সিনওয়ারের মৃত্যু হামাসের জন্য মারাত্মক আঘাত, তবে যুদ্ধের শেষ নয়! -বিবিসির পর্যবেক্ষণ
তবে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষ বাহিনীর পরিকল্পিত কোনো অভিযানে নিহত হননি সিনওয়ার। দক্ষিণ গাজার রাফা অঞ্চলে ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে একটি সম্মুখ সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে তোলা কয়েকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, যুদ্ধের পোশাক পরিহিত সিনওয়ার, ট্যাঙ্কের গোলায় আঘাতপ্রাপ্ত একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার সেনাদের প্রশংসা করেছেন। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, সিনওয়ারকে হত্যা করা যত বড় বিজয়ই হোক না কেন, তা যুদ্ধের শেষ নয়।
নেতানিয়াহু বলেছেন, আজ আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই যারা আমাদের ক্ষতি করে তাদের পরিণতি কী হয়। আমরা বিশ্বকে মিথ্যার উপর সত্যের বিজয় দেখিয়ে দিয়েছি।
ভাষণে নেতানিয়াহু তার সেনাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, বন্ধুরা আমাদের যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। যদিও এ বিষয়টি কঠিন কেননা এর জন্য আমাদের অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে। সামনে আরও কঠিন বাধা রয়েছে। এক্ষেত্রে নেতানিয়াহু তার সেনাদের ধৈর্য, ঐক্য, সাহস নিয়ে অবিচল থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, সৃষ্টিকর্তার সাহায্যে আমরা একসঙ্গে লড়াই করব এবং একইসঙ্গে বিজয় অর্জন করব।
নেতানিয়াহু এবং গাজা যুদ্ধ সমর্থনকারী ইসরাইলিরা সিনওয়ারের হত্যাকে একটি অপ্রতিরোধ্য বিজয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কেননা নেতানিয়াহু বার বার বলেছেন তিনি হামাসকে রাজনৈতিক এবং সামরিকভাবে ধ্বংস করে জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে চান। যার দরুণ তিনি গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ আগ্রাসন চালিয়েছেন।
উপত্যকাটিতে গত এক বছরে ৪২ হাজারের বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগ নারী এবং শিশু। পুরো গাজাকে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে নেতানিয়াহুর বাহিনী। এর মাধ্যমে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কোনো লক্ষ্যই অর্জিত হয়নি।
না হামাস ধ্বংস হয়েছে না জিম্মিদের মুক্তি হয়েছে। সংগঠনটি এখনও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। জিম্মিরাও এখনও বন্দী রয়েছে। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে প্রায়ই ইসরাইলি সেনাদের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সিনাওয়ারকে হত্যা করা ইসরাইলের জন্য বিজয় ততক্ষণ, যতক্ষণ পর্যন্ত না নেতানিয়াহু দাবি করছেন যে যুদ্ধের অন্যান্য লক্ষ্যগুলোও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু নেতানিয়াহু বলেছেন যুদ্ধ চলবে।
কে এই সিনওয়ার
ইয়াহিয়া সিনওয়ার ১৯৬২ সালে গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের একটি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে মিশর-ইসরাইলের সংঘাতের সময় তার বয়স ছিল পাঁচ বছর। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল যখন ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডের একটি অংশ জয় করে তখন সেখান থেকে প্রায় ৭ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে সিনওয়ারের পরিবারও ছিল। তার পরিবার আসকালান নামক শহর থেকে পালিয়ে গাজার উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকায় বসতি স্থাপন করে।
২০০০ সালের দিকে ইসরাইলের ফিলিস্তিনি এক এজেন্টকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন সিনওয়ার। এর পর তিনি জেলে যান। জীবনের ২২টি বছর তিনি জেলে কাটান। জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় তিনি হিব্রু ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন। জেলে থেকেই সিনওয়ার ইসরাইলি বাহিনী সম্পর্কে অধ্যয়ন করেন। কীভাবে তাদের সঙ্গে লড়াই করবেন তা নিয়ে কাজ করেছিলেন। ইসরাইলের জেলে বন্দী থাকার অর্থই হচ্ছে সিনওয়ারের দাঁতের নমুনা এবং তার ডিএনএ-এর একটি নমুনা তাদের কাছে ছিল। মূলত এর মাধ্যমেই ইসরাইল লাশ শনাক্ত করেছে বলে দাবি করেছে।
২০১১ সালে সিনওয়ারকে মুক্তি দেয়া হয়। সেসময় তার সাথে আরও প্রায় হাজার খানেক ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেয়া হয়েছিল। ধারণা করা হয় গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল সিনওয়ার। ওই দিন তারা ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তে ফেলে দিয়েছিল ইসরাইলকে। গত এক বছরেও হামাসের সেই হামলার রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেনি ইসরাইল।
No comments