গুদামের দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ নির্ধারিত সময়েই সরাতে হবে

শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেছেন, পুরান ঢাকার বিভিন্ন গুদাম থেকে দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ ১৭ আগস্টের মধ্যেই সরিয়ে ফেলতে হবে। যেসব ব্যবসায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হবেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের জনগণের নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থেই এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত ‘পুরান ঢাকার শিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
দিলীপ বড়ুয়া বলেন, নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় দাহ্য কেমিক্যালের বা রাসায়নিক পদার্থের গুদাম অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য দুই মাস সময় দেওয়া হয়। একই সঙ্গে এ সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীদের কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না বলে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
মন্ত্রী আরও বলেন, কিন্তু সরকার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেও ব্যবসায়ীরা দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ সরানোর উদ্যোগ নেননি। দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষা ও নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে বেঁধে দেওয়া সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
রাজধানীর দিলকুশা এলাকায় বিসিআইসি মিলনায়তনে বিসিআই সভাপতি শাহেদুল ইসলাম হেলালের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সভায় আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাংসদ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংসদ জাহিদ মালেক ও ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ বিশেষ অতিথি ছিলেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি সাহাব উদ্দিন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিসিআইয়ের পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী আবদুস সালাম, শহীদুল্লাহ মিয়া, খোকা সিকদার প্রমুখ।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, পুরান ঢাকায় যেভাবে দাহ্য কেমিক্যাল রাখা হয়েছে তা মৃত্যুফাঁদের মতো। সরকার জেনেশুনে জনগণকে মৃত্যুফাঁদের মধ্যে রাখতে পারে না। তিনি যেসব ভবনে কেমিক্যাল রাখা রয়েছে, এগুলোর গাঁয়ে ‘বিপজ্জনক’ লিখে রাখারও নির্দেশ দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, সব কেমিক্যাল বিপজ্জনক নয়। তবে দাহ্য কেমিক্যাল অত্যন্ত বিপজ্জনক। আর বিপজ্জনক কেমিক্যালের সঙ্গে সহাবস্থান সম্ভব নয়। তিনি পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের দাহ্য কেমিক্যাল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আইন অনুযায়ী কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার না থাকলে কারখানার অনুমোদন পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু শিল্পমালিকেরা কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন না করায় বুড়িগঙ্গা দূষিত হয়ে যাচ্ছে। বর্জ্য শোধনাগারবিহীন কারখানা বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ বলেন, যাঁরা বৈধ লাইসেন্স নিয়ে কেমিক্যাল ব্যবসা করছেন, তাঁদের গুদাম যাতে বন্ধ না হয় সেটি দেখা হবে। তিনি বলেন, ১৯৬১ সালের আইন দিয়ে এখনো কেমিক্যালের দাহ্য পদার্থ চিহ্নিত করার কাজ চলছে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে অনেক নতুন নতুন রাসায়নিক পদার্থ বাজারে এসেছে। এ জন্য তিনি আইন সংশোধনের জন্য আইন প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা বলেন, দীর্ঘদিনের ব্যবসা রাতারাতি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তাঁরা হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরানোর জন্য সাভারে জায়গা দেওয়ার প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে কেমিক্যালের গুদাম সরিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে জমি দেওয়ার প্রস্তাব করেন। একই সঙ্গে কেমিক্যালের গুদাম অন্যত্র সরানোর জন্য আরও কিছু সময় দেওয়ার দাবি জানান।

No comments

Powered by Blogger.