গুগল ফেসবুক ইয়াহুর সার্ভারে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন হানা

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) গোপনে শুধু লাখ লাখ লোকের টেলিফোন কথোপকথনের তথ্যই সংগ্রহ করছে না, তারা ইন্টারনেট সেবাদানকারী তথ্যপ্রযুক্তি কম্পানিগুলোর সার্ভারেও 'সরাসরি' প্রবেশ করছে।
আর এনএসএকে এই অনুপ্রবেশের সুযোগটি করে দিচ্ছে খোদ কম্পানিগুলোই। যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকার পর গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফট, অ্যাপলসহ শীর্ষস্থানীয় ৯ কম্পানি সরকারের ওই গোপন কর্মসূচিতে সহায়তা করছে। সরকারের এ নীতিতে জনগণের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন হচ্ছে বলে দেশটিতে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
মার্কিন সরকার টেলিফোন কথোপকথন ও ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহের কথা স্বীকার করেছে। তবে তারা দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থেই এ কাজ করা হচ্ছে। তারা দেশের নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করছে না। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করছে। তবে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সার্ভারে গোয়েন্দাদের আড়িপাতার কাজে সহায়তার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
টেলিফোনে আড়িপাতার খবরটি গত বুধবার প্রথম প্রকাশ করে গার্ডিয়ান। তারা জানায়, আদালতের এক 'গোপন নির্দেশে' এনএসএকে টেলিফোন আলাপচারিতার তথ্য সংগ্রহের অধিকার দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশের কারণে টেলিফোন কম্পানি ভেরিজোন তাদের গ্রাহকদের প্রতিদিনকার কথোপকথনের তথ্য এনএসএকে দিয়ে আসছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, 'এনএসএ ও কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (এফবিআই) মিলে পিআরআইএসএম (প্রিজম) নামের একটি গোপন কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় ৯টি ইন্টারনেট কম্পানির কেন্দ্রীয় সার্ভারে সরাসরি আড়িপেতে প্রচুর পরিমাণ অডিও, ভিডিও, স্থিরচিত্র, ইমেইল, নথি ও অন্য তথ্য সংগ্রহ করছে।' কম্পানিগুলো হচ্ছে মাইক্রোসফট, ইয়াহু, গুগল, ফেসবুক, পালটক, এওএল, স্কাইপ, ইউটিউব ও অ্যাপল। কম্পানিগুলো এনএসএকে তাদের সার্ভারে ঢোকার সুযোগ করে দেয়। ধারণা করা হয়, প্রিজম কর্মসূচি চালু করা হয় ২০০৭ সালের পর। টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ কোনো ঘোষণা ছাড়াই গোপনে আড়িপাতার এ কর্মসূচি চালু করেন। এ কর্মসূচির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের পরিবর্তে অনলাইনে থাকা সব রকম তথ্যের দখল নিতে পারে গোয়েন্দারা।
প্রিজম কর্মসূচির অংশ হিসেবে এনএসএকে সার্ভারে সরাসরি প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে কম্পানিগুলো। তাদের দাবি, সরকারের এ ধরনের গোপন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তারা কিছু জানে না। যদি এমনটা হয়েই থাকে, তবে তা তাদের অজ্ঞাতেই হয়েছে।
মাইক্রোসফট তাদের বিবৃতিতে জানায়, একমাত্র বৈধ আইনি নির্দেশ থাকলেই তারা 'কোনো নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট ও গ্রাহক' সম্পর্কে তথ্য সরবরাহে সহায়তা করে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট অনুসন্ধান সেবা প্রতিষ্ঠান গুগল বলেছে, 'ব্যবহারকারীদের তথ্য হাতানোর কাজে কাউকে সরাসরি সহায়তা তারা দেয়নি। গ্রাহকদের তথ্যের নিরাপত্তার বিষয়ে গুগল অত্যন্ত সতর্ক। আইন মেনে আমরা সরকারের কাছে গ্রাহকদের তথ্য উন্মুক্ত করি এবং সেসব আবেদন অত্যন্ত সতর্কভাবে বিবেচনা করি।'
ফেসবুকের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জো সুলিভান বলেন, 'কোনো সরকারি সংস্থাকে ফেসবুক সার্ভারে সরাসরি প্রবেশে কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি। কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির বৃত্তান্ত বা তথ্য ফেসবুকের কাছে জানতে চাওয়া হলে, আমরা এর আইনি বৈধতা সতর্কভাবে যাচাই করি এবং আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিই।'
জনগণের প্রাইভেসি বা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে হৈচৈ শুরু হওয়ার পর ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠান থেকে গোপনে তথ্য নেওয়ার কথা গত বৃহস্পতিবার স্বীকার করে সরকার। এনএসএর প্রধান জেমস ক্ল্যাপার সংবাদমাধ্যমকে জানান, প্রিজম সম্পর্কে প্রকাশিত সব তথ্য সঠিক নয়। এই নীতি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তিনি বলেন, 'এই কর্মসূচির লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিক নয়। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি রয়েছে_এমন বিদেশি গোয়েন্দা তথ্যই আমরা সংগ্রহ করি।'

No comments

Powered by Blogger.