বিদেশি কূটনীতিকরা চার ইস্যুতে উদ্বিগ্ন by মেহেদী হাসান

দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভি বন্ধ, নির্বাচন নিয়ে সংলাপে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়া, সহিংস পরিস্থিতির অবসান না ঘটা এবং সুশীল সমাজের ব্যাপক পরিসরে কাজের সুযোগ না থাকা- এই চার ইস্যুতে উদ্বিগ্ন বিশেষ করে প্রভাবশালী দেশগুলোর কূটনীতিকরা।
গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে তাঁরা এসব ইস্যুতে জানতে চেয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, অর্গানাইজেশন অব ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) সদস্য দেশগুলোর
রাষ্ট্রদূতরা গত বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্রিফিংয়ে এসব ইস্যু গুরুত্বের সঙ্গে তুলেছেন। ওইসিডির সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, ইতালি অন্যতম। বিভিন্ন ইস্যুতে এই দেশগুলো সরব ভূমিকা পালন করে।
সূত্রে জানা যায়, আমার দেশ, দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভি কেন বন্ধ করা হয়েছে সে বিষয়ে ওইসিডির রাষ্ট্রদূতরা জানতে চেয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ওই ব্রিফিংয়ে আগামী নির্বাচন ও সংলাপ ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। ওইসিডির রাষ্ট্রদূতরা বলেছেন, তাঁরা যখন সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে আলাদাভাবে সাক্ষাৎ করেন, তখন যে বার্তা পান তাতে উভয় পক্ষের মধ্যে খুব বেশি ব্যবধান আছে বলে তাঁদের মনে হয় না। এর পরও তাহলে কেন সংলাপে বসা যাচ্ছে না সে বিষয়ে রাষ্ট্রদূতরা জানতে চান।
সূত্র জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।
সংঘাত ইস্যুতে ওইসিডির রাষ্ট্রদূতরা মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচনের বছরে এমনিতেই সংঘাত হয়ে থাকে। এবার নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের মধ্যে মতবিরোধ থাকায় সংঘাতের মাত্রা বেশি। সহিংসতা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন বলেও তাঁরা জানান।
ওইসিডির রাষ্ট্রদূতরা সুশীল সমাজের আরো জোরালো ভূমিকা রাখার সুযোগ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ও উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে ওইসিডি এ দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, গণতান্ত্রিক উৎকর্ষ, ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ ও শক্তিশালী অর্থনীতি দেখতে চায়। ওইসিডি রাষ্ট্রদূতরা আশা করেছেন, নির্বাচনের আগে তাঁরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আরো আলোচনার সুযোগ পাবেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, অতীতে বিভিন্ন ইস্যুতে সব রাষ্ট্রদূতকে একসঙ্গে ব্রিফ করা হলেও এবার তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর কারণ জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সবার আগ্রহের বিষয় এক নয়। এ কারণে আরব দেশ, ওইসিডি এবং অন্য দেশগুলোকে আলাদা করে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি জানানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক কালের কণ্ঠকে জানান, নির্বাচনের কয়েক মাসে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে যা থাকা উচিত তাই ছিল। নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি সাভার ট্র্যাজেডির পর শ্রম পরিস্থিতি উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
আরব দেশগুলো বাংলাদেশের ভালো বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগী। গত সোমবার তাদের উদ্দেশ্যে ব্রিফিংয়ে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ছাড়াও ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক, রোহিঙ্গা ইস্যু, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন ইস্যু স্থান পেয়েছে। ব্রিফিং শেষে ঢাকায় কূটনৈতিক কোরের ডিন ও ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত শাহের মোহাম্মদ বলেন, হরতাল বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশিদের নেতিবাচক ধারণা দিচ্ছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাংলাদেশের 'অভ্যন্তরীণ বিষয়' হিসেবে অভিহিত করলেও যেকোনো বিচারই সুষ্ঠু হওয়া উচিত বলে তিনি জানান।
শাহের মোহাম্মদ বলেন, ওআইসি বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। বাংলাদেশ সরকার বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সমস্যা সমাধানে কঠোর পরিশ্রম করছে। সরকারের এ উদ্যোগকে ওআইসি সমর্থন করে। তিনি বলেন, 'সব সমস্যা সমাধানে আমরা সব দলকে একসঙ্গে বসে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাই।' তিনি আরো বলেন, ওআইসির সদস্যরা বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায়।
গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অন্যান্য দেশের (ওআইসি ও ওইসিডি ছাড়া) রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফিংয়েও শ্রমমান উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সূত্রে জানা যায়, ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ পরিস্থিতি বুঝতে এ ধরনের ব্রিফিং আয়োজনের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভবিষ্যতেও এভাবে অঞ্চল বা জোটভিত্তিক ব্রিফিং হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.