নাপাম বোমা যা পারেনি, চ্যালেঞ্জার ও আব্রাম্‌স্‌ ট্যাংক কি তা পারবে? by আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী

ফগান যুদ্ধে তালেবানদের হাতে নাস্তানাবুদ পশ্চিমা শক্তি শেষ পর্যন্ত সেখানে সর্বাধুনিক ট্যাংক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে লন্ডনের সানডে টাইমস ১৯ ডিসেম্বরের সংখ্যায় খবর দিয়েছে, ব্রিটিশ সামরিক কর্তৃপক্ষ আফগানিস্তানে ট্যাংক পাঠানোর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দেখছে। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিয়াম ফক্স
আর্মির এই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে পারবেন না। এই প্রথম স্বীকার করা হলো, তালেবানদের সঙ্গে যুদ্ধে পশ্চিমা সৈন্যরা পেরে উঠছে না। কারণ, তাদের আর্মার্ড প্রোটেকশন নেই। আফগানিস্তানে যুদ্ধরত আর্মির সিনিয়র কমান্ডাররা তালেবানদের হামলা থেকে আত্মরক্ষার জন্য হেলমন্দে এক স্কোয়াড্রন চ্যালেঞ্জার ট্যাংক-২ পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। ব্রিটেন এই ট্যাংক পাঠানোর ব্যবস্থা নিলে আমেরিকাও সমসংখ্যক ভারী আব্রাম্স্ ট্যাংক আফগানিস্তানে পাঠাবে। এই খবরটি প্রচারিত হওয়ার পর ইউরোপের অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও সামরিক বিশেষজ্ঞ প্রশ্ন তুলেছেন, তালেবানদের বিরুদ্ধে সর্বাধুনিক মারণাস্ত্র ব্যবহার, চালকবিহীন জঙ্গি বিমান থেকে নির্বিচার বোমাবর্ষণ দ্বারাও অস্ত্রশস্ত্রে অনেক কম সজ্জিত তালেবানদের যেখানে পরাস্ত করা যায়নি, সেখানে চ্যালেঞ্জার ও আব্রাম্স্ ট্যাংক পাঠিয়ে কি তাদের পরাস্ত করা যাবে? দেশটিতে সিভিলিয়ান ক্যাজুয়ালটি আরো বিরাটভাবে বাড়ানো যাবে মাত্র। তা আফগানদের প্রতিরোধ-শক্তি বাড়াবে এবং পশ্চিমা শক্তি ও ন্যাটো সেনাবাহিনীর জন্য ভিয়েতনাম ধরনের পরাজয় আরো অনিবার্য করে তুলতে পারে।
এ আশঙ্কাটি মাত্র কিছু দিন আগে প্রকাশ করেছেন আফগানিস্তানে মার্কিন দূত রিচার্ড হলব্রুক। তিনি গত সপ্তাহে মারা গেছেন। তিনি প্রকাশ্যে মতপ্রকাশ করেছিলেন যে কেবল যুদ্ধ করে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না (চবধপব রহ অভমধহরংঃধহ ঈড়ঁষফ হড়ঃ নব ড়িহ নু সরষরঃধৎু সবধহং ধষড়হব)। যুদ্ধ ছাড়া এই অন্য পন্থাটা কী? হলব্রুকের মতে, এই অন্য পন্থাটা হলো, আফগানিস্তানে দ্রুত কৃষি উন্নয়ন, পশতুন বেল্টের গ্রামে ও শহরে জব ক্রিয়েশন বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দান।
মৃত্যুবরণের আগেও হলব্রুক তাঁর সার্জনকে বলেছেন, 'আমাদের অবশ্যই আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে।' সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের দিকেই তিনি ইঙ্গিত করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক সমাধানের জন্য একটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দরকার। যাদের সঙ্গে আমেরিকা বা পশ্চিমা শক্তি আলোচনায় বসতে পারে। এ ক্ষেত্রে তালেবান ছাড়া আফগানিস্তানে পশ্চিমা শক্তির আর কোনো রাজনৈতিক বা সামরিক প্রতিপক্ষ নেই। যদি আফগান সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে যেতে হয়, তাহলে যুদ্ধ বন্ধ করে এই তালেবানদের সঙ্গেই পশ্চিমা শক্তি_বিশেষ করে আমেরিকাকে আলোচনায় বসতে হবে।
আমেরিকা এই বাস্তবতাকে এত দিন স্বীকৃতি দেয়নি। একক সুপার পাওয়ার হওয়ার শক্তি-গর্বে আমেরিকার সবচেয়ে নিকৃষ্টতম প্রেসিডেন্ট এবং ওয়ারক্রিমিনাল হিসেবে অনেকের দ্বারা বিবেচিত বুশ জুনিয়র ভেবেছিলেন, যুদ্ধ দ্বারাই তিনি আফগান সমস্যার সমাধান করে ফেলবেন। এই আশায় তিনি মিত্র দেশ পাকিস্তানেও যুদ্ধ সম্প্রসারিত করেছিলেন।
আমেরিকার এতকালের মিত্র দেশ এবং ক্লায়েন্ট স্টেট পাকিস্তান এখন মার্কিন বোমা ও কামানের হামলায় রোজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে, কিন্তু আমেরিকার ভাগ্যে যুদ্ধজয় ঘটেনি। বরং মার্কিন হামলার বিরুদ্ধে দেশটির মানুষের মনে ক্রোধ ও প্রতিরোধ-চেতনা দিন দিন বাড়ছে। আফগানিস্তানের মানুষের সঙ্গে পাকিস্তানের মানুষের প্রতিরোধ-চেতনা যুক্ত ও সক্রিয় হলেও সর্বাধুনিক মারণাস্ত্র নিয়েও আমেরিকার যুদ্ধজয়ের কোনো আশা নেই। বরং ভিয়েতনামের চেয়েও লজ্জাকর পরাজয় তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
ভিয়েতনামে আমেরিকা সভ্য জগতের সব স্বীকৃত নিয়ম-রীতি ও বাধ্যবাধকতা অগ্রাহ্য করে নাপাম বোমা ও বিষাক্ত কেমিক্যালের মতো ভয়াবহ অস্ত্র ব্যবহার করেও যুদ্ধে জয়ী হতে পারেনি। এখন আমেরিকা তার যুদ্ধসাথী ব্রিটেনকে সঙ্গে নিয়ে আফগানিস্তানে চ্যালেঞ্জার ও আব্রাম্স্ ট্যাংক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেও কী করে যুদ্ধজয়ের আশা করছে তা শান্তিপ্রিয় বিশ্ববাসীর জানা নেই।
ব্রিটেন ও আমেরিকার শান্তিপ্রিয় জনগণ ইরাকের অন্যায় ও অবৈধ যুদ্ধ যেমন চায়নি, তেমনি 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের' নামে আফগানিস্তানের এই ধ্বংসযজ্ঞও চায়নি। এটা যুদ্ধবাদী বুশ এবং মিথ্যাবাদী হিসেবে প্রমাণিত টনি ব্লেয়ারের যুক্ত চক্রান্তের যুদ্ধ। এ দুজনই আজ ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত। কিন্তু এর দায় পোহাচ্ছে সারা বিশ্বের মানুষ এবং অকারণে প্রাণ দিচ্ছে ইরাক, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ এবং ব্রিটেন ও আমেরিকার তরুণ সেনারাও।
এই যুদ্ধে যে জয়ী হওয়া যাবে না, সে সম্পর্কে ব্রিটেন এবং আমেরিকার অনেক সামরিক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। যেমন করেছেন সদ্য প্রয়াত মার্কিন কূটনীতিক রিচার্ড হলব্রুক। নিউ কন বা নিউ কনজারভেটিভ নামে পরিচিত বুশ চক্রের এই যুদ্ধ সারা বিশ্বে আমেরিকার ইমেজই শুধু ধ্বংস করেনি, সারা বিশ্বে যে অর্থনৈতিক ডিপ্রেশন সৃষ্টি করেছে, আমেরিকাও তার গ্রাস থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। আমেরিকা তার এই ইমেজ পুনরুদ্ধার ও অর্থনৈতিক ধস থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যই একজন ব্লাক প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউসে এনে বসাতে বাধ্য হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ওবামা সঠিকভাবেই বুঝেছেন যে আফগানিস্তানে যুদ্ধে জেতা যাবে না এবং এই অর্থ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আমেরিকার সুপার পাওয়ার হিসেবে অস্তিত্ব রক্ষাই সমস্যা হবে। কিন্তু ভিয়েতনামের মতো পরাজয়ের কলঙ্ক বহন করে পালালে চলবে না। আফগানিস্তান থেকে একটি সাফল্যজনক পশ্চাদপসরণের (ঝঁপপবংংভঁষ ৎবঃৎবধঃ) পন্থা বের করতে হবে। একদিকে তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের চাপ বৃদ্ধি এবং অন্যদিকে তাদের আপসপন্থী অংশের দিকে সন্ধির ওলিভ ব্রাঞ্চ দেখানো_এই দুই নীতি অনুসরণ দ্বারা ওবামা অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের একটি যুক্তিবাদী অংশ আফগান সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিল।
এ লক্ষ্যে আপস ও ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে তালেবানদের একটি অংশকে আলোচনার বৈঠকে বসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। মার্কিন প্রশাসন এ ব্যাপারে একটা থিয়োরিও দাঁড় করিয়েছিল। থিয়োরিটা হলো, তালেবানদের হার্ড কোর এবং সফট কোর আছে। সফট কোর হলো, তালেবানদের ভালো অংশ। এই ভালো অংশের সঙ্গে আপস করে এমনকি তাদের ক্ষমতায় বসতে দিয়েও ওবামা প্রশাসন সম্মানের সঙ্গে আফগান সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। এ জন্য তারা তালেবানদের একটি অংশের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠাও করেছিল।
আরো একটি কারণে ওবামা প্রশাসনের একটি অংশ তালেবানদের সঙ্গে আপস করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল। কারজাইয়ের মতো এক তাঁবেদার প্রেসিডেন্টকে কারসাজির নির্বাচনে জয়ী করে ক্ষমতায় বসাতে গিয়ে মার্কিন প্রশাসন বিলম্বে হলেও উপলব্ধি করেছে, কারজাইয়ের দুর্নীতি ও ওয়াশিংটনের প্রতি বশ্যতা আফগান জনগণের মধ্যে তাঁর কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেনি এবং তাঁর আধিপত্যও কাবুলের ব্লু জোনের বাইরে বিস্তৃত নয়। আজ মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তান ছাড়লে কারজাইকেও তাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনে নিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে হবে।
রিচার্ড হলব্রুক যে বলেছেন, আফগান জনগণের মন জয় করতে হলে যুদ্ধ বন্ধ করে তাঁদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সর্বাত্মক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে, তা করতে হলেও আফগানিস্তানের জনগণের আস্থাভাজন এবং পছন্দসই একটি সরকারের মাধ্যমে তা করতে হবে। দুর্নীতিপরায়ণ এবং জনগণের সমর্থনবঞ্চিত কারজাই সরকারের দ্বারা তা সম্ভব নয়। এ জন্যই তালেবানদের একটা নরমপন্থী অংশের সঙ্গে ওবামা প্রশাসনের অনেকে একটা আপসরফায় আগ্রহী ছিলেন।
আমার ধারণা, প্রেসিডেন্ট ওবামা যদি ফ্রি হ্যান্ড নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন, তাহলে এত দিনে আফগানিস্তানে এমনকি পাকিস্তানেও যুদ্ধ বন্ধ করার একটা পন্থা বের করতে পারতেন। কিন্তু এখানেও তাঁর হাত বাঁধা হোয়াইট এস্টাবলিশমেন্টের কট্টর রক্ষণশীল অংশের কাছে। তারা ভিয়েতনামের মতো পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত আফগানিস্তানের মাটি ছাড়তে নারাজ। অন্যদিকে তালেবানদের সফ্ট কোর আপস-আলোচনায় বসতে রাজি হলেও মার্কিন ও ন্যাটোবাহিনী আফগানিস্তান থেকে চলে না যাওয়া পর্যন্ত তারা আলোচনার জন্য প্রস্তুত নয়। ভিয়েতনামেও ভিয়েতকঙ বা হো চি মিন বাহিনীর জেনারেল গিয়াপ আমেরিকাকে এই শর্তই দিয়েছিলেন, আগে ভিয়েতনামের মাটি ছাড়, তারপর আলোচনা।
আফগান যুদ্ধে এখনো ভিয়েতনামের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলে হয়তো মার্কিন সামরিক প্রশাসনের একটা বড় অংশ মনে করেন। তাঁরা যুদ্ধে জয়ী হবেন_এটা আশা না করলেও উন্নত সমরাস্ত্রের জোরে তালেবানদের বিজয় ঠেকিয়ে রেখে ওয়াশিংটনের শর্তে তালেবানদের আপস রফায় রাজি করাতে পারবেন বলে সম্ভবত বিশ্বাস করেন। তাঁদের এই আশাবাদেই প্রভাবিত হয়ে ব্রিটিশ ও মার্কিন সরকার চ্যালেঞ্জার ও আব্রামসের মতো বিধ্বংসী ট্যাংক আফগানিস্তানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে মনে হয়। তাতে যুদ্ধ আরো সম্প্রসারিত হবে, রক্তক্ষয় আরো বাড়বে। সেই সঙ্গে আরো ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হয়ে আফগান জনগণের প্রতিরোধ-প্রতিজ্ঞাও আরো বাড়বে। জনগণের মনোবলকে মারণাস্ত্র দ্বারা ধ্বংস করা যায় না।
এই সত্যটার দিকেই গত ১৯ ডিসেম্বরের প্রতিবেদনে পশ্চিমা সমর নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সানডে টাইমসের প্রতিবেদক। তিনি লিখেছেন, ১৯৭৯ সালে তৎকালীন আফগান যুদ্ধে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ট্যাংক পাঠানোর ঘটনারই প্রতিফলন যেন ঘটছে ব্রিটেন ও আমেরিকা কর্তৃক একইভাবে আফগানিস্তানে মেইন ব্যাটল ট্যাঙ্ক পাঠানোর বর্তমান প্রস্তুতিতে। আফগানিস্তানে সেই রুশ ট্যাংকের বিশাল ধ্বংসস্তূপ এখনো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সানডে টাইমস পত্রিকার এই প্রতিবেদনটি পাঠ করে আমারও মনে হয়েছে, ট্যাংক ও মারণাস্ত্র দ্বারা ধ্বংসের তাণ্ডব সৃষ্টি করা যায়, যুদ্ধ জয় করা যায় না। ভিয়েতনামে মার্কিন নাপাম বোমা যেমন যুদ্ধ জয়ে ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি আফগানিস্তানেও চ্যালেঞ্জার-২ এবং আব্রামস্_এই মেইন ব্যাটল ট্যাংকও যুদ্ধ জয় নিশ্চিত করতে পারবে না।
আফগান যুদ্ধে আমেরিকার সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা এই যে এই যুদ্ধকেও তারা বিশ্ববাসীর কাছে একটি মরাল এবং লিগ্যাল যুদ্ধ বলে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারেনি। নিউইয়র্কে ভয়াবহ নাইন-ইলেভেনের ঘটনায় আমেরিকা তার মিত্র দেশগুলো নিয়ে বিশ্বকে সন্ত্রাসমুক্ত করার যুদ্ধে লিপ্ত হতে বাধ্য হয়েছে_এই প্রচারও বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। তালেবানি সন্ত্রাস ধ্বংস করার নামে আমেরিকা প্রথমেই ধ্বংস করেছে ইরাকের মতো তালেবানদের প্রভাবমুক্ত একটি সেক্যুলার দেশকে এবং সাদ্দামের মতো এক সেক্যুলার রাষ্ট্রনায়ককে। ইরাককেও এখন আমেরিকা ঠেলে দিয়েছে তালেবানদের খপ্পরে।
যেমন আফগানিস্তানে, তেমনি তার প্রতিবেশী পাকিস্তানেও দীর্ঘকাল ধরে তার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও ইনস্টিটিউশনগুলোকে শক্তিশালী ও স্থায়ী হতে দেয়নি আমেরিকা। দেশটির মাথায় নামে-বেনামে সামরিক শাসন চাপিয়ে রেখেছে। এই সামরিক বাহিনী এবং তার গোয়েন্দা সংস্থারও বড় অংশ এখন তালেবানপন্থী অথবা তালেবানদের প্রতি সহানুভূতিশীল। পাকিস্তানও হাতের মুঠোর বাইরে চলে যাবে_এই ভয়ে দেশটিকে সন্ত্রাসমুক্ত করার নামে সেখানেও চলছে নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞ। হতাহত অসামরিক নর-নারীর সংখ্যা ভয়াবহভাবে বাড়ছে। মার্কিন বিদ্বেষে অন্ধ পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ঝুঁকছে তালেবানদের দিকেই। বিধ্বংসী ট্যাঙ্ক বা অন্য আরো কোনো বড় ধরনের মারণাস্ত্র পাঠিয়ে পাকিস্তানেও কি শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাবে? মার্কিন স্বার্থ ও আধিপত্য অক্ষুণ্ন রাখা যাবে?
বিশ্বের_এমনকি আমেরিকারও নিরপেক্ষ সামরিক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, আফগানিস্তানে কেন, পাকিস্তানেও আমেরিকার যুদ্ধ জয়ের সম্ভাবনা কম। যে সত্যটি আমেরিকা এবং পশ্চিমা মিডিয়াগুলো গোপন করছে তা হলো, আফগানিস্তানে এবং পাকিস্তানেও তালেবানরা এখন পর্যন্ত মার্কিনবিরোধী যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ করছে বটে, কিন্তু দিন দিনই এ যুদ্ধ গণযুদ্ধে রূপান্তরিত হচ্ছে। দলে দলে শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত যুবক এসে তালেবান শিবিরে সৈন্য হিসেবে নাম লেখাচ্ছে তালেবান হওয়ার জন্য নয়, তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া আমেরিকার বর্বর যুদ্ধ এবং গণহত্যা প্রতিরোধের জন্য।
এমনও হতে পারে, অবিলম্বে আফগান যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য আমেরিকার সুবুদ্ধির উদয় না ঘটলে এই অসম যুদ্ধে তালেবানদের শক্তি ক্ষয় হতে হতে তাদের নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে পারে, কিন্তু তাদের স্থলাভিষিক্ত হবে ভিয়েতনামের মতো দেশটির সব দল-মতের যুবা ও তরুণের দল। বিপুল জনসমর্থনে এই যুদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে জনযুদ্ধ এবং তা বিশ্বের সব মানুষের সমর্থন কুড়াবে। আমেরিকার জন্য তখন ভিয়েতনামের চেয়েও লজ্জাকর একটি পরাজয় অনিবার্য হয়ে দাঁড়াবে।
=================================
ঠাকুর ঘরে কে রে...!  ষড়যন্ত্র নয়, ক্ষুধা ও বঞ্চনাই আন্দোলনের ইন্ধন  বাহাত্তরের সংবিধানের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বাধা কোথায়?  ড.ইউনূসের দুঃখবোধ এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা  গীতাঞ্জলি ও চার্লস এন্ড্রুজ  গল্প- তেঁতুল  একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের পুস্তক প্রকাশনা  গল্প- বট মানে গরুর ভুঁড়ি  গল্প- কিশলয়ের জন্মমৃত্যু  গল্প- মাকড়সা  দুর্নীতি প্রতিরোধে আশার আলো  জাগো যুববন্ধুরা, মুক্তির সংগ্রামে  ঢাকা নগর ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন প্রয়োজন  মারিও বার্গাস য়োসার নোবেল ভাষণ- পঠন ও কাহিনীর নান্দীপাঠ  লন্ডন পুলিশ জলকামানও নিল না  রাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ ও যুদ্ধাপরাধী বিচারের দায়বদ্ধতা  পোশাক শিল্পে অস্থিরতার উৎস-সন্ধান সূত্র  বাতাসের শব্দ  গোলাপি গল্প  বজ্র অটুঁনি অথবাঃ  উদ্ভট উটের পিঠে আইভরি কোস্ট  আনল বয়ে কোন বারতা!  ফেলানীর মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গ- নিজ ভূমেই প্রশ্নবিদ্ধ ভারতের মানবিক চেহারা  বাজার চলে কার নিয়ন্ত্রণে  উঠতি বয়সের সংকট : অভিভাবকের দায়িত্ব  বিকল্প ভাবনা বিকল্প সংস্কৃতি  অন্ধত্ব ও আরোগ্য পরম্পরা  খুলে যাক সম্ভাবনার দুয়ার  কক্সবাজার সাফারি পার্কঃ প্রাণীর প্রাচুর্য আছে, নেই অর্থ, দক্ষতা  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের গুপ্ত জীবন  ছাব্বিশটি মৃতদেহ ও একটি গ্রেপ্তার  ৩৯ বছর পরও আমরা স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি  সাইবারযুদ্ধের দামামা  সরলতার খোঁজে  সেই আমি এই আমি  আমেরিকান অর্থনীতি ডলারের চ্যালেঞ্জ  বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ইশতেহার- আশানুরূপ সুফল নেই এক বছরেও  ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাজনীতি  মাস্টারদা সূর্যসেন ও যুব বিদ্রোহ সাতাত্তর  রসভা নির্বাচন ২০১১: একটি পর্যালোচনা  ড. ইউনূস অর্থ আত্মসাৎ করেননি  প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ৩৯ বছর


দৈনিক কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী
লন্ডন, ২০ ডিসেম্বর, সোমবার ২০১০


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.