ট্যানারির বিষাক্ততায় স্বাস্থ্য সমস্যার জবাবদিহি নেই -হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নিবন্ধ

বাংলাদেশের ট্যানারির বিষাক্ততা থেকে সৃষ্ট ব্যাপক স্বাস্থ্য সমস্যায় জবাবদিহিতা নেই বলেই মনে হচ্ছে। এর আগে হাইকোর্ট দেড় শ’ বা এর কাছাকাছি ট্যানারিকে জনবহুল, দূষিত হাজারীবাগ থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশ পালনে ব্যর্থতার ব্যাখ্যা চাইতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। হাজারীবাগে বসবাসকারীরা অভিযোগ করেছেন, তারা জ্বর, ত্বকের সমস্যা, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, ডায়রিয়ার মতো অসুস্থতায় ভুগছেন। ট্যানারির দূষণে বাতাস, পানি ও মাটির কারণে এসব রোগ হচ্ছে। এত দীর্ঘ সময়েও সরকার কেন এ শিল্পকে স্থানান্তর করার কাজ টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছে সে বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে বক্তব্য শুনবে হাইকোর্ট। গতকাল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এসব কথা লিখেছেন রিচার্ড পিয়ারসহাউজ। এতে তিনি আরও লিখেছেন, ১৪ বছর আগে হাইকোর্ট সরকারের প্রতি রুল দিয়েছিল যে, এ শিল্প থেকে সৃষ্ট বর্জ্য যাতে উপযুক্ত ব্যবস্থায় শোধন করা যায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। এর জবাবে মন্ত্রণালয় শুধুই তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে। ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে প্রস্তুত হওয়ার কথা ছিল ঢাকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ঢাকা ট্যানারি এস্টেট। এরপর সে সময় পরিবর্তন করে বলা হয় ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে সম্পন্ন হবে সে কাজ। এরপর বলা হয় ২০১০ সালের জুন, ২০১২ সালের জুন এবং ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ওই ট্যানারি এস্টেট প্রস্তুত হওয়ার কথা বলা হয়। বর্তমানে এ মন্ত্রণালয় এ বছরের জুনকে ডেডলাইন ধরে। কিন্তু সে সময়ও যায় যায়। যখন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবকে হাইকোর্ট তলব করেছে তখন এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। তবে সত্য হলো, যদি সরকার এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করে এবং সব ট্যানারিকে হাজারীবাগের বাইরে নিতে উদ্যোগ নেয় তবে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত শিশুশ্রম, দখল ও পরিবেশগত স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি যাবে না, যদি না বাংলাদেশ এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে শক্তি না প্রয়োগ করে। শিল্প সচিবকে যেহেতু হাইকোর্ট তলব করেছে এই সুযোগে তার কাছে কিছু মৌলিক প্রশ্ন করতে পারে আদালত। তা হতে পারে শ্রম ও পরিবেশগত পরিদর্শন নিয়ে। যেসব ট্যানারি তার অশোধিত বর্জ্য পানিতে ছেড়ে দেয়, বারবার বাংলাদেশের শ্রম আইন লঙ্খন করে সেসব কারখানাকে জরিমানা ও তা বন্ধ করে দেয়ার আইন আছে। কিন্তু এ দুটি মন্ত্রণালয়ই হাজারীবাগকে দেখে থাকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত এলাকা হিসেবে। শেষ পর্যন্ত আইন প্রয়োগ করে ট্যানারি না সরালে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে নেয়া অনেক দূরের কথা। আর তাতে ওই এলাকার অধিবাসী ও ট্যানারি শ্রমিকদের লাভ হবে না বললেই চলে।

No comments

Powered by Blogger.