জঙ্গি মদদের মামলা নিয়ে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ

রাজশাহীর বাগমারায় পুলিশের বিরুদ্ধে জঙ্গি মদদ, চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলা নিয়ে ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে পুলিশ চার বছর ধরে তদন্তের নামে বাদী ও আসামিদের হয়রানি করছে।
তবে পুলিশ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
জানা যায়, উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য আবেদ আলীকে ২০০৪ সালের ১৩ এপ্রিল বাংলা ভাইয়ের ক্যাডাররা বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। ওই দিন তারা তাঁকে হামিরকুৎসায় নিয়ে চাঁদার দাবিতে নির্যাতন করে হাত-পা ভেঙে দেয়। এ ঘটনায় ২০০৯ সালে তিনি সাবেক মন্ত্রী আমিনুল হক, উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, সাংসদ নাদিম মোস্তফা, বাংলা ভাইয়ের সহযোগী লুৎফর রহমান, সাত্তারসহ ৭০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। আদালত তদন্তের জন্য বাগমারা থানাকে দায়িত্ব দেন। ওই বছরই মামলাটি তালিকাভুক্ত করা হলেও এ পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। এ সময়ের মধ্যে ছয় তদন্তকারী কর্মকর্তার পরিবর্তন ও চার আসামির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তদন্ত শেষ হয়নি।
মামলার বাদী ও আসামিরা অভিযোগ করেন, চার বছর ধরে মামলা তদন্তের নামে তাঁরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সাক্ষীদের বারবার থানায় যাওয়া ও তদন্তের খরচের জন্য দফায় দফায় টাকা দিতে হচ্ছে।
বাদী আবেদ আলী অভিযোগ করেন, সর্বশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা অব্যাহতির কথা বলে আসামিদের কাছ থেকে তিন থেকে সাত হাজার টাকা করে আদায় করেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা নিজে ও কয়েকজন সোর্স (পুলিশের তথ্যদাতা) টাকার জন্য আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বাদী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিচারের আশায় মামলা করে এখন বিপাকে পড়েছি। চার বছর ধরে শুধু থানায় ঘুরছি, আদালতে আবার কত দিন ঘুরতে হবে, তা আল্লাহই জানেন।’
আসামি মকবুল, রাকিব, খোকাসহ অন্যরা জানান, চার বছর ধরে শুধু পুলিশ তদন্তের নামে হয়রানি করছে। মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁরা বলে জানান। জাঙ্গালপাড়ার আসামি আবদুল হামিদ অভিযোগ করেন, মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলে তাঁর কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করা হয়। তবে তিনি তিন হাজার টাকা দিয়েছেন। আফজাল নামের আরেক আসামির অভিযোগ, তাঁর কাছ থেকে ফজলু নামের এক সোর্সের মাধ্যমে টাকা নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন আসামি জানান, দ্রুত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা বলে টাকা নেওয়া হচ্ছে। টাকা না দিলে তাঁদের জড়িয়ে প্রতিবেদন দাখিলের হুমকি দেওয়া হয়।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা বাগমারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলিফ হোসেন বলেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। বাদীর অভিযোগ ভিত্তিহীন। বাদী নিজেই আসামিদের পক্ষে সাফাই গাইছেন। তবে মামলা নিয়ে আগের তদন্তকারী কর্মকর্তারা কী করেছেন, তা তাঁর জানা নেই।

No comments

Powered by Blogger.