কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিক -সরকারের এখনই কিছু করা উচিত

বাংলাদেশ যে বৈদেশিক মুদ্রার বিশাল ভান্ডার গড়ে তুলেছে, এর সিংহভাগ অবদানই প্রবাসী শ্রমিকদের। এই প্রেক্ষাপটে কুয়েত থেকে ৩০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। কুয়েত সরকার বলেছে, কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও এসব শ্রমিক সেখানে অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন। তিন মাসের মধ্যে তাঁদের দেশে ফিরে যেতে হবে। বাস্তবেই যদি এমনটা ঘটে, তবে তা শুধু এই ৩০ হাজার শ্রমিক-পরিবারের জীবন-জীবিকার ওপরই আঘাত করবে না, অর্থনীতিতেও ফেলবে নেতিবাচক প্রভাব।
১৪ ডিসেম্বর কুয়েত পার্লামেন্টে মানবাধিকার কমিটির প্রধান অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি তিন মাসের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আইন অমান্য করে যাঁরা কুয়েতে থেকে যাবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সে দেশের সরকার। কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের দাবি, দুর্বল বা অস্তিত্বহীন কোম্পানিতে যাঁরা চাকরি করেন, তাঁরাই সমস্যায় পড়েছেন। এসব কোম্পানিতে চাকরিরত শ্রমিকদের কাজ করার অনুমতিপত্র বা আকামা নেই।
সমস্যাটি পুরোনো। কুয়েত সরকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলো না কেন? এ জন্য দূতাবাসের কর্মকর্তারা কোম্পানির ওপর দায় চাপিয়ে দায়িত্ব শেষ করতে চাইছেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সভাপতি বলেছেন, তিন বছরের চুক্তি করে এসব শ্রমিক কুয়েতে গেলেও ১০-১৫ বছর ধরে সেখানে আছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা পরিবার-পরিজনকে যেমন সাহায্য করছেন, তেমনি অর্থনীতিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন।
এর আগে মালয়েশিয়ার সরকারও সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের ফেরত পাঠানোর জন্য চাপ দিতে থাকে। সৌদি আরবে কর্মরত শ্রমিকদের অনেকে আকামা নবায়ন করতে না পেরে দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। শ্রমিকেরা ফেরত আসছেন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ থেকেও।
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১১-১২ মাসে জনশক্তির নতুন বাজার সৃষ্টি নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। মন্ত্রী-সচিবেরা দৌড়ঝাঁপ করেছেন। কিন্তু জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন কোনো সুসংবাদ নেই। এখন কুয়েতে অবস্থানরত শ্রমিকদের যাতে দেশে ফিরে আসতে না হয়, সে ব্যাপারে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। প্রয়োজনে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়েও সমস্যাটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। যে দেশে সাড়ে চার লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন, সেখানে আরও ৩০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান কঠিন কিছু হবে না। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা। কেবল কুয়েতের বাংলাদেশি শ্রমিকদেরই নয়, অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্বও সরকারের। আশা করি, সরকার শিগগিরই এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

No comments

Powered by Blogger.