‘হাস্যোজ্জ্বল’ ইরাবতি ডলফিন বিলুপ্তির পথে
সাউথ এশিয়ান মনিটর, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭: দুর্বৃত্তচক্রের
লোভের কবলে পরে বিলুপ্ত হতে চলেছে হাস্যোজ্জ্বল চেহারা জলজ প্রাণী নামে
পরিচিত ‘ইরাবতি ডলাফিন’। একসময় জেলেরা এসব ডলফিন দিয়ে মাছ তাদের জালের
মধ্যে তাড়িয়ে আনতো। দুবৃত্তরা ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে শিকার করছে এসব প্রাণী। এ
কাজে তারা গাড়ি’র ব্যাটারি ব্যবহার করছে। সাম্প্রতিক সময়ে রেকর্ড সংখ্যক
ইরাবতি ডলফিন হত্যা করা হয়েছে। অবৈধ এই তৎপরতা ডলফিনকে শুধু বিলুপ্তির
মুখেই ঠেলে দেয়নি, তা দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ার পর্যটন শিল্পের জন্যও মারাত্মক
হুমকি সৃষ্টি করেছে।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়া জুড়ে নদী, হ্রদ ও সাগর উপকূলে একসময় প্রচুর ইরাবতি ডলফিনের দেখা পাওয়া যেতো। উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে দক্ষিণে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃর্ণ অঞ্চল এই ডলফিনের আবাস। মিয়ানমারের নদীগুলোতে থাকা ডলফিনগুলোর সঙ্গে স্থানীয় জেলেদের একধরনের সখ্যতা রয়েছে। প্রজন্মের প্রজন্ম ধরে গড়ে ওঠা এই সখ্যতা নিয়ে স্থানীয় লোককাহিনীতে অনেক গল্পও লেখা হয়েছে। স্থানীয় জেলেদের ডাকে ডলফিনগুলো সাড়া দেয়। গলায় বিশেষ ধরনের শব্দ করে, দাঁড় দিয়ে পানির ঝাপটা দিয়ে, নৌকার পাশে পানিতে হালকা আঘাত করে তারা ডলফিনকে ডাকে। ডলফিনগুলো প্রথমে তাদের পাখনা ঝাড়া দিয়ে জানান দেয় যে মাছ শিকারে সাহায্যের জন্য তারা প্রস্তুত। এরপর প্রাণীগুলো মাছের ঝাঁক তাড়া করে জেলেদের নৌকার কাছাকাছি নিয়ে আসে। পেতে রাখা জালে ওই মাছ ধরা পড়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে রেকর্ডসংখ্যক ইরাবতি ডলফিন হত্যার পর ২০১৬ সালের অক্টোবরে বিশ্ব বন্যপ্রাণী রক্ষা তহবিল (ডব্লিউডব্লিউএফ) লাওসে এই প্রাণী ‘কার্যত বিলুপ্ত’ বলে ঘোষণা করে। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ জরিপে মাত্র তিনটি ডলফিনের দেখা মেলে। পরিস্থিতি পরিবর্তনের আশা ক্ষীণ বলে মনে করে ডব্লিউডব্লিউএফ। মিয়ানমার কর্মকর্তাদের ধারণা সেখানে মাত্র ৬২টি ইরাবতি ডলফিন এখনো টিকে আছে। গত বছর তিনটি ডলফিনের মৃত্যু ঘটার কথা এএফপি’কে জানান মিয়ানমারের মৎস্য বিভাগের এক কর্মকর্তা। এর জন্য নদীর উজানে কাচিন রাজ্যের খনিগুলোকে দায়ি করে তিনি।
কৃষি সার ব্যবহারের ফলেও নদীর পানি বিষাক্ত হচ্ছে। কিন্তু জেলেরা বলছেন, জলজ প্রাণীকূলের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জক হলো দুর্বৃত্ত চক্রগুলো। এরা সহজে টাকা কামানোর জন্য এসব প্রাণী হত্যা করছে। এক সময় কিছু জেলে বাঁশের মাথায় ছোট ছোট ব্যাটারি বসিয়ে এমনভাবে তার যুক্ত করতো যেন তা দিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে কাছাকাছি থাকা মাছগুলো শিকার করা যায়। তাদের কাছে এ পদ্ধতি সহজ ও বেশ কার্যকর মনে হয়। স্থানীয়রা বলছেন, দুর্বৃত্তরা এখন এ কাজে গাড়ির ব্যাটারি, উচ্চ-ভোল্টেজের ট্রান্সফরমার এবং টানা জাল ব্যবহার করছে।
একজন জেলে বার্তা সংস্থাকে বলেন, এই শক খেয়ে একটি বড় ষাড়ও আছড়ে পড়তে পারে। মিয়ানমারের মান্দালয় রাজ্যে এই ইলেক্ট্রফিসিং নিষিদ্ধ। এর জন্য তিন বছরের জেল ও দু’লাখ কিয়াত (স্থানীয় মুদ্রা) জরিমানার বিধান রয়েছে। এরপরও দুর্বৃত্ত চক্রগুলোকে থামানো যাচ্ছে না বলে প্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন। এরা স্থানীয় অধিবাসীদের ওপরও হামলা করে। তাই ভয়ে কোন গ্রামবাসী ইলেক্ট্রোফিসিং কারা করে সে বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে চান না।
ইরাবতি নদীর দু’তীরে বসবাসকারি জেলেরা আক্ষেপ করে বলেন, এসব ডলফিন বিলুপ্ত হলে তা শুধু ওই অঞ্চলের অতীত ঐতিহ্যকেই ধ্বংস করবে না, এলাকাবাসীর ভবিষ্যতকেও হুমকির মুখে ঠেলে দেবে। মৎস্যভান্ডার ফুরিয়ে গেলেও অন্তত ইকোটুরিজম থেকে কিছু আয়ের আশা থাকে।
মিয়ানমারে পাঁচ বছর আগে সামরিক শাসন অবসানের পর থেকে পর্যটকদের আগমন সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৯ সাল নাগাদ দেশটিতে বছরে ৭৫ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছেন।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সোসাইটি’র ইকোটুরিজম ম্যানেজার থান্ট জিন পর্যটকদের ডলফিন দেখানোর জন্য সেখানে কর্মসূচি চালু করেছে। এতে স্থানীয়রা বন্যপ্রাণী ও সেগুলোর বাসস্থান সংরক্ষণেও উৎসাহিত হবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি ইরাবতির বিভিন্ন গ্রামের মানুষকে রান্না, আতিথেয়তা ও পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, এলাকাবাসীর জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যবসা। কিন্তু অনেক জেলের আশঙ্কা ইলেক্ট্রোফিসিং চক্র ইতোমধ্যে মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে এতদিনের বিশেষ বন্ধনটি নষ্ট করে দিয়েছে।
থিয়েন সান মিন নামে এক জেলে বলেন, আমরা যেভাবেই ডাকতাম ইরাবতি ডলফিন সেই ডাকে সাড়া দিতো। তারা এখন আমাদের ডাকে কোনভাবেই সাড়া দেয় না। আগামীতে হয়তো দূর থেকে দেখেই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়া জুড়ে নদী, হ্রদ ও সাগর উপকূলে একসময় প্রচুর ইরাবতি ডলফিনের দেখা পাওয়া যেতো। উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে দক্ষিণে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃর্ণ অঞ্চল এই ডলফিনের আবাস। মিয়ানমারের নদীগুলোতে থাকা ডলফিনগুলোর সঙ্গে স্থানীয় জেলেদের একধরনের সখ্যতা রয়েছে। প্রজন্মের প্রজন্ম ধরে গড়ে ওঠা এই সখ্যতা নিয়ে স্থানীয় লোককাহিনীতে অনেক গল্পও লেখা হয়েছে। স্থানীয় জেলেদের ডাকে ডলফিনগুলো সাড়া দেয়। গলায় বিশেষ ধরনের শব্দ করে, দাঁড় দিয়ে পানির ঝাপটা দিয়ে, নৌকার পাশে পানিতে হালকা আঘাত করে তারা ডলফিনকে ডাকে। ডলফিনগুলো প্রথমে তাদের পাখনা ঝাড়া দিয়ে জানান দেয় যে মাছ শিকারে সাহায্যের জন্য তারা প্রস্তুত। এরপর প্রাণীগুলো মাছের ঝাঁক তাড়া করে জেলেদের নৌকার কাছাকাছি নিয়ে আসে। পেতে রাখা জালে ওই মাছ ধরা পড়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে রেকর্ডসংখ্যক ইরাবতি ডলফিন হত্যার পর ২০১৬ সালের অক্টোবরে বিশ্ব বন্যপ্রাণী রক্ষা তহবিল (ডব্লিউডব্লিউএফ) লাওসে এই প্রাণী ‘কার্যত বিলুপ্ত’ বলে ঘোষণা করে। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ জরিপে মাত্র তিনটি ডলফিনের দেখা মেলে। পরিস্থিতি পরিবর্তনের আশা ক্ষীণ বলে মনে করে ডব্লিউডব্লিউএফ। মিয়ানমার কর্মকর্তাদের ধারণা সেখানে মাত্র ৬২টি ইরাবতি ডলফিন এখনো টিকে আছে। গত বছর তিনটি ডলফিনের মৃত্যু ঘটার কথা এএফপি’কে জানান মিয়ানমারের মৎস্য বিভাগের এক কর্মকর্তা। এর জন্য নদীর উজানে কাচিন রাজ্যের খনিগুলোকে দায়ি করে তিনি।
কৃষি সার ব্যবহারের ফলেও নদীর পানি বিষাক্ত হচ্ছে। কিন্তু জেলেরা বলছেন, জলজ প্রাণীকূলের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জক হলো দুর্বৃত্ত চক্রগুলো। এরা সহজে টাকা কামানোর জন্য এসব প্রাণী হত্যা করছে। এক সময় কিছু জেলে বাঁশের মাথায় ছোট ছোট ব্যাটারি বসিয়ে এমনভাবে তার যুক্ত করতো যেন তা দিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে কাছাকাছি থাকা মাছগুলো শিকার করা যায়। তাদের কাছে এ পদ্ধতি সহজ ও বেশ কার্যকর মনে হয়। স্থানীয়রা বলছেন, দুর্বৃত্তরা এখন এ কাজে গাড়ির ব্যাটারি, উচ্চ-ভোল্টেজের ট্রান্সফরমার এবং টানা জাল ব্যবহার করছে।
একজন জেলে বার্তা সংস্থাকে বলেন, এই শক খেয়ে একটি বড় ষাড়ও আছড়ে পড়তে পারে। মিয়ানমারের মান্দালয় রাজ্যে এই ইলেক্ট্রফিসিং নিষিদ্ধ। এর জন্য তিন বছরের জেল ও দু’লাখ কিয়াত (স্থানীয় মুদ্রা) জরিমানার বিধান রয়েছে। এরপরও দুর্বৃত্ত চক্রগুলোকে থামানো যাচ্ছে না বলে প্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন। এরা স্থানীয় অধিবাসীদের ওপরও হামলা করে। তাই ভয়ে কোন গ্রামবাসী ইলেক্ট্রোফিসিং কারা করে সে বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে চান না।
ইরাবতি নদীর দু’তীরে বসবাসকারি জেলেরা আক্ষেপ করে বলেন, এসব ডলফিন বিলুপ্ত হলে তা শুধু ওই অঞ্চলের অতীত ঐতিহ্যকেই ধ্বংস করবে না, এলাকাবাসীর ভবিষ্যতকেও হুমকির মুখে ঠেলে দেবে। মৎস্যভান্ডার ফুরিয়ে গেলেও অন্তত ইকোটুরিজম থেকে কিছু আয়ের আশা থাকে।
মিয়ানমারে পাঁচ বছর আগে সামরিক শাসন অবসানের পর থেকে পর্যটকদের আগমন সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৯ সাল নাগাদ দেশটিতে বছরে ৭৫ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছেন।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সোসাইটি’র ইকোটুরিজম ম্যানেজার থান্ট জিন পর্যটকদের ডলফিন দেখানোর জন্য সেখানে কর্মসূচি চালু করেছে। এতে স্থানীয়রা বন্যপ্রাণী ও সেগুলোর বাসস্থান সংরক্ষণেও উৎসাহিত হবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি ইরাবতির বিভিন্ন গ্রামের মানুষকে রান্না, আতিথেয়তা ও পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, এলাকাবাসীর জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যবসা। কিন্তু অনেক জেলের আশঙ্কা ইলেক্ট্রোফিসিং চক্র ইতোমধ্যে মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে এতদিনের বিশেষ বন্ধনটি নষ্ট করে দিয়েছে।
থিয়েন সান মিন নামে এক জেলে বলেন, আমরা যেভাবেই ডাকতাম ইরাবতি ডলফিন সেই ডাকে সাড়া দিতো। তারা এখন আমাদের ডাকে কোনভাবেই সাড়া দেয় না। আগামীতে হয়তো দূর থেকে দেখেই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
No comments