আহত সাংবাদিক, বিপন্ন সাংবাদিকতা

কুষ্টিয়ার শিলাইদহে কুঠিবাড়িতে সন্ত্রাসীরা চারজন সাংবাদিককে নির্মমভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। খবরটি বিবেকবান যেকোনো নাগরিকের জন্য উদ্বেগজনক। কারণ তাঁরা পেশাগত কাজ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন। কুঠিবাড়িতে সরকারের প্রায় ৮৫ লাখ টাকার সংস্কারকাজ চলছিল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, উন্নয়নকাজের শুরু থেকে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার এবং দরপত্র অনুযায়ী কাজ না করে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রথম আলোর কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ও দুটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলার শিকার হন। ঠিকাদারের নেতৃত্বে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের ভিত্তি না থাকলে হামলার প্রশ্ন ওঠে না।
আলোচ্য ঠিকাদার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শহর কমিটির একজন নেতা। সরকারি দলের স্থানীয় নেতা হিসেবে তিনি এলাকায় প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী হতে পারেন, কিন্তু তারও একটি সীমা আছে। সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে বাধা দেওয়া বা হাঙ্গামা সৃষ্টির অধিকার তাঁর নেই। তাঁর উচিত ছিল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তাঁদের কাজে সাহায্য করা। তাঁর কাজের দুর্নীতির অভিযোগ যদি সত্য না হয়, তাহলে তিনি তাঁর ব্যাখ্যা দিতে পারতেন সাংবাদিকদের। আইনসম্মত পথে না গিয়ে তিনি তাঁর লোকজন নিয়ে হামলা চালিয়েছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তার বিচার ও শাস্তি হতেই হবে।
সরকারি কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করাই সাংবাদিকদের কাজ। এর দ্বারা সমাজ উপকৃত হয়, সরকারও উপকৃত হয়। কারণ, সংবাদপত্রের দর্পণে সরকারের কাজের প্রকৃত চিত্র প্রতিফলনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। সাংবাদিকেরা যেন নিরাপদে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল স্থানীয় থানা পুলিশের। কিন্তু ঘটনার পর তারা সেখানে উপস্থিত হয়।
প্রভাবশালী মহল বা সরকারি দলের নেতারা যদি মনে করেন, হুমকি-ধমকি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করা যাবে, তাহলে ভুল করবেন। সাংবাদিকতা বিপন্ন হলে গণতন্ত্রই বিপন্ন হয়। এ সন্ত্রাসী ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তার, আহত সাংবাদিকদের যথাযথ চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা দরকার। এই অপরাধের দ্রুত বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে স্বাধীন সাংবাদিকতার স্বার্থ সমুন্নত রাখা হোক।

No comments

Powered by Blogger.