অর্থমন্ত্রী বেঁচে থাকলে আরো বাজেট দেবেন : তোফায়েল

প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, এ বাজেট বৈষম্যহীন সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ার পথকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। তারা বলেন, বর্তমান সরকার গত ৯ বছর সফলভাবে বিশাল আকারে ৮টি বাজেট বাস্তবায়ন করে দেশের সকল খাতে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে। বিশেষ করে দেশের সব এলাকা এবং শহর আর গ্রামীণ উন্নয়নে সমতা আনার চেষ্টায়ও অনেকাংশে সফল হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ সকাল ১০টা ৫৭মিনিটে অধিবেশনের শুরুতে মন্ত্রীদের জন্য প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-উত্তর টেবিলে উপস্থাপন শেষে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু হয়। গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট আলোচনার ১০ম দিনে আজ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সরকারি দলের ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভু, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, ড. হাছান মাহমুদ, বজলুল হক হারুন, একাব্বর হোসেন, বেগম ওয়াসিকা আয়শা খান, মমতাজ বেগম, জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী ও ঊষাতন তালুকদার আলোচনায় অংশ নেন। বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর বাজেট বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বেঁচে থাকলে এবং আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে তিনি আরও বাজেট দেবেন। কারণ তার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আস্থা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। জিয়া উদ্দিন বাবলু যে ভাষায় অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন আমি এ ভাষা আশা করিনাই। সমালোচনা করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু সমালোচনা হবে গঠনমূলক। যখন বয়স নিয়ে কথা বলেন, আপনাদের নেতা এরশাদের বয়সের কথা চিন্তা করেন না? যার নেতৃত্বে আপনি দল করেন। তার বয়সতো অর্থমন্ত্রীর চেয়ে ৫ বছর বেশি। বাবলু কি করে ভুলে গেল তার (এরশাদ) বয়স ৮৬ এর বেশী? আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রীর চেয়ে বেশী। বাবলু যদি বলত, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের অনেক বয়স হয়েছে, আপনি আগে পদত্যাগ করেন। তাহলে কথাটা খুব ভাল ছিল।’ তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির সময়ে ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে দেশের রাজস্ব আয় ছিল ৫ হাজার ২৯২ কোটি টাকা, বিএনপি আমলে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে রাজস্ব আয় দাঁড়ায় ৩৭ হাজার কোটি টাকায় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের সময়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শক্রমে প্রস্তাবিত বাজেট যখন পাস হবে তখন এটি সর্বকালের সেরা বাজেট হিসেবে জনগণের কাছে প্রশংসিত হবে। বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রধান্য দিয়ে সর্বোচ্চ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ১৪৫টি খাতকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ৪৩ শতাংশ থেকে ২৩ শতাংশে নেমে এসেছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদে এই হার ১৩ শতাংশে এবং ২০৩০ সালে হতদরিদ্র্য ৩ শতাংশে নিচে নেমে আসবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ব্যবসা বান্ধব সরকার। ২০০১ সালে রপ্তানী ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার, বিএনপি ৫ বছরে বাড়িয়েছে ৩ বিলিয়ন ডলার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বেড়েছে ৪ বিলিয়ন ডলার, বর্তমানে তা ৩৪ বিলিয়ন ডলার এবং এবার তা ৩৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা যায়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে রিজার্ভ ছিল ৪ বিলিয়ন ডলার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রাম-শহরের আয় বৈষম্য কমিয়ে সমতাভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে বলেন, আয় বৈষম্য না কমানো গেলে ধনী-দারিদ্র্যের বিভাজন বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, রাজস্ব আয় বাড়াতে সাধারণ মানুষকে আঘাত না করে করের পরিধি বাড়িয়ে এনবিআরকে আরও দক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। বাজেটের টাকা সঙ্কুলানের জন্য ঢালাওভাবে ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ না করে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার পরামর্শ দিয়ে তিনি ব্যাংক আমানতের ওপর প্রস্তাবিত আবগারী শুল্ক প্রত্যাহার, মেডিটেশনকে ভ্যাট অব্যাহতি ও সঞ্চয়পত্রের সুদ না কমানোর আহবান জানান। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী বলেন, ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও যাত্রী চলাচল বৃদ্ধির কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সম্প্রসারণের কাজ বাস্তবায়নে জন্যে জাইকার সাথে মন্ত্রণালয়ের একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ইতোমধ্যে পরামর্শক কোম্পানী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার বিমান বন্দরকে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে রূপ দেয়া হয়েছে। এই বিমান বন্দরের রানওয়েকে ৯ হাজার ফুটে উন্নীত করার কাজ চলছে। কক্সবাজার বিমান বন্দরে ‘আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্প কাজ শেষ হলে কক্সবাজার বিমান বন্দর আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হিসেবে কাজ করবে। বাগেরহাট মংলা বন্দরের কাছাকাছি খানজাহান আলী বিমান বন্দর নির্মাণ কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া ৪শ’ ৯১ কোটি ৯৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ব্যয়ে সিলেট আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের বিদ্যমান রানওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ও নির্দেশনা অনুযায়ী এভিয়েশন সেক্টরকে রিজিওনাল হাব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নির্মাণের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জায়গা নির্বাচন সংক্রান্ত সমীক্ষা কাজ সমাপ্তির পথে। আগামী জাতীয় নির্বাচন জামায়াত দলীয়ভাবে নির্বাচনে আসতে না পারলেও তারা বিএনপির ছত্রছায়ায় নির্বাচনে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে উল্লেখ করে রাশেদ খান মেনন বলেন, শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে না আসলে এটা হবে তাদের জন্য আরেকটি বড় ভুল। এভাবে বিএনপি এক সময় মুসলিম লীগে পরিণত হয়ে যাবে। বাজেটকে সাফল্যের একটি মাইল ফলক উল্লেখ করে সরকারি দলের সদস্যরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব ও সমোপযোগী সিদ্ধান্তের ফলে দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন ২০১৫ সালের মধ্যে ২৩ ভাগে নেমে এসেছে। ধনী-দরিদ্র্যের আয় বৈষম্য কমে এসেছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য কমেছে। ১৪৭টি খাত চিহ্নিত করে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে সরকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষের আয় অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রার মানও বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। তারা বলেন, সম্প্রতি কানাডার ফেডারেল কোর্টে বিএনপির এক কর্মী রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে গেলে কোর্ট বলেছে, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। তাদের মিত্র জামায়াত একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। বিএনপির অনেক নেতা ও তাদের মিত্র জামায়াত দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। জামায়াত বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেশের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। বাসস

No comments

Powered by Blogger.