আজ বিজিএমইএর নির্বাচন, যাচ্ছে না ফোরাম

দেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্য সংগঠন তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নির্বাচন আজ। কিন্তু চূড়ান্ত ভোটার তালিকা না থাকার অভিযোগে প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায়ীদের একটি গোষ্ঠী ফোরাম ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছে না।
এতে কার্যত বিজিএমইএর এই নির্বাচনে সংগঠনটির আওতাভুক্ত শিল্পমালিকদের আরেকটি গোষ্ঠীর একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
এদিকে ভুয়া, জাল ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ভোটার হওয়াকে কেন্দ্র করে এবারের নির্বাচনে বড় মতবিরোধ হওয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সংগঠনটি সাধারণ শিল্পমালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছে আগ্রহ হারাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বরাবরের মতো এবারের নির্বাচনেও সমিতিকেন্দ্রিক দুটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ ২৭টি পদের প্রতিটির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামে।
সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিজিএমইএর বর্তমান সহসভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। আর ফোরামের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ।
যোগাযোগ করা হলে ফোরামের দলনেতা আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু ভোটার তালিকা ছাড়াই একটা প্রহসন হতে যাচ্ছে, তাই ভোটকেন্দ্রে আমরা যাচ্ছি না।’
অন্যদিকে সম্মিলিত পরিষদের দলনেতা শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেছেন, ‘এটা খুবই একটা বাজে ও দুঃখজনক ঘটনা।’ তিনি মনে করেন, দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সংগঠনের আওতাভুক্ত শিল্পমালিকদের নেতৃত্বকে অবশ্য দায়িত্ববান হওয়া উচিত এবং এই সংগঠনের স্বার্থে নির্বাচনে সবার ভোট দিতেও আসা উচিত।
মহিউদ্দিন বলেন, কোনো বাণিজ্য সংগঠনে নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে তার জন্য শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) কাছে যাওয়া যেতে পারে। না হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তই মানব না, এটা ঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিয়ে তর্কের খাতিরে তাদের (ফোরাম) যুক্তি মেনে নিয়ে যদি বলি, ১০ দিন পেছালেই কি কমিশন স্বচ্ছ হয়ে যাবে? তারা তো এরকম বলেনি যে এই কমিশন বাদ দিয়ে ফেরেশতা এনে ভোট গ্রহণ করতে হবে?’
উল্লেখ্য, এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি বিজিএমইএর নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু ১৯ ফেব্রুয়ারি বিজিএমইএর নির্বাচন কমিশন প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষকে ডেকে নিয়ে জানায়, ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ ভোটারের নথিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেয়। আরও জানায়, ২১ জন শিল্পমালিক আবেদন করেছেন, তাঁদের ছবি পাল্টিয়ে, সই জাল করে অন্যরা ভোটার হয়েছেন। এ পর্যায়ে দুই পক্ষের সমঝোতায় শতভাগ ভোটার তালিকা খুঁটিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়। পরে নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাণিজ্য সংগঠন পরিচালকের কাছ থেকে ১৫ দিন বাড়ানো হয়।
শতভাগ ভোটার খুঁটিয়ে দেখা নিয়ে আবার বড় মতবিরোধ তৈরি হয় দুই পক্ষে। ফোরাম অভিযোগ করেছে, কাগজপত্র ও প্রমাণ সাপেক্ষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এই অবস্থায় ভোটার তালিকা হাতে না পেয়ে কীভাবে নির্বাচন হতে পারে?
এদিকে ব্যবসায়ী সূত্রগুলো বলছে, বিজিএমইএর নির্বাচন কমিশনই এ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য মূল দায়ী। জানা গেছে, ফোরাম শুধু নির্বাচন বর্জনই করছে না বরং তারা চূড়ান্ত ভোটার তালিকাবিহীন এ ধরনের নির্বাচন হতে পারে কি না, তা নিয়ে আদালতে যাওয়ারও চিন্তা-ভাবনা করছে।
বিজিএমইএর নির্বাচন কমিশন সচিব অবশ্য গতকাল শনিবার সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করেন, আজ সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রামে সংগঠন কার্যালয়ে টানা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
আর সংবাদপত্রে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ফোরাম বলেছে, একতরফাভাবে স্বেচ্ছাচারী একটি অসম্পূর্ণ ত্রুটিযুক্ত বানোয়াট ভোটার তালিকা নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান বিজিএমইএ পর্ষদ একপেশে নির্বাচন করতে যাচ্ছে। ফোরাম মনে করে, এটা একটা বিশেষ মহলের রূপকল্প বাস্তবায়নের নীলনকশা মাত্র।
ব্যবসায়ী গোষ্ঠীটি আরও বলেছে, ‘এটা সহজেই বোঝা যায় যে, এই ভোটের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত। ফোরাম এ ধরনের ষড়যন্ত্র ও স্বেচ্ছাচারমূলক ভোটের প্রহসনকে বৈধতা না দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ একই সঙ্গে তারা সব গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থী এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
ফোরাম গতকাল রাতে রাজধানীর র্যাডিসন ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে বিজিএমইএর আওতাভুক্ত শিল্পমালিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠকের আয়োজনও করে।
এ ছাড়া ফোরাম গতকালই এফবিসিসিআইয়ের সালিসি বোর্ডের কাছে নির্বাচন প্রক্রিয়ার অনিয়ম নিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।

No comments

Powered by Blogger.