‘শাহবাগ’কে স্বাগতঃ বিএনপি

শাহবাগে তারুণ্যের এই আন্দোলনের অষ্টম দিনে এসে বিএনপির সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি এক বিবৃতিতে এই অবস্থান প্রকাশ করেছে।
তবে শাহবাগের আন্দোলনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ওঠায় বিএনপির সন্দেহ, এই আন্দোলন সরকার তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যবহার করতে চাইছে।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের আহ্বানে শাহবাগে আন্দোলনরতদের কাছে নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিও ওঠার প্রত্যাশা করেছে প্রধান বিরোধী দল।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায় প্রত্যাখ্যান করে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। টানা এই কর্মসূচিতে লাখো মানুষ অংশ নিচ্ছেন প্রতিদিন।

শাহবাগে আন্দোলন শুরুর পর থেকে বিএনপির নেতারা এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে যেতে থাকেন।

এরপর আ স ম হান্নান শাহসহ কয়েকজন নেতা শাহবাগের আন্দোলনকে ‘নাটক’ অভিহিত করেন।

তবে দলটির নেতা মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা কয়েকটি আলোচনা সভায় বক্তব্যে শাহবাগের তারুণ্যের আবেগকে সম্মান জানান।

এরপর সোমবার এক বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, শাহবাগের আন্দোলনকে তারা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে।

ওই বিবৃতির পর রাতে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

এরপর মঙ্গলবার রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অবস্থান জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, “এক সপ্তাহ ধরে বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণী একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসি প্রদানের দাবিতে শাহবাগে অবস্থান করছেন। তাদের সমাবেশে আরো কিছু বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে।

“তরুণ প্রজন্ম জাতির বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে আগ্রহী হবেন এবং যৌক্তিক ও কার্যকর অবস্থান নেবেন, এটাই কাঙ্ক্ষিত। তাই তারুণ্যের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।”

শাহবাগের আন্দোলনকারীরা তাদের আন্দোলন নির্দলীয় বললেও তাদের বক্তব্যে যে বিএনপি ভরসা পাচ্ছে না, তা বিবৃতিতে স্পষ্ট।

“সমাবেশের মঞ্চ থেকে দল নিরপেক্ষ সমাবেশ বলে দাবি করলেও ক্রমান্বয়ে একটি বিশেষ রাজনৈতিক ঘরানার ব্যক্তিদের হাতেই এর নেতৃত্ব কুক্ষিগত করার প্রয়াস চলছে।”

এক্ষেত্রে সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয় বাংলা’র ব্যবহার নিয়ে বিএনপি বলেছে, “মুক্তিযুদ্ধের সময় বহুলভাবে উচ্চারিত একটি স্লোগান স্বাধীনতা উত্তরকালে চরমভাবে দলীয়করণ করার ফলে সর্বজনগ্রাহ্যতা হারায়।

“সেই স্লোগান সমাবেশে বার বার উচ্চারিত হওয়ার ফলে জনমনে চরম সংশয় এবং এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।”

শাহবাগের তরুণদের কণ্ঠে সিরাজ সিকদারসহ স্বাধীনতা পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধা ও বিরোধী নেতা-কর্মী হত্যা, এম ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী গুম, পোশাক শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম ও বিশ্বজিত দাস খুনের প্রতিবাদ শুনতে চেয়েছে বিএনপি।

এছাড়া পদ্মা সেতু, হল-মার্ক, ডেসটিনি,পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারি নিয়েও শাহবাগ আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল।

“এই বিষয়গুলো শাহবাগে সমবেত তরুণ সমাজের হৃদয় ও আবেগকে স্পর্শ করলে, তা প্রতিবাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা গেলে বর্তমানের আন্দোলন আরো মহিমান্বিত হত,” বলা হয় বিবৃতিতে।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপি এই বিচারের পক্ষে।

“বিচারটি যাতে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয় বিএনপি সে দাবি জানিয়ে আসছে। বিএনপির দাবির প্রতি সম্মান দেখালে বিচারটি আজ প্রশ্নবিদ্ধ হত না।”

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ‘অবশ্যই’ মানবতাবিরোধী অপরাধসহ সব ধরনের অপরাধের ‘নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু বিচার’ নিশ্চিত করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

শাহবাগের সমাবেশ থেকে জামায়াত ‘সমর্থক’ সংবাদপত্র ও টেলিভিশন বন্ধের দাবি তোলার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি বলছে, “এই ধরনের অসহিষ্ণুতা ও নৈরাজ্য দেশকে গভীর সঙ্কটে নিপতিত করতে পারে।”

No comments

Powered by Blogger.