ব্যাংক ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা

হিমায়িত মাছ রফতানিকারকদের ব্যাংক ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে সরকার। ২০১৫ সালের ৩০ জুনের আগ পর্যন্ত মোট ঋণের সুদাসলের ৩০ শতাংশ ব্লকড অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের আদেশ দেয়া হয়েছে। বাকি ৭০ শতাংশ ঋণের সুদ ১ বছর পরিশোধ করতে হবে না। পরের ৮ বছরের মধ্যে ত্রৈমাসিক কিস্তিতে ঋণ ও সুদ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। এমনকি এর আগে সুদবাহী ব্লক ঋণের দায় এ সুবিধার আওতায় পরিশোধ করা যাবে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও ১৪টি তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব মোকাবেলার জন্য এ সুবিধা দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা আছে, রফতানিকারকরা চাইলে ৩০ শতাংশ ব্লক ঋণের সমপরিমাণ অর্থ নতুন ঋণ হিসেবে নিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে নতুন জামানত প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক প্রচলিত নিয়মে তা নিষ্পত্তি করবে। ব্যাংকার-কাস্টমার সম্পর্কের ভিত্তিতে কেইস-টু-কেইস ভিত্তিতে প্রচলিত নিয়মে ঋণের প্রকৃতি নির্ধারিত হবে। নতুন ৩০ শতাংশ নেয়া ঋণের মোট সুদের মধ্যে ৩ শতাংশ সুদ ভর্তুকি হিসেবে দেবে সরকার। এ সুদ পরিশোধে বছরে ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা করে ৮ বছরে ৭৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা হিমায়িত খাতের বাজেটে সংরক্ষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে নির্বাহ করা হবে। বাকি সুদের অর্থ সংশ্লিষ্ট কারখানা মালিককে পরিশোধ করতে হবে। তবে সুবিধাপ্রাপ্ত রফতানিকারকরা নির্ধারিত কিস্তিতে ঋণ ও সুদ পরিশোধে ব্যর্থ হলে এই সুবিধা প্রত্যাহার হবে। পাশাপাশি তা সাধারণ মেয়াদি ঋণ হিসেবে গণ্য হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব মন্দা চলাকালীন সময় থেকে মাছ রফতানিতে বিপর্যয় নামে। বিশেষ করে ইউরোপ অঞ্চলে তা প্রকট আকার ধারণ করে। চাহিদা কমে যাওয়ায় তখন অনেক রফতানি পণ্য দেশে ফেরত আসে। এ ধকল সামলাতে না পেরে অনেক রফতানিকারক আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যায়। মন্দা কাটতে শুরুর পর অনেকে আবার পুঁজির অভাবে নতুন করে ব্যবসা চালু করতে পারছিল না। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতেই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সুবিধার ফলে রফতানিমুখী হিমায়িত খাদ্য কারখানাগুলোর উদ্যোক্তারা তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে থাকে।
অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সরকারের নির্দেশনা মেনে নেয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ ধরনের নজির কম। ফলে এ নির্দেশনা আদৌ বাস্তবায়ন হবে কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলো এই নির্দেশনা কার্যকর করবে কি-না তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, বৈশ্বিক মন্দার কারণে তারল্য সংকটে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব ব্যাংকগুলোকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে। নতুবা রফতানিকারকরা এ সুবিধা কাজে লাগাতে পারবে না। এ সুবিধা কার্যকর হলে আবারও হিয়ামিত মাছ রফতানি খাত চাঙ্গা হবে বলে মনে করেন তিনি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬৩ কোটি ৮১ লাখ ডলারের হিমায়িত মাছ রফতানি হয়। এরপরের অর্থবছরগুলোতে তা ক্রমশই কমতে থাকে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৫৬ কোটি ৮০ লাখ ডলারে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সেটি আরও কমে ৫৩ কোটি ৫৭ লাখ ডলারে পৌঁছায়। চলতি অর্থবছরে হিমায়িত মাছ রফতানি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে গত ৮ মাসে (জুলাই- ফেব্রুয়ারি) আয় হয়েছে ৩৫ কোটি ৭৯ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ কম। শুধু চিংড়ি রফতানি করে আয় হয়েছে ৩০ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩১ কোটি ৫ লাখ ডলার। এছাড়া আলোচ্য সময়ে জীবিত মাছ রফতানি করে আয় হয়েছে ৩২ লাখ ডলার।

No comments

Powered by Blogger.