আইন অমান্য করে শিক্ষক নিয়োগ

দেশের সব বেসরকারি স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ আইন অমান্য করে এখনও সার্টিফিকেটবিহীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে চলেছে।
২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বেসরকারি শিক্ষক 'রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড সার্টিফিকেশন' কর্তৃপক্ষ আইন বলবৎ করা হয়। বেসরকারি স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগ করার জন্য কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা করবে। প্রতিবছর ২০০ নম্বরের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে এবং যারা কৃতকার্য হবেন তাদের পাঁচ বছরের জন্য সার্টিফিকেট দেয়া হবে। আইনের ১০(২) ধারা অনুযায়ী যে ব্যক্তি কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত নন এবং সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত নন তিনি এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগের জন্য বিবেচিত হবেন না।
বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বহু নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত এ আইন অমান্য করে শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে। তার মধ্যে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পর্যন্ত আইন অমান্য করে সার্টিফিকেটবিহীন শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল বলেছেন, নিবন্ধিক শিক্ষক পাওয়া যায় না। এ দুটি নামিদামি স্কুল পর্যন্ত অনেক অনিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের বিষয়টি উল্লেখ না করেই শিক্ষক নিয়োগের জন্য পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে থাকে এবং সেখানে সার্টিফিকেটের কোন উল্লেখ থাকে না। এমনকি এমনও দেখা গেছে যে, বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নিবন্ধন ও সার্টিফিকেট ছাড়া শিক্ষক নিয়োগের জন্য দরখাস্ত করা যাবে। এমনকি এ কথাও বলা নেই যে, নিয়োগ প্রাপ্তির পর নিবন্ধন ও সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, সার্টিফিকেটবিহীন অনিবন্ধিত শিক্ষকদের বেতন পরিশোধের জন্য উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে চিঠি আসে।
এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) আতাউর রহমান বলেন, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ছাড়া কোন শিক্ষককেই মান্থলি পে-অর্ডারভুক্ত (এমপিও) করা হয়নি। তবে পার্টটাইম টিচারদের রেজিস্ট্রেশন আছে কিনা সে ব্যাপারে তার কাছে কোন তথ্য নেই। দেশে বর্তমানে ৩৪ হাজার ৪১২টি বেসরকারি পোস্ট প্রাইমারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। সেখানে ৪ লাখের বেশি শিক্ষক আছেন। তাদের মধ্যে কতজন নিবন্ধিত ও সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত সে ব্যাপারে কোন তথ্য অধিদফতরের কাছে নেই।
এটা সর্বজনবিদিত যে, বেসরকারি পোস্ট প্রাইমারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগে তদবির ও অর্থের হাতবদল হয়। এসব বন্ধ করে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের জন্য আইন করা হয় এবং ২০০ নম্বরের পরীক্ষার ব্যবস্থা করে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এ আইন অমান্য করে নামিদামি স্কুল পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ দিচ্ছে। তাহলে আইন করে কী লাভ হলো, যদি ঠিকমতো প্রয়োগ করা না হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আইন মেনে চলার ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.