পুলিশ যখন ছিনতাইকারী -পুলিশ বাহিনীর ফলপ্রসূ সংস্কার প্রয়োজন

পুলিশ ও র্যাবের বিশেষ তত্পরতার ফলে ছিনতাইকারীদের উপদ্রব যখন কিছুটা কমে এসেছিল, তখন খবর বেরোল, খোদ পুলিশেরই একজন কর্মকর্তা সাদা পোশাকে ছিনতাই করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়েছেন। গণপিটুনির পর গ্রেপ্তার এবং থানা-হাজতে আশ্রয় পাওয়া পুলিশের ওই সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় মোটরসাইকেলযোগে ছিনতাইয়ের ওই অভিযানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন—যাঁরা পালিয়ে বেঁচেছেন—তাঁরাও পুলিশ বিভাগের সদস্য।
এক দিন আগেই সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে, ব্রাসেলস-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক পরামর্শক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী এমন এক দুর্দশায় রয়েছে যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। গত মঙ্গলবারের ওই ঘটনা আইসিজির বক্তব্যের পক্ষে আরেকটি দৃষ্টান্ত যোগ করল বৈকি। আসলেই পুলিশের অবস্থাকে দুরবস্থা বলা ছাড়া অন্য কোনোভাবে বর্ণনা করা যায় না, এবং এ অবস্থা আজকের নতুন নয়। এ নিয়ে অনেক দিন ধরে অনেক আলোচনা, অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে, পুলিশ সংস্কার নামে একটা উদ্যোগ চলেছে প্রায় চার বছর ধরে। কিন্তু পুলিশ বিভাগের উন্নতি হচ্ছে এমন কোনো লক্ষণ নেই। বরং জনগণের সেবার পরিবর্তে হয়রানি ও জবরদস্তির কাজে পুলিশ বিভাগের সদস্যদের উত্সাহ যেন দিন দিন বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে, রাজনীতিক, আমলা ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে পুলিশকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাহলে সেই বাহিনীর সদস্যদের নৈতিকতার মান বাড়বে, না কমবে, সেটা গবেষণা ছাড়াই বলা যায়।
পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের জন্য জাতিসংঘ গত চার বছরে প্রায় এক শ কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু এই সংস্কারের কোনো প্রভাব পুলিশের ওপর পড়েছে এমনটি বলা যাচ্ছে না। কোনো সরকারই পুলিশকে সত্যিকার অর্থে জনগণের সেবকে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়নি; বর্তমান সরকারেরও এ বিষয়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রমাণ মিলছে না। আমাদের মনে হয়, সরকারের উচিত খুব গুরুত্বের সঙ্গে এসব বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার সাধন করা। নইলে করের টাকায় জনগণ এমন পুলিশ বাহিনী কেন পুষবে।

No comments

Powered by Blogger.