বেনগাজিতে বিদ্রোহীদের মধ্যে চাঞ্চল্য, উল্লাস

লিবিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত বেনগাজি এলাকায় গত বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতের কিছুমাত্র আগেও ছিল ভুতুড়ে পরিবেশ। যেকোনো সময় গাদ্দাফি অনুগতরা হামলা চালাতে পারে—এমন আশঙ্কায় সেখানকার লোকজন ছিল আতঙ্কিত। স্থানীয় বাসিন্দারা যে যার ঘরে শুয়ে উৎকণ্ঠা নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছিল। রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা, সুনসান। কিন্তু রাত ১২টার পর শহরের চেহারা পাল্টে গেল। জাতিসংঘ লিবিয়াকে নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করেছে এবং গাদ্দাফি বাহিনীর বিরুদ্ধে সেনা পাঠাচ্ছে শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে এল হাজার হাজার মানুষ। উল্লাসে ফেটে পড়ল তারা। এদিকে লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি বিদ্রোহ দমনে তাঁর কৌশল পরিবর্তন করেছেন।
গত মঙ্গলবার থেকে গাদ্দাফি বাহিনী বেনগাজির দিকে অগ্রসর হতে থাকে। গাদ্দাফির ছেলে সাইফ আল ইসলাম গত বুধবার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্রোহীদের ‘পিষে’ ফেলার ঘোষণা দেন। বিদ্রোহীদের নেতারা গাদ্দাফি বাহিনী নির্বিচারে গণহত্যা চালাতে যাচ্ছে বলেও হুঁশিয়ারি দেন। এতে একেবারেই ভেঙে পড়েছিল বিদ্রোহীরা। আন্তর্জাতিক সহায়তা না আসায় তারা জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি ক্ষোভও প্রকাশ করতে শুরু করেছিল।
এ অবস্থায় জাতিসংঘ বিদ্রোহীদের সমর্থনে সামরিক সহায়তা পাঠানোর ঘোষণা দেয়। এ খবর শুনে হতাশ হয়ে পড়া বিদ্রোহীরা মুহূর্তেই প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে। তারা রাস্তায় বেরিয়ে নিজেদের বন্দুক উঁচিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে। একই সঙ্গে তাদের গাদ্দাফিবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা যায়। বহু তরুণ-তরুণীকে নেচে-গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তাদের হাতে ছিল লিবিয়ার জাতীয় পতাকা। বিদেশি বন্ধু দেশ হিসেবে অনেকের হাতে ফ্রান্সের পতাকাও দেখা গেছে।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেনগাজির রাজপথে উল্লাসরতদের মধ্য থেকে ইব্রাহিম আবু বাকার নামের একজন বলেন, ‘তাঁর (গাদ্দাফি) ট্যাংকে আঘাত হানো, তাঁর বিমানে আঘাত হানো, বাব-আল-আজিজিয়ায় (ত্রিপোলিতে গাদ্দাফির বাসভবন) ঢুকে তাঁকে আঘাত করো!’
আবু বাকারের মতো অসংখ্য বিদ্রোহীকে এ সময় উদ্দীপ্ত ও যুদ্ধংদেহী মনোভাবে দেখা যায়। তবে এই উল্লাসের মধ্যেও কেউ কেউ লিবিয়ায় বাইরের সামরিক শক্তির উপস্থিতিকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। তাদের আশঙ্কা, বিদেশি সেনারা সেখানে স্থায়ী ঘাঁটি গাড়লে দেশটির সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে।
লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি বিদ্রোহ দমনে তাঁর কৌশল পরিবর্তন করেছেন। তিনি এখন আর সেনাদের ব্যবহার করবেন না। সেনাসদস্যদের পরিবর্তে পুলিশ সদস্যদের ব্যবহার করবেন। গত বৃহস্পতিবার সিএনএন এ খবর জানায়।
সিএনএন জানায়, তারা গাদ্দাফির ছেলে সাইফ আল ইসলামের একটি টেলিফোন বার্তা পান। ওই বার্তায় বলা হয়, লিবিয়ার নেতৃত্ব বেনগাজিতে তাদের কৌশল পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। সেনাসদস্যরা আর বেনগাজিতে যাচ্ছে না। তারা সরকারনিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করবে।
সিএনএনের সংবাদদাতা নিক রবার্টসন জানান, মানবিক কারণেই লিবিয়া কর্তৃপক্ষ তাদের কৌশল পরিবর্তন করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের ধারণা, জনগণ তাদের এই নীতিকে স্বাগত জানাবে এবং সেনাবাহিনী যাবে শুধু তাদের সহায়তা করতে।

No comments

Powered by Blogger.