যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আফগান নীতি পুনর্বিবেচনার আহ্বান রাশিয়ার

আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। আফগানিস্তানে দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের দুই সপ্তাহ আগে এ আহ্বান জানাল সাবেক এ বিশ্ব পরাশক্তি।
গত মঙ্গলবার ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বেঙ্গালুরুতে রাশিয়া-ভারত-চীন ত্রিদেশীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, ‘মিত্র প্রতিবেশী দেশ ও সীমান্তবর্তী দেশগুলোতে যা ঘটছে, তা আমরা চুপচাপ বসে দেখতে পারি না। তাই আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আমাদের যৌথ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সেখানকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার এবং মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
এ সংবাদ সম্মেলনের আগে স্থানীয় একটি হোটেলে লাভরভ, ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণা ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াং জাইচি দুই ঘণ্টার একটি বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। আফগানিস্তানের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন এবং সেখানে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুত সহায়তা বাস্তবায়নের জন্য উন্নত বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা।
আফগান যুদ্ধে সেনা পাঠাতে মস্কো আগেই অনাগ্রহের কথা জানিয়েছিল। তবে চলতি মাসের শুরুতে আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য রাশিয়ার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে ন্যাটো। লাভরভের মতে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও রাশিয়া এবং আঞ্চলিক শক্তি ভারত ও চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সময় এসেছে।
লাভরভের এ মন্তব্যের বিশ্লেষণে ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেন, এর মাধ্যমে ওয়াশিংটনকে তিনি এ বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন যে পাক-আফগান পরিস্থিতি সামাল দিতে আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া তাঁদের ঠিক হবে না। এদিকে ত্রিপক্ষীয় এ বৈঠকের আগে চীনের রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থাও ইঙ্গিত দিয়েছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সংকট সমাধানে বেইজিংয়ের কার্যকর ভূমিকা নেওয়া উচিত। তবে আফগানিস্তানে পাকিস্তানের স্বার্থ-বিরোধী কোনো পদক্ষেপ নেবেন না তাঁরা। পাকিস্তানও আফগান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সম্প্রতি ভারতসহ আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। ওদিকে আফগান পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনো পুরোনো মিত্র পাকিস্তানের সঙ্গেই কাজ করতে আগ্রহী।
লাভরভের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আফগানিস্তানে ভারতের স্বার্থ সমুন্নত রাখা এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর সেখানে অবস্থানের ক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ ত্রিপক্ষীয় এ বৈঠকে ইরানের পরমাণু সংকট নিয়ে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে আলোচনার বিষয়টিও স্থান পায়। আগামী ৭ নভেম্বর আফগানিস্তানে দ্বিতীয় দফা নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তাঁরা।

No comments

Powered by Blogger.