র দেখা গেছে। সেখানে সরু চালের দাম দেয়া আছে কেজিপ্রতি ৫৮ থেকে ৭০ টাকা, যা এক মাস আগে ৫৮ থেকে ৬৮ টাকা ছিল। মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। অন্যদিকে মোটা চালের দাম দেয়া আছে ৪৪ থেকে ৪৭ টাকা কেজি, যা এক মাস আগে ছিল ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা। সেক্ষেত্রে মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ১১ শতাংশ। নওগাঁ জেলা ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরদ বরণ সাহা বলেন, দেশে বর্তমানে চালের কোনো সংকট নেই। ভারত থেকেও পর্যাপ্ত চাল আমদানি হচ্ছে। তবে বর্তমানে ভারত সরকার চাল সংগ্রহ করায় সে দেশে দাম কিছুটা বেড়েছে। আমদানি নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে দেশের বাজারেও। ভারতে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বড় মিল মালিকরাও সরবরাহ সীমিত করে এনেছেন। দু-একদিনের মধ্যে দাম বাড়িয়ে তারা সরবরাহ স্বাভাবিক করবেন। রাজধানীর মালিবাগ বাজারের চাল কিনতে আসা রাশেদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, প্রতিনিয়ত খাদ্যদ্রব্য কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে চালের দাম কমছে না। ভেবেছিলাম নতুন বছরে চালসহ সব ধরনের পণ্যের দাম কমবে; কিন্তু তা হল না। তাই সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করে খাদ্যপণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। না হলে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনধারণ আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

No comments

Powered by Blogger.