ওদের টার্গেট কী? by মোহাম্মদ আলী

হেফাজতে ইসলাম সরকারের কাছে ১৩ দফা দাবি পেশ করেছে। আবার এর নেতারা এও বলেছেন, 'এটা কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তারা রাজনীতি করবেন না।' অথচ তাদের প্রথম দাবি রাজনৈতিক সংবিধান সংক্রান্ত! সংবিধান রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার কাণ্ডারি।
তাহলে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে, প্রথমেই সংবিধান পরিবর্তন করার দাবি করা হলো কেন?
প্রথমত, 'হেফাজতে ইসলাম' ইসলাম দিয়ে শুরু করলেও মূল টার্গেট 'শাহবাগ'। শাহবাগের 'গণজাগরণ মঞ্চ' তাদের মূল শত্রু। কারণ গণজাগরণ মঞ্চ দুটি দাবিতে অনড়। এদের এক নম্বর দাবি সব যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই। দ্বিতীয়ত, যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। হেফাজতে ইসলাম মনে করে, এ দাবি যারা করে তারা নাস্তিক! এভাবে অপপ্রচার চালিয়ে তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে। হেফাজতিরা জামায়াতি নয়, কিন্তু জামায়াত রক্ষা ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অন্যদিকে বিএনপিও ভোটের পাল্লা ভারী করার জন্য হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতের কাঁধে সওয়ার হতে চাইছে। ফলে এ দুটি সংগঠনের সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সমর্থন দিয়ে আসছে। এমনকি মতিঝিল থেকে পল্টন এলাকায় ৫ মে হেফাজতিদের ভয়াবহ তাণ্ডবের কোনো নিন্দা না জানিয়ে উল্টো সরকারকে লাশ গুমের অভিযোগে অভিযুক্ত করছে।
সামরিক ছাউনিতে জন্মানো দল বিএনপি বাংলাদেশের বাম রাজনীতিকে আশির দশকে বহুধা বিভক্ত ও ছত্রখান করে ভোটের রাজনীতিতে ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে। দলছুট ওইসব নেতা বিএনপির টিকিট নিয়ে এমপি ও মন্ত্রী বনে যান রাতারাতি। এখনও বিএনপির টিকিট দিয়ে হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াত উচ্ছিষ্টদের পুনর্বাসনের চেষ্ট করছে।
হেফাজতে ইসলাম স্বরূপে জামায়াত সেদিন ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নানা অজুহাত তুলেছিল 'ইসলাম গেল', 'ইসলাম গেল', 'এ দেশ ভারতের কলোনি হবে', 'মুসলমানরা মসজিদে আজান দিতে পারবে না' ইত্যাদি বলে। আর এ কথিত বিপদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য জামায়াত গড়ে তুলেছিল রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী। পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গী হয়ে সারাদেশে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। এমনকি পাকবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাংবাদিক, অধ্যাপক, সংখ্যালঘুসহ সাধারণ নিরপরাধ জনগণকে নির্বিচারে হত্যা করেছে।
হেফাজতে ইসলামেরও আরেক টার্গেট নারী। তাদের এ দাবিতে রয়েছে : 'ব্যক্তি ও পরাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ কর।' এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সামরিক শাসনের দৈরাত্ম্যে সেই রাজনীতি কোণঠাসা। তাকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা না করে সে রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে মৌলবাদী রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় পৃষ্ঠপোষকতা করে খালেদা জিয়া কি রাজনীতিকে পেছনে ঘোরাতে চাইছেন?
অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক রাজনীতি দেশকে কোথায় নিয়ে যাবে? মাদ্রাসার সাধারণ গরিব ও এতিম ছেলেদের রাজপথে 'কথিত দাবি' প্রতিষ্ঠার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? বাংলাদেশকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হলে রাজনৈতিক নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কওমি মাদ্রাসাকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করে গরিব ছাত্রদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে। এতে করে এসব ছাত্রও দেশের বিরাট সম্পদ হয়ে উঠবে। অপরাজনীতিতে ব্যবহার না করে তাদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করা রাজনীতিবিদদের জাতীয় কর্তব্য। আপনারা দেশকে মৌলবাদীদের হাতে তুলে দেবেন না, গণতন্ত্রের পথে আরও এগিয়ে নেবেন।

য় মোহাম্মদ আলী : সাধারণ সম্পাদক, তাহের সংসদ

No comments

Powered by Blogger.