আবাহনীরও টাইব্রেকার-ভাগ্য

জয়ের পর আবাহনীর ঘানাইয়ান স্ট্রাইকার শেরিফ
ইনজুরি সময় ছিল তিন মিনিট। ঠিক তৃতীয় মিনিটের খেলা চলছিল। তখন পর্যন্ত ম্যাচে আবাহনীর অগ্রগামিতা ১-০ গোলে। শেষ বাঁশির আগ মুহূর্তে গোল করে ফেলল শেখ রাসেল। ১-১!
তিন দিন আগে একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল আরেক পরাশক্তি মোহামেডান। টাইব্রেকার-ভাগ্যে উতরে গেছে সাদা-কালোরা। পরদিন রহমতগঞ্জকে ট্রাইব্রেকারে হারিয়ে নবাগত ফেনী সকার জায়গা পেয়েছে শেষ চারে। এক দিন বাদেই আবার সেই টাইব্রেকার। এবার ৩-১ ব্যবধানে জিতে সেমিফাইনালে উঠল আবাহনী।
জয়টা রুদ্ধশ্বাস, আর তাতে ৮ বছর পর ফেডারেশন কাপের শিরোপা ঘরে তোলার আশাটা বাঁচিয়ে রাখতে পারল আবাহনী। গ্রুপিং দেখেই পরিষ্কার ছিল, দেশের জনপ্রিয়তম দুই দল আবাহনী-মোহামেডানকে ফাইনালের মঞ্চেই চায় আয়োজকেরা। কাল আবাহনী হেরে গেলে সেই আশায় পড়ত হতাশার আস্তরণ। তবে টাইব্রেকার-ভাগ্যে জিতে সেটি হতে দেয়নি আবাহনী।
গোল খাওয়ার পর টাইব্রেকারে জয়—গোটা ব্যাপারটা মাত্র ১৫ মিনিটেই শেষ। এই পর্বে আবাহনীর যাবতীয় চিন্তা দূর করে দেন শেখ রাসেলের খেলোয়াড়েরাই। যার শুরুটা করেছেন ঘানাইয়ান ডিফেন্ডার আব্বাস। টাইব্রেকারের তাঁর নেওয়া প্রথম শটটিই সাইড পোস্টের অনেক বাইরে। দ্বিতীয় শটে আবদুল্লাহ পারভেজ গোল করলেও মারুফের নেওয়া তৃতীয় শট আটকে দিয়েছেন আবাহনী গোলরক্ষক বিপ্লব। জহিরুল চতুর্থ শট তুলে দিয়েছেন আকাশে। চারটি শটের মাত্র একটি গোল—স্নায়ুর পরীক্ষায় রাসেলের খেলোয়াড়েরা পাস নম্বরও পেলেন না।
ম্যাচে যা-ই ঘটুক, টাইব্রেকারে আবাহনীর খেলোয়াড়েরা ছিলেন ধীরস্থির। সামাদ, শেরিফ তার পর এমানুল। তিনজনই গোল করায় ম্যাচের দাবি অনুযায়ী চতুর্থ শটটি আর নেওয়াই দরকার হয়নি।
৩৩ মিনিটে এগিয়ে যায় আবাহনী। গোলটা ছিল দেখার মতো। তবে গোলদাতা নিয়ে একটু বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। বাঁ দিক দিয়ে রাসেল বক্সে ঢুকে মাইনাস করেন মিডফিল্ডার উজ্জ্বল। প্রেসবক্স থেকে মনে হয়েছে সেই বল ফ্লিক করে জালে ঠেলেছেন শেরিফ দীন মোহাম্মদ। গোল উদ্যাপনও করেছেন নবাগত ঘানাইয়ান স্ট্রাইকার। তবে রেফারি গোল দিয়েছেন উজ্জ্বলের নামে। রেফারির দাবি, শেরিফের পায়ে বল লাগেনি, বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে রাসেল ডিফেন্ডার কামালই নিজেদের জালে পাঠিয়েছেন। শেষ পাসটা যেহেতু উজ্জ্বলের, তাই তাঁকেই দেওয়া হয়েছে গোল!
দ্বিতীয়ার্ধে আবাহনীর চেয়ে ভালো খেলেছে রাসেল। গোল শোধ করার জন্য আবাহনীর ওপর চাপ তৈরি করেছে তারা ক্রমাগত। স্ট্রাইকার রনি-ইউসুফরা চেষ্টা করলেও আবাহনীর রক্ষণ-দেয়ালেই তারা আটকে গেছে। গ্রুপ পর্বের চেয়ে রাসেলের খেলার ধার যথেষ্টই বেশি ছিল এদিন। সিলেট বিয়ানীবাজারের কাছে গ্রুপ পর্বে তিন গোল খাওয়ার ক্ষত শুকানোর পণ করেই হয়তো মাঠে নেমেছিল শেখ রাসেল।
মাঠটা ভালো ছিল। এই মাঠে আবাহনীর কাছে গোছানো ও আক্রমণাত্মক ফুটবল দেখার আশায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ছিল ৬-৭ হাজার দর্শক। কিন্তু সমর্থকেরা হতাশ আবাহনীর খেলায়। তাদের মাঝমাঠ ছিল অগোছাল। একজন নেতা নেই, যিনি খেলাটা তৈরি করবেন। স্ট্রাইকিংয়ে ইব্রাহিমের সঙ্গে তাঁরই স্বদেশি শেরিফ দীন মোহাম্মদ মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেললেন। পায়ের কাজ ভালো, তবে দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগছে তাঁর। আবাহনীর রক্ষণটা ভালোই খেলছিল। তবে ওই রক্ষণের ভুলেই গোল খেতে হয়েছে অন্তিম সময়ে। সামাদ-রজনীর মাঝখান দিয়ে রনিকে বল বের করে দেন মোবারক, সেই বল প্লেসিং করেন রনি। সামাদ বল ক্লিয়ার করতে পারেননি, যার খেসারত ওই গোল।
আবাহনী কোচ অমলেশ সেন ম্যাচের পর মনঃসংযোগের অভাব আর মাঝমাঠের সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করলেন। হারলেও রাসেল কোচ কামাল বাবু খুশিই ছিলেন তাঁর দলের খেলায়।

No comments

Powered by Blogger.