ব্যাংকগুলো ছয় মাসে আকর্ষণীয় পরিচালন মুনাফা করেছে

ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি প্রায় বছরের শুরু থেকেই বলে আসছিল, তারল্যসংকটের কারণে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে পারছে না। শেয়ারবাজারেও মন্দা চলেছে। মুদ্রাবাজারের নগদ টাকার টানাটানির খবর প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হয়েছে।
তার পরও এসব তথ্যকে যেন ভুল প্রমাণ করে ২০১১ সালের প্রথম ছয় মাসের (জানুয়ারি-জুন) হিসাবে ব্যাংকগুলো আকর্ষণীয় পরিচালন মুনাফা করেছে বলা যায়। হাতে গোনা কয়েকটি বাদে বাকি ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফাও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি বা প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অবশ্য বিএবি সভাপতির ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা গতবারের তুলনায় বেশ কমেছে।
জানা গেছে, এ বছর আমদানি ও রপ্তানি খাতে ব্যাংকের আয় বেশি বেড়েছে। এর কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি। আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে টাকার অঙ্কে পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের বিভিন্ন ধরনের কমিশন আয় এ সময় বেড়েছে।
বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নিজস্ব উদ্যোগে সংগ্রহ করা সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, বরাবরের মতো অর্ধবার্ষিকীর হিসাবে পরিচালন মুনাফার পরিমাণের দিক থেকে সর্বাধিক আয় হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের। ছয় মাসে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৬৫০ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪৯৫ কোটি টাকা।
তবে ইসলামী ব্যাংকের আমানত ও বিনিয়োগ (ঋণ) পদ্ধতি ভিন্ন। উপরন্তু, ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ বেসরকারি একক কোনো ব্যাংকের চেয়ে অনেক বেশি।
পরিচালন মুনাফার দিক থেকে ইসলামী ব্যাংকের পরই রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফার পরিমাণ হয়েছে ৪৯০ কোটি টাকা। আগের বছর প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ৩৬৫ কোটি টাকা। তারপর রয়েছে প্রাইম ব্যাংক। প্রাইম ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার পরিমাণ হয়েছে ৪০৫ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময় ছিল ৩৩৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে পরিচালন মুনাফা প্রকাশের ওপর নানা ধরনের বিধিনিষেধ রয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো পরিচালন মুনাফা প্রকাশ করতে পারে না। এই বিধিনিষেধ এসেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) থেকে। এসইসি মূল্য সংবেদনশীল বিবেচনায় এই তথ্য প্রকাশ করতে দিতে চায় না। আর বাংলাদেশ ব্যাংকও তাতে সম্মতি দিয়েছে। তবে শেয়ারবাজারে যাঁরা প্রতিনিয়ত কেনাবেচা করেন এবং যাঁদের হাতে কোনো ব্যাংকের শেয়ার রয়েছে, তাঁরা ব্যক্তি যোগাযোগের মাধ্যমেই এ তথ্য আগেভাগে পেয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে সংবাদপত্রে তথ্য প্রকাশিত হলে সব বিনিয়োগকারী একই তথ্য পেতে পারেন।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী পরিচালন মুনাফা প্রকাশ একটি সাধারণ নিয়মের বিষয়। তবে নিট মুনাফাই ব্যাংকের প্রকৃত আয়। বছর শেষে পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ এবং কর (৪২.৫ শতাংশ) বাদ দিয়ে নিট মুনাফার হিসাব হয়। উপরন্তু, প্রাথমিকভাবে পাওয়া এই তথ্য-উপাত্ত কিছুটা কমবেশি হতে পারে। কেননা, কোনো কোনো ব্যাংকের জুন হিসাব শেষ হলেও এর অনেক ধরনের হিসাব চূড়ান্ত করতে আরও কয়েক দিন লেগে যেতে পারে।
ফলে এতে মুনাফার টাকা কমে বা বেড়ে যেতে পারে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীকে অপেক্ষা করতে হয় নিট বা প্রকৃত মুনাফার হিসাব পাওয়া পর্যন্ত।

ব্যাংকগুলোর ষাণ্মাসিক মুনাফা
ব্যাংক ২০১১ ২০১০
ইসলামী ব্যাংক ৬৫০ ৪৯৫
ন্যাশনাল ব্যাংক ৪৯০ ৩৬৫
প্রাইম ব্যাংক ৪০৫ ৩৩৫
সাউথইস্ট ৩২৫ ২৯৫
পূবালী ২৮০ ২৮৪
ইউসিবিএল ২৮০ ২২৬
ইস্টার্ন ব্যাংক ২৫০
ডাচ্-বাংলা ২৪৫ ২২০
ব্র্যাক ব্যাংক ২৩০ ২৫০
ব্যাংক এশিয়া ২১৫ ২১৪
এনসিসিবিএল ২০১ ১৮৫
এবি ব্যাংক ২০০ ২০০
ঢাকা ব্যাংক ১৯৫ ১৮১
আইএফআইসি ১৮৫ ১৪০
ওয়ান ব্যাংক ১৮০ ১৬৪
সিটি ব্যাংক ১৮০
আল আরাফাহ্ ১৭৭ ১৪০
উত্তরা ১৭০ ১৪০
মার্কেন্টাইল ১৫৮ ১৩০
শাহ্জালাল ১৫৬ ১৬০
যমুনা ব্যাংক ১৫০
এসআইবিএল ১৩৫ ১০৫
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ১৩৩ ১৩৯
ট্রাস্ট ব্যাংক ১০৬ ৮০
এক্সিম ব্যাংক ১০২ ২১০
ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ৭৮ ৩০
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ৬৫ ১০৪
বেসিক ১৩৬ ৬২
রূপালী ১২৫

No comments

Powered by Blogger.