ডিএসইতে ২৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ বৃহস্পতিবার ২৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশ কিছুদিন ধরে পুঁজিবাজারে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা, বিশেষ করে অনেক বড় বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে দূরে রয়েছেন।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা আরও বলেছেন, তারল্যসংকট লেনদেন কমার অন্যতম একটি কারণ। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু ছাড় দিলে, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বড় বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসলে তারল্যসংকট অনেকাংশে কমে যাবে বলে আশা করছেন তাঁরা।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, আজ ডিএসইতে ২৯৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর আগে ২০০৯ সালের ৩০ মার্চ স্টক এক্সচেঞ্জটিতে ২৭৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়।
ব্রোকারেজ হাউস সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েক দিন ধরে হাউসগুলোতে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। আবার অনেকে হাউসে এলেও লেনদেনে অংশ নিচ্ছেন না। এ ক্ষেত্রে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকেই।
এ ব্যাপারে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বাজারে অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন আর বাজারে আসতে চাচ্ছেন না। যার ফলে লেনদেন দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান সংকোচনশীল মুদ্রানীতি পরিবর্তন করে বিশেষ করে সিআরআর ও এসএলআর কমালে তারল্যপ্রবাহ অনেকাংশে বেড়ে যাবে।
বাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আহমেদ খানও আজকের লেনদেন কমে যাওয়ার পেছনে তারল্যসংকটকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, অব্যাহত দরপতনে অনেক বিনিয়োগকারী ঋণে আটকে আছেন, অনেকে আছেন লোকসানে। এ ছাড়া এখনো এসইসি পুনর্গঠন নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা এখন ইচ্ছা থাকলেও নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। এ অবস্থায় তারল্যপরিস্থিতি উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে মত দেন এই বাজারবিশ্লেষক। তাঁর মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল্য সংকোচন নীতি সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সংকোচনশীল করবে।
এ ব্যাপারে ডিএসইর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আহসানুল ইসলাম বলেন, বাজারে মার্চেন্ট ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলোর ব্রোকারেজ হাউসের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ায় বাজারে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক বিনিয়োগকারীরা মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করায় নতুন করেও বিনিয়োগ করতে পারছেন না।
এ ছাড়া নতুন বেশ কিছুদিন ধরে নতুন আইপিও বন্ধ থাকায় তার নেতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়ছে। কেননা, অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছেন, যাঁরা শুধু প্রাথমিক বাজারে বিনিয়োগ করে থাকেন।
আহসানুল ইসলাম বলেন, এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের চিহ্নিত করে তাঁদের ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যেতে পারে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তাঁদের বিশেষ ছাড় দেওয়া যেতে পারে। ক্ষতিগ্রস্তদের ফোর্সড সেলের ভীতি দূর করা ছাড়া নতুন আইপিও আসার ক্ষেত্রে অনাবাসী বাংলাদেশিদের মতো ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের বিশেষ ছাড় দেওয়া যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.