ওয়াশিংটন-পিয়ংইয়ং সম্পর্কে ফের উত্তেজনা

উত্তর কোরিয়ার কারাগারে ১৭ মাস আটক থাকার পর দেশে ফেরার এক সপ্তাহের মাথায় মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ওটো ওয়ার্মবিয়ারের। কোমায় থাকা অবস্থায় গত সপ্তাহে মুক্তি পান ওই শিক্ষার্থী। দেশে ফেরার পর সিনসিনাটির একটি হাসপাতালে ছিলেন ২২ বছর বয়সী এই তরুণ। তার পরিবার সোমবার দুপুরে ওয়ার্মবিয়ারের মৃত্যুর খবর জানায়। তার মৃত্যুর জন্য পিয়ংইয়ংয়ের ‘বর্বর সরকারকে’ দায়ী করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর জন ম্যাককেইন বলেন, উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন প্রশাসন তাকে হত্যা করেছে। খবর বিবিসি ও সিএনএনের। ওয়ার্মবিয়ারের মা-বাবা জানান, কোমায় থাকা অবস্থায় তাকে তারা পেয়েছেন। সে সময় তাদের হাতে ছেলেকে ভালো করার আর কোনো উপায় ছিল না। সিনসিনাটি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, মস্তিষ্কে বড় ধরনের আঘাতের কারণে ওয়ার্মবিয়ার কোমায় ছিলেন। ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ওয়ার্মবিয়ার একটি পর্যটক দলের সঙ্গে উত্তর কোরিয়া গিয়েছিলেন। সেখানে হোটেল থেকে একটি প্রোপাগান্ডা পোস্টার চুরির অভিযোগে ২০১৬ সালের মার্চে তাকে ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় উত্তর কোরিয়ার একটি আদালত। উত্তর কোরিয়া কর্তৃপক্ষ ‘মানবিক কারণে’ মুক্তি দেয়ার পর গত ১৩ জুন তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো হয়। তখন জানা যায়, প্রায় এক বছর ধরে কোমায় রয়েছেন ওয়ার্মবিয়ার। উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে ওয়ার্মবিয়ার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে একটি ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়েছিল। তারপর থেকেই তিনি কোমায় চলে যান। কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, উত্তর কোরিয়ায় নির্মম নির্যাতনের কারণেই তাদের ছেলের এই পরিণতি। যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরাও বলেছেন, খাদ্যে বিষক্রিয়ার কোনো লক্ষণ ওয়ার্মবিয়ারের শরীরে তারা পাননি। বরং তার মস্তিষ্কের কোষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। উত্তর কোরিয়ায় বন্দিদশায় থাকাকালে ওটোর কী চিকিৎসা হয়েছিল, তা নিয়েও রহস্য রয়েছে। ওয়ার্মবিয়ারের মৃত্যুর পর এক বিবৃতিতে শোক প্রকাশের পাশাপাশি আবারও উত্তর কোরিয়ার সমালোচনা করেন ট্রাম্প।
সোমবার হোয়াইট হাউসে টেক সিইওদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার বর্বর শাসক এ হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। আইনের শাসন আর মানবাধিকারের প্রতি যাদের ন্যূনতম শ্রদ্ধা নেই, তাদের হাতে নিরপরাধ মানুষের এমন পরিণতি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করেছে ওয়ার্মবিয়ারের মৃত্যু। পরে এক বিবৃতিতে তিনি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার শাসকরা প্রচলিত আইনের শাসন ও মানবাধিকার মানেন না। তাদের বর্বরতার সর্বশেষ উদাহরণ ওয়ার্মবিয়ারের মৃত্যু। দেশটিতে আটক মার্কিন নাগরিকদের মুক্তির বিষয়ে এখন প্রশাসন জোরালো অবস্থান নেবে। ওয়ার্মবিয়ারকে মুক্তিতে ভূমিকা রাখা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেন, অন্যায়ভাবে তাকে আটক করে রাখার জন্য দায়ী উত্তর কোরিয়া। এবার তার মৃত্যুতে পিয়ংইয়ংয়ের প্রতি কঠোর হওয়ার পরিস্থিতি আরও জোরালো হলো। মার্কিন সিনেটর জন ম্যাককেইন ওয়ার্মবিয়ারের মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দুঃখজনক। আমেরিকার একজন নাগরিককে উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন প্রশাসন হত্যা করেছে।

No comments

Powered by Blogger.