স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় দক্ষিণ সুদান!

দক্ষিণ সুদানের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ এবং দীর্ঘ ২২ বছর ধরে চলা সংঘাত অবসানের লক্ষ্যে আজ রোববার সেখানে গণভোট শুরু হচ্ছে। খ্রিষ্টান-অধ্যুষিত এ অঞ্চলটি আরবনিয়ন্ত্রিত উত্তর সুদানের সঙ্গে থাকবে, না একটি আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে, সে প্রশ্নের সুরাহা হবে সপ্তাহব্যাপী এ গণভোটের মাধ্যমে।
ধারণা করা হচ্ছে, দুই দশকের বেশি সময় ধরে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা দক্ষিণ সুদানের বাসিন্দারা শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার পক্ষেই ভোট দেবেন এবং আফ্রিকার সবচেয়ে বড় রাষ্ট্র সুদান ভেঙে বিশ্ব মানচিত্রে আরও একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তবে সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গণভোটের মাধ্যমে দক্ষিণ সুদান উত্তরের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেলে সেখানে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়বে। কারণ, একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র গড়ার সামর্থ্য তাদের নেই।
এদিকে ভোট দেওয়ার জন্য দলে দলে লোক দক্ষিণ সুদানে আসতে শুরু করেছে। আজ সকাল নয়টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হবে। চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। ভোট নেওয়া হবে দুই হাজার ৬৩৮টি কেন্দ্রে। মোট ৪০ লাখ নিবন্ধিত ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এর মধ্যে উত্তর সুদানে বসবাসরত দক্ষিণ সুদানের এক লাখ ১৬ হাজার এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ৬০ হাজার ভোটারও রয়েছেন।
গণভোটের প্রথম ফলাফল জানা যাবে ৬ ফেব্রুয়ারি। আর দক্ষিণ সুদান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে কি না, সেটা ঘোষণা করা হবে আগামী ৯ জুলাই। তেলসমৃদ্ধ দক্ষিণ সুদানের আবেয়ি অঞ্চলে আলাদা গণভোট হবে। এ অঞ্চলটি দক্ষিণ সুদানের সঙ্গে থাকবে, না উত্তর সুদানের সঙ্গে যোগ দেবে, সে ব্যাপারে ফয়সালার জন্য এখানে গণভোট হবে।
গণভোটে অংশ নিতে উত্তর সুদানে বিভিন্ন কারণে বসবাসরত দক্ষিণ সুদানের বাসিন্দারা দলে দলে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। গত এক মাসে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার লোক দক্ষিণ সুদানে ফিরেছে। দক্ষিণ সুদানের দারফুর ও নুবা পার্বত্য এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে গণভোটের ব্যাপারে বেশি উৎসাহ লক্ষ করা গেছে।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এ গণভোট পর্যবেক্ষণ করবেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১০৪ জন পর্যবেক্ষক। কার্টার সেন্টারের ১০০ জন পর্যবেক্ষকও বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখবেন।
গণভোট দেখার জন্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান, মার্কিন সিনেটর জন কেরিসহ আরও অনেকে গত বৃহস্পতিবার সুদানে পৌঁছান।
এদিকে সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির গত শুক্রবার আল-জাজিরা টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দক্ষিণ সুদানের বাসিন্দারা স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিলে সুদান কার্যত দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। দক্ষিণ সুদানের বাসিন্দাদের তাঁরা বিদেশি হিসেবে গ্রহণ করবেন। উত্তরের কাছ থেকে তারা বিদেশি হিসেবে যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, শুধু সেগুলোই পাবে। বাড়তি কোনো সুবিধা দেওয়া হবে না। বশির বলেন, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন খাতের ২০ শতাংশ চাকরি বর্তমানে দক্ষিণের জন্য বরাদ্দ আছে। তারা শোষিত হলে এ চাকরি পেল কীভাবে?
আবেয়ি অঞ্চলের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণ সুদান ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করলে তা যুদ্ধ ডেকে আনবে।
১৯৫৯ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে সুদান স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দক্ষিণ সুদান স্বাধীনতার জন্য সোচ্চার হয়। কিন্তু আরবনিয়ন্ত্রিত উত্তর সুদান সরকার কঠোর হস্তে এত দিন তাদের দমন করে আসছিল। ১৯৮৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এ দুই অঞ্চলের মধ্যে গৃহযুদ্ধে অন্তত ২০ লাখ লোক প্রাণ হারিয়েছে। এর সিংহভাগই দক্ষিণ সুদানের। এ সময় আরব মিলিশিয়াদের হামলায় বাড়িঘর ছেড়েছে দক্ষিণ সুদানের লাখ লাখ বাসিন্দা। জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্বের চাপে অনেকটা বাধ্য হয়েই সুদান সরকার শেষ পর্যন্ত এ গণভোট অনুষ্ঠানে রাজি হয়। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, দক্ষিণ সুদান স্বাধীন হলে এটা হবে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ।

No comments

Powered by Blogger.