সালাহ উদ্দিনকে সিঙ্গাপুরে নিতে চান স্ত্রী- অন্য দেশে পাঠাতে আইনি জটিলতা by রাহীদ এজাজ

শিলংয়ে সালাহ উদ্দিন আহমদ
বিএনপির নেতা সালাহ উদ্দিন আহমদকে চিকিৎসার জন্য শিলং থেকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে চান তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমদ। তবে মেঘালয় রাজ্যে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা থাকায় তা সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তিনি হয়তো শিলংয়ের বাইরে যাওয়ার অনুমতি পাবেন না।
এখানকার সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা, আইনজীবী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তাঁরা বলেন, বিনা পাসপোর্টে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে ফরেনারস অ্যাক্ট, ৪৬ অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বাইরে পাঠানোর সুযোগ নেই।
হাসিনা আহমদ গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো স্বামীর সঙ্গে সিভিল হাসপাতালে দেখা করেন। হাসিনা আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, সিঙ্গাপুরের মতো তৃতীয় কোনো দেশে তিনি সালাহ উদ্দিন আহমদের চিকিৎসা করাতে চান। কারণ, ২০ বছর ধরে সেখানে তাঁর চিকিৎসা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গতকালও সালাহ উদ্দিনের কিছু স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হয়। তাঁর কিডনিতে পাথর পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানান চিকিৎসক ডি জি গোস্বামী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন আহমদকে দেখতে গিয়েছি। তাঁর চর্মরোগের বিষয়টি দেখতে আমার সহকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি। বুধবার অন্য দুই সহকর্মীকে নিয়ে তাঁর স্বাস্থ্যগত বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে আলোচনায় বসতে পারি।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে তৃতীয় দেশে নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ডি জে গোস্বামী বলেন, ‘এটি আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তবে মেঘালয়ে সিভিল হাসপাতাল ছাড়াও উন্নত চিকিৎসার জন্য নেগ্রিমসের (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইন্দিরা গান্ধী হেলথ ও মেডিকেল সায়েন্স) মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
জানতে চাইলে স্থানীয় আইনজীবী এম এস কুরেশি এ বিষয়ে বলেন, এর আগে এখানে ফরেনারস অ্যাক্টের মামলাগুলোর সমাধান যেভাবে হয়েছে, এ ক্ষেত্রে সেভাবে না-ও হতে পারে। কারণ সালাহ উদ্দিন একজন জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তি। তাঁর মতো ব্যক্তির ক্ষেত্রে তৃতীয় দেশে চিকিৎসার বিষয়টি যেভাবে আসছে, সে সম্পর্কে ফরেনারস অ্যাক্টে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। ফলে মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ারÿক্ষমতা বিচারিক আদালতের নেই। শুধু হাইকোর্টই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।
সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সালাহ উদ্দিন তৃতীয় কোনো দেশে চিকিৎসার জন্য যেতে চাইলে আইনি জটিলতার কারণে তা সহজ হবে না। তা ছাড়া ইন্টারপোলের রেড নোটিশের কারণে কেন্দ্রীয় সরকার কতটা যুক্ত হবে, সেটিও ভাবনার বিষয়। সব মিলিয়ে আগামী শুক্রবারের মধ্যে তাঁকে আদালতে তোলা হবে কি না, সেটি নিশ্চিত নয়।
এদিকে পুশব্যাক করার যে আলোচনা রয়েছে, আপাতত তা নাকচ করে দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বিএসএফের ডিআইজি এস কে সিং প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো ব্যক্তিকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হলে বিএসএফের মাধ্যমেই সেটি করার কথা। এখন পর্যন্ত সালাহ উদ্দিন আহমদকে পুশব্যাকের ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না।’
আবার দেখা করলেন স্ত্রী: শিলং পৌঁছানোর পর গতকাল সকালে দ্বিতীয় দিনের মতো সালাহ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে দেখা করেন তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমদ। স্বামীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ওনার শরীর খুবই খারাপ। একটানা দুই মিনিট দাঁড়ালে হাত-পা কাঁপতে থাকে। উন্নত চিকিৎসা দরকার। হৃদ্রোগের সমস্যাও আছে। কিডনির সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে।
ভারতের চিকিৎসাব্যবস্থা তো যথেষ্ট উন্নত। তৃতীয় দেশে নিতে চাইছেন কেন? জবাবে হাসিনা আহমদ বলেন, ২০ বছর ধরে সালাহ উদ্দিনের সব চিকিৎসা সিঙ্গাপুরে হচ্ছে। হৃদ্রোগের জন্য তিনবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তাই সেখানেই নিয়ে যেতে চান।

No comments

Powered by Blogger.