আদালতের অনুমতি ছাড়াই দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়লেন বশির

ওমর আল বশির
আদালতের অনুমতি ছাড়াই দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়েছেন সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির। দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে আজ সোমবার বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট বশিরকে বহনকারী বিমানটি সুদানের রাজধানী খার্তুমে পৌঁছালে এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করা হবে।
গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার একটি আদালত প্রেসিডেন্ট বশিরের সে দেশ ত্যাগ নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী আদেশ দেন। আফ্রিকান ইউনিয়নের (এইউ) সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়া বশিরকে গ্রেপ্তারের জন্য এর আগেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে আহ্বান জানিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।
প্রেসিডেন্ট বশিরের বিরুদ্ধে সুদানের দারফুরে সংঘটিত সহিংসতার সূত্রে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করার আবেদন করে আইসিসির এক বিবৃতিতে বলা হয়, তাঁকে গ্রেপ্তার করতে দক্ষিণ আফ্রিকার ‘কোনো চেষ্টাই উপেক্ষা করা উচিত নয়’।
এই প্রেক্ষাপটে জোহানেসবার্গের একটি আদালত বলেন, বশিরকে দ্য হেগে আইসিসির কাছে তুলে দেওয়ার আবেদন গৃহীত হবে কি না, তার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত তিনি সে দেশ ছাড়তে পারবেন না। গতকালই এ শুনানি হওয়ার কথা। সুদানের সুনা বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রেসিডেন্ট বশিরের সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা আছেন।
আফ্রিকান ইউনিয়নের অভিযোগ, পক্ষপাতমূলকভাবে, বিশেষ করে এই মহাদেশের কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং অন্যান্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ নিয়ে এইউ এবং আইসিসির মধ্যে উত্তেজনা চলছে। এর আগে এইউ ক্ষমতাসীন রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানদের বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু না করতে আইসিসির প্রতি আবেদন করেছিল।
আইসিসির নিজস্ব কোনো পুলিশ বাহিনী নেই। আদেশ পালনের জন্য তাদের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর ওপরই নির্ভর করতে হয়। রোম সংবিধি অনুসারে গঠিত আইসিসি। এতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের দেশে বশির পা ফেলামাত্র তাঁকে গ্রেপ্তারে বাধ্য। তবে এমনটা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও আইসিসির প্রেসিডেন্ট সিদিকি কাবা এই বলে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা বশিরকে গ্রেপ্তার না করলে এর ফল খুব খারাপ হবে।
প্রেসিডেন্ট বশিরের বিরুদ্ধে আইসিসির সমন জারির পর তাঁর বিদেশ ভ্রমণ নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। তিনি আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বন্ধুভাবাপন্ন দেশছাড়া অন্য কোথাও যান না। তবে বরাবর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন তিনি।
বশির কীভাবে গেলেন, জানাতে হবে সাত দিনে
সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরকে দেশ ত্যাগ করতে না দেওয়া-সংক্রান্ত আদেশ কেন পালন করা হলো না—গত সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের কাছে তা জানতে চেয়েছেন দেশটির একটি আদালত। এর জবাব দিতে সরকারকে এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। খবর এএফপির।
আফ্রিকান ইউনিয়নের (এইউ) দুই দিনের সম্মেলনে যোগ দিতে গত রোববার দক্ষিণ আফ্রিকা যান বশির। সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই সোমবার তিনি দেশটি ত্যাগ করে নিজ দেশে ফিরে যান। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) দারফুরে সংঘটিত যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত বশিরকে গ্রেপ্তার করতে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এর সূত্র ধরে দেশটির আদালত বশিরকে দেশ ত্যাগ না করতে নির্দেশ দেন। তবে সোমবার বশিরকে গ্রেপ্তার করা হবে কি না, সে বিষয়ে আদেশ দিতে আদালত বসার আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়েন সুদানের প্রেসিডেন্ট। বশির চলে যাওয়ায় আদালত সরকারের সমালোচনা করেন এবং বশির কীভাবে চলে গেলেন, তা জানতে চান।

No comments

Powered by Blogger.