শান্তির লক্ষ্যে শর্ত সাপেক্ষে কিছু ভূমি ছাড়তে রাজি

ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তি স্থাপনে ১৯৬৭ সালের আগের সীমানায় ফিরে না গেলেও কিছু ভূমি শর্ত সাপেক্ষে ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মার্কিন কংগ্রেসে গত মঙ্গলবার দেওয়া এক ভাষণে নেতানিয়াহু এ ঘোষণা দেন। তবে তাঁর এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিন।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে ইসরায়েল এক্ষুনি প্রস্তুত। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের শান্তির জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ রচনা করতে আমরা পারব। তবে আল-কায়েদার ফিলিস্তিনি সংস্করণ-সমর্থিত ফিলিস্তিনি সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না ইসরায়েল।’
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন, আমরা একসঙ্গে বসে সমঝোতা করি। হামাসের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে আমাদের সঙ্গে চুক্তি করুন।’ তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আকারের ব্যাপারে আমাদের মনোভাব নমনীয়। পীড়াদায়ক হলেও ঐতিহাসিক এই শান্তি স্থাপনে কিছু ভূমি ছাড় দিতে আমি রাজি। ইসরায়েলের নেতা হিসেবে এটি আমার দায়িত্ব।’
তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেরুজালেমকে আর বিভক্ত হতে দেওয়া যাবে না। এটি ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবেই টিকে থাকবে। গত দুই দশকেও শান্তি চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারার ব্যর্থতার জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, ‘আমি যা করেছি, প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে তা-ই করতে হবে। আমি আমার দেশের জনগণের হয়ে বলছি, একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র আমি মেনে নেব।’ তিনি বলেন, ‘সময় এসেছে মাহমুদ আব্বাসের জন্যও তাঁর দেশের জনগণের হয়ে কথা বলার। আপনি বলুন, “আমি একটি ইসরায়েলি রাষ্ট্র মেনে নেব।” দেখবেন, এই ছয়টি শব্দই ইতিহাস পাল্টে দেবে।’
নেতানিয়াহুর এ প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু আরদাইনাহ বলেছেন, ‘সংকট নিরসনে নেতানিয়াহুর যে দৃষ্টিভঙ্গি, তা মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনার প্রাক্কালে আরও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।’ তিনি বলেন, ‘নেতানিয়াহু তাঁর ভাষণে কী বললেন না-বললেন, তাতে শান্তি আলোচনায় কোনো প্রভাব পড়বে না।’
এদিকে এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, সংকট নিরসনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ১৯৬৭ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়ার যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন জানানো উচিত ছিল বলে বেশির ভাগ ইসরায়েলি মনে করেন।
গতকাল বুধবার দৈনিক মারিভ-এ প্রকাশিত এ জরিপে দেখা গেছে, ইসরায়েলের ১০ শতাংশ নাগরিক মনে করে, কোনো ধরনের রাখঢাক না রেখেই প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানানো উচিত ছিল নেতানিয়াহুর। আর ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ নাগরিক মনে করে, সমর্থন জানানো উচিত ছিল, তবে তা অবশ্যই ‘রাখঢাক’ করে। তবে ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ ইসরায়েলি বলেছে, শান্তিপ্রক্রিয়ার স্বার্থে ওবামার প্রস্তাবের বিরোধিতা করা উচিত ছিল নেতানিয়াহুর।
প্রেসিডেন্ট ওবামা গত বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক এক ভাষণে এ প্রস্তাব দেন। তিনি ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু নেতানিয়াহু এ প্রস্তাব নাকচ করে দেন।

No comments

Powered by Blogger.