ইসির সঙ্গে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের বৈঠক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কী হবে তা নির্বাচন কমিশন ও দাতা সংস্থাগুলোর বিষয় নয়, সরকারের বিষয়। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ‘নির্বাচন ভবনে’ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০ জন কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াটকিনস। সিইসি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো ভূমিকা আছে কী না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা তাদেরকে বলেছি, নির্বাচনকালীন সরকার কীভাবে হবে তা সরকারের সিদ্ধান্ত। এখানে নির্বাচন কমিশনের কোনো ভূমিকা নেই। অপরদিকে রবার্ট ওয়াটকিনস বলেন, এটা আমাদের বিষয় নয়। এটা সরকারের বিষয়। আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে। আমরা মনে করি, কমিশনের নির্দিষ্ট আইন আছে, তা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। নির্বাচন ভবনে বেলা ১১টা থেকে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে সিইসির নেতৃত্বে চার কমিশনার, ইসি সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। অপরদিকে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াটকিনসের নেতৃত্বে প্রায় ৩০টি দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ফ্রান্স, ইইউ, জার্মানি, ভারত, জাপান, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেন ও তুরস্কের প্রতিনিধিরা। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ কমিশনের আমলে এই প্রথম বিপুল সংখ্যক কূটনীতিক একসঙ্গে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করল। বৈঠকে ইসির কার্যক্রম ও আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। তবে ইলেকট্রুনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। মিটিংয়ে অংশ নেয়া একজন কূটনীতিক মঙ্গলবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, সভায় সিইসি আমাদের জানিয়েছেন জুলাইয়ের মাঝামাঝি নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে।
কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে নির্বাচনে সহায়তা দিতে হবে কী না? জবাবে সিইসি জানিয়েছেন, নির্বাচনে কী ধরনের সহায়তা করতে চান তার তালিকা দেন। সিইসির এই আহ্বান অনুসারে, জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি কমিশনকে কী ধরনের সহায়তা করা যায় তার তালিকা দেবেন। কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় নির্বাচনে সহিংসতা বন্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে। জবাবে সিইসি জানিয়েছেন, সহিংসতা বন্ধে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। নির্বাচনের ২-১ মাস আগে সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হবে। বৈঠক শেষে প্রথমবারের মতো সিইসি ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন। প্রথমে সিইসি বলেন, তাদের জানিয়েছি কীভাবে আগামী সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে চাই, আমাদের পরিকল্পনা কী। তাদের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে আমরা বলেছি, সীমানা পুনর্নির্ধারণ কীভাবে করা যেতে পারে, কিছু আইন-কানুনের পরিবর্তন হতে পারে, ভোটার হালনাগাদ করার ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেব, ভোটার কেন্দ্র নির্ধারণ কখন ও কীভাবে করব। কমিশনের দায়িত্ব সম্পর্কেও তাদেরকে বলেছি। এ পর্যন্ত কমিশন জাতীয় সংসদের ৩৪২টিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার কথা বলেছি। সিইসি বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার ব্যাপারে কমিশনের কী কী সামর্থ্য আছে- তা জানতে চেয়েছেন তারা। আমরা বলেছি, আমাদের আইনি সামর্থ্য আছে। নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত শক্তিশালী। নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা আছে। সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করলে কমিশনের পক্ষে ভালো ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। আমাদের সময়ে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক হয়নি। তিনি বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন কী না তা জানতে চেয়েছে। আমি বলেছি, জাতিসংঘ, বিভিন্ন দূতাবাস ও হাইকমিশনের মাধ্যমে যারা আসবেন তারা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। তারা জানতে চেয়েছেন আমরা নির্বাচনে সহযোগিতা চাই কী না। জবাবে আমরা বলেছি, কারিগরি সহযোগিতা চাইব। সেটা ইউএনডিপির মাধ্যমে হলে ভালো হয়। ইউএনডিপি আমাদের বলেছে, তারা চাহিদা পেলে তা পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে। আমরা বলেছি, ভোটের সময়ে পাবলিসিটির বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারে, ভোটার আইডি কার্ড, আইরিশ ও ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার কেনার বিষয়ে তাদের সহযোগিতা দরকার হবে। মেশিন না থাকায় স্মার্টকার্ড বিতরণে গতি কমে গেছে। বিষয়টি তাদেরকে বলেছি, তারা যদি আগ্রহ দেখায় তাহলে তাদের সহযোগিতা গ্রহণ করব। জাতীয় সংসদ সামনে রেখে আইনে বড় পরিবর্তন আসছে কী না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনও তা বলার সময় আসেনি। তবে কিছু বলতে পারি, যেমন সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের আইন বাংলায় রূপান্তর হবে। সেখানে বলা আছে, জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারিত হবে। আমরা আইনে পরিবর্তন আনতে চাই, শুধু জনসংখ্যা নয়, ভোটারের সংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা। এছাড়া শহরাঞ্চলের জনসংখ্যা বেড়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করব আইনের মাধ্যমে এমন কোনো উপায় বের করা যায় কী না- শহরের আসন না বাড়িয়ে গ্রামের আসন ঠিক রাখা। এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ইভিএমের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়েও কথা হয়নি। বিদ্যমান যে ব্যবস্থা আছে তাতেই আমরা থাকতে চাচ্ছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচন পরিচালনার জন্য স্মার্টকার্ড না হলেও চলবে। লেমিনেটেড কার্ড দিয়েও ভোট দেয়া যাবে। নির্বাচনের আগে স্মার্টকার্ড দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সে ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। বিদ্যমান আইনে আগেও খারাপ নির্বাচনের দৃষ্টান্ত রয়েছে, একই আইন দিয়ে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব কী না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আগের পরিস্থিতি কী ছিল তা এই মুহূর্তে ব্যাখ্যা করতে পারব না। তবে এটা বলেছি, এই কমিশনের সময়ে ভালো নির্বাচন হয়েছে। সবার অংশগ্রহণ না হলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু ভোট করা কঠিন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। পরে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াটকিনস বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমাদের অনেক বছরের সম্পর্ক। আমরা নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার জন্য সব ধরনের কারিগরি সহায়তা করতে চাই। সবার অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সুন্দর নির্বাচন প্রত্যাশা করি।

No comments

Powered by Blogger.