ফ্রেড বাঁচালেন ব্রাজিলকে

প্যারাগুয়ের সঙ্গে ২-২ গোলের ড্রয়ের পর ‘উৎ সব’ করল ব্রাজিল। পাতো-গানসো-ফ্রেডরা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। তখন অন্য প্রান্তে হতাশায় ভেঙে পড়া প্যারাগুয়ে দলের রক সান্তা ক্রুজ, জাস্তো ভিলাররা সান্ত্বনা দিচ্ছেন একে অন্যকে।
ড্র করে খুশি ব্রাজিল—এমন দৃশ্য বিশ্ব ফুটবলে অচেনা। তবে পরশু সত্যিই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে ব্রাজিল। হারটাকে যখন নিয়তির মতো অমোঘ মনে হচ্ছিল, তখনই ফ্রেডের গোল পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচাল দলকে। করডোবার মারিও কেম্পেস স্টেডিয়ামে প্রথমে অবশ্য এগিয়ে গিয়েছিল ব্রাজিলই। প্রথমার্ধের খেলা শেষের মিনিট ছয়েক আগে ব্রাজিলকে এগিয়ে দেন রবিনহোর জায়গায় সুযোগ পাওয়া জাডসন। পরে সান্তা ক্রুজ আর নেলসন ভালদেজের গোলে এগিয়ে যায় প্যারাগুয়ে। ৮৯ মিনিটে ব্রাজিলকে সমতায় ফেরান সুপার সাব ফ্রেড।
প্যারাগুয়ে জিতলে ম্যাচের গতিপ্রকৃতির সঙ্গে অসামঞ্জস্য কিছু হতো না। তবে ব্রাজিল কোচ মানো মেনেজেস প্যারাগুয়ের জয়টাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারতেন না, ‘আমাদের হারটা হতো অন্যায়। আমাদের হারানোর মতো ভালো প্যারাগুয়ে খেলেনি।’ তাহলে ড্রয়ের মধ্যেই সঠিক বিচারটা পেয়েছে ম্যাচ! মেনেজেস এটাই বলতে চাইছেন, আর সারা বিশ্ব যেটা বলল, শুরু থেকেই হতাশা ‘উপহার’ দিতে থাকা কোপা আমেরিকা পরশুও আরেকটি হতাশার ম্যাচ দেখাল।
পাওলো হেনরিক গানসোর ডিফেন্স চেরা অসাধারণ দুটি পাস, দানি আলভেজের একটি রক্ষণ ভুল। ৯০ মিনিটের ম্যাচে বলার মতো ঘটনা বলতে তো এই!
গানসোর প্রথম পাসেই প্রথম গোল পেয়ে যায় ব্রাজিল। রামিরেস মাটিতে পড়ে গিয়েও বলটি দিতে পারেন গানসোকে। একজনকে কাটিয়ে দুজন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে সান্তোস প্লে-মেকার বল দেন ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা জাডসনকে। অতি দ্রুততায় নেওয়া জাডসনেরই গড়ানো শটে ৩৯ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দে ভাসে ব্রাজিল।
ব্রাজিলকে পয়েন্ট নিয়ে ঘরে ফেরা দ্বিতীয় গোলটিও বানিয়ে দিয়েছেন গানসো। দুই ডিফেন্ডারের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা ফ্রেডকে বল দেন তিনি। ফ্লুমিনেন্সের হয়ে ১৯৪ ম্যাচে ১৪১ গোল করে পাওয়া ‘ফ্রেডগোল’ ডাকনামটি সার্থক করেছেন ফ্রেড হাফভলিতে দারুণ এক গোল করে। ৬৬ মিনিটে ব্রাজিল পিছিয়ে পড়ে দানি আলভেজের গুরুতর এক ভুলে। বক্সের ডান প্রান্তে অহেতুক কারিকুরি করতে গিয়ে বার্সেলোনা উইঙ্গার বল জমা দিয়ে দেন ক্রিস্টিয়ান রিভেরোর পায়ে। আলভেজকে কাটিয়ে তিনি বল ফেলেন বক্সে। জালে বল ঠেলতে ভুল করেননি নেলসন ভালদেজ। ৫৪ মিনিটে প্যারাগুয়ের প্রথম গোলটিও একটি ব্রাজিল রক্ষণের ভুলের মাশুল। আন্দ্রে সান্তোস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের পাশ থেকে সান্তা ক্রুজকে ছুটে আসতে দেখেও তাঁকে ঠেকাতে গা করেননি।
তবে আসল প্রশ্ন এটা নয়। আর্জেন্টিনার না হয় একজন প্লে-মেকারের অভাব, কিন্তু গানসো-রবিনহো-নেইমারদের মতো বল প্লেয়ার থাকতে ব্রাজিলও ধুঁকছে কেন? মাঝমাঠে একজন যোগ্য নেতার অভাব। ব্যক্তিগত নৈপুণ্য থাকলেও দল হিসেবে ব্রাজিলকে খুব এলোমেলো মনে হচ্ছে। রক্ষণের সঙ্গে মাঝমাঠ, আর মাঝমাঠের সঙ্গে আক্রমণভাগ—সমন্বয়ই নেই দলে।
গ্রুপের শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে এই সমন্বয়ের সুতোটা জোড়া দিতে পারবে ব্রাজিল? না পারলে বিপদ। বৃহস্পতিবারের এই ম্যাচ জিততে না পারলে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের কোপায় হ্যাটট্রিক শিরোপার অভিযান মুখ থুবড়ে পড়তে পারে অকালেই। পরশু দ্বিতীয় ম্যাচে ভেনেজুয়েলা ৬২ মিনিটে সিজার গঞ্জালেসের দেওয়া গোলে ইকুয়েডরকে হারিয়ে (১-০) এই গ্রুপের শীর্ষে উঠে গেছে প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলকে রুখে দেওয়া ভেনেজুয়েলা।

No comments

Powered by Blogger.