জিম্বাবুয়ের আতঙ্কের ম্যাচ

খেলা আজ পাল্লেকেলেতে, মাহেলা জয়াবর্ধনের চোখ কিন্তু ওয়াংখেড়েতে! দেশের মাটিতে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে একটি ম্যাচ খেলতে হচ্ছে অন্য দেশে। কান পাতলেই এ নিয়ে হা-হুতাশ শোনা যাচ্ছে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট-মহলে। তবে জয়াবর্ধনে এতে খুব একটা সমস্যা দেখছেন না। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচটি মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। সাবেক শ্রীলঙ্কা অধিনায়কের যুক্তি, ‘ফাইনালের একটা ভালো প্র্যাকটিস হয়ে যাবে ওই ম্যাচে!’
মজা করেই বলা। তবে মনের সুপ্ত ইচ্ছাটা ঠিকই বেরিয়ে এল। এলটন চিগুম্বুরার কাছে প্রশ্ন, ‘এতগুলো বিশ্বকাপ খেলে ফেলল, জিম্বাবুয়ে কি পারবে এবার সেমিফাইনালে উঠতে?’ জিম্বাবুয়ে অধিনায়কের সরল স্বীকারোক্তি, ‘গ্রুপ পর্ব পার হতে পারলেই মনে করব অনেক।’
ভাবছেন আজকের ম্যাচের কথা কোথায়? দুদলের দুই ক্রিকেটারের কথাতেই তো পরিষ্কার আজকের ম্যাচের গুরুত্ব! জয়াবর্ধনে বললেন বটে, জিম্বাবুয়েকে হারানো সহজ হবে না। কিন্তু সেটা কেউ খুব বিশ্বাস করেছে বলে মনে হলো না। আজকের ম্যাচের চেয়ে টুর্নামেন্টের ভবিষ্যতে পথচলা নিয়েই যে কথা হলো বেশি!
বাস্তবতা এখন এটাই। ‘শ্রীলঙ্কা’ শব্দটি শুনলেই আঁতকে ওঠার কথা জিম্বাবুয়ের। দুটি দেশই মোটামুটি একই পথের পথিক, একসময় বিশ্বকাপ খেলতে হতো আইসিসি ট্রফি খেলে, এরপর জোটে টেস্ট স্ট্যাটাস। কোথায় একটু সহমর্মিতা থাকবে, উল্টো জিম্বাবুয়েকে পেলেই যেন বড্ড নির্মম হয়ে ওঠে শ্রীলঙ্কা। ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে ছোট তিনটি স্কোরের দুটিই জিম্বাবুয়ের (৩৫ ও ৩৮), দুবারই প্রতিপক্ষের নাম শ্রীলঙ্কা। খুব বেশি আগের ঘটনাও নয়, ২০০২ আর ২০০৪ সালের।
আজ যখন দুদল মুখোমুখি হবে বিশ্বকাপের ম্যাচে, পরিসংখ্যানেও শুধু বিশ্বকাপেই থাকুন। এখানেও শ্রীলঙ্কা মানে জিম্বাবুয়ের আতঙ্ক। চার সাক্ষাতের প্রতিটিতেই জয় শ্রীলঙ্কার। এর মধ্যে আছে ১৯৯২ বিশ্বকাপের সেই স্মরণীয় ম্যাচটিও। শুধু বিশ্বকাপ নয়, ওয়ানডেতেও সেটি ছিল দুদলের প্রথম লড়াই। অভিষেকে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের সেঞ্চুরি আর অ্যান্ডি ওয়ালারের ৪৫ বলে ৮৩ রানের ঝড়ে ৩১২ রান করেছিল জিম্বাবুয়ে, সেই সময়ের বিবেচনায় এভারেস্ট। রানাতুঙ্গা-সামারাসেকেরাদের ব্যাটিংয়ে সেই এভারেস্টও টপকে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। পরের তিন বিশ্বকাপে তিনবার মুখোমুখি হয়েও জয়ের কাছাকাছি আর যেতে পারেনি জিম্বাবুয়ে।
আজ জয় তো দূরের কথা, বাস্তবতা বলছে ১৯৯২ বিশ্বকাপের ওই ম্যাচের মতো লড়াই হওয়ার সম্ভাবনাও কম। এমনিতেই দুদলের শক্তিতে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। শন উইলিয়ামস দেশে ফিরে গেছেন চোট নিয়ে, চোট আছে ডাফিন-পোফুদেরও। জিম্বাবুয়ে তাই আরও হীনশক্তির। জয়টা তাই শ্রীলঙ্কার জন্য রুটিন কাজ হওয়ার কথা।
তবে আজ ভালো কিছু করার বাড়তি তাগিদ থাকতে পারে মুত্তিয়া মুরালিধরনের। এই স্টেডিয়ামের নাম তাঁর নামেই হওয়ার কথা, একদিন হয়েও যাবে নিশ্চিত। মুরালিধরন স্টেডিয়ামে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন মুরালিধরন—অবসরজীবনে এমন কিছু শুনতে নিশ্চয়ই খারাপ লাগবে না স্পিন জাদুকরের!

No comments

Powered by Blogger.