চরাচর-ইছামতিতে প্রতিমা বিসর্জন by ফখরে আলম

সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে দুরন্ত কিশোরীর মতো দুই বেণি দুলিয়ে উচ্ছ্বসিত ইছামতি প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে নিজেকে সমর্পণ করেছে। দেবহাটা উপজেলার টাউন শ্রীপুরের কোল ঘেঁষে প্রবাহিত ইছামতি অনেকটাই চঞ্চল।


উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবহমান। নদীর বুক কাঁপিয়ে বাংলাদেশ আর ভারতের পতাকা উড়িয়ে ছুটে যাচ্ছে দুই দেশের নৌকা ও ট্রলার। ইছামতির এই হচ্ছে চিরন্তন সরল রূপ। কিন্তু প্রতিমা বিসর্জনের দিন ইছামতি মায়াবতী হয়ে ওঠে। দুই দেশের শত শত দুর্গা মাকে কোলে নিয়ে খুশি আর বিষাদে ইছামতি খিল খিল করে হাসলেও শেষ পর্যন্ত কেঁদে ফেলে। বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের মানুষের মহামিলন ঘটিয়ে স্রোতস্বিনী ইছামতির ঢেউ দুই দেশের ভূখণ্ডে আছড়ে পড়ে। তখন স্পষ্টই শোনা যায়, 'মা একই। মা অভিন্ন। আমরা দুই বাংলার মায়ের সন্তান।' ইছামতির এই উদারতায় দুই বাংলার মানুষের মন শান্ত হয়। আবেগ-উচ্ছ্বাসে কেউ কেউ শেষমেশ বলেই ফেলে, আমরা তো এই মায়েরই নাড়িছেঁড়া সন্তান।
এ পারে সাতক্ষীরার দেবহাটা, টাউন শ্রীপুর ও হারদাহ। ওপারে ভারতের উত্তর চবি্বশপরগনা জেলার বশিরহাটের হাসনাবাদ ও টাকি। মাঝে প্রবহমান ইছামতি। ইছামতির অর্ধেক বাংলাদেশে আর অর্ধেক ভারতে। দুই দেশের দুই কূলের মানুষের মধ্যে হাজার বছরের আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর 'এই কূলে আমি ওই কূলে তুমি'- এমন বিরহের সুর শোনা যায়। সীমান্তরক্ষী বাহিনী দুই দেশের মানুষের আবেগ, উচ্ছ্বাস, প্রেম, সম্প্রীতির সব কথাই জানে। কিন্তু তাদের করার কিছু নেই। তবে বিজয়া দশমীর দিন মা দুর্গা দুই দেশ এক করে কৈলাশে চলে যান। বশিরহাট, টাকি, হাসনাবাদসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকার দুর্গা প্রতিমা ইছামতিতেই বিসর্জন দেওয়া হয়। বাংলাদেশের দেবহাটা, হারদাহ, টাউন শ্রীপুরসহ আশপাশের সব দুর্গার বিসর্জনও ইছামতিতেই। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে দুই দেশের লাখো মানুষ এই বিসর্জনে অংশ নেন। প্রায় ৩০০ প্রতিমা ইছামতির বুকে সমর্পণ করা হয়। আগামীকালও প্রতিমা বিসর্জনের দিন ইছামতি তার ইচ্ছামতো দুই দেশকে এক করে দেবে। মাঝনদীতে ভাসমান মঞ্চে দুই দেশের মানুষ ফের উচ্চারণ করবে, 'এই নদী এই আকাশ এই বাতাস আমাদেরই। বন্ধুত্ব, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি আমাদের হৃদয় আরো প্রসারিত করবে।'
ফখরে আলম

No comments

Powered by Blogger.