আলোচনা- 'সত্য প্রকাশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের ত্রিমুখী অভিযান' by নূরুল কবীর

সংবাদমাধ্যম ও সংবাদকর্মীগণ সম্প্রতি রাষ্ট্রের ত্রিমুখী আক্রমণের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা, এমনকি বিচার বিভাগও, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে।

এই ত্রিমুখী আক্রমণের ভেতর কোনো সমন্বিত যোগাযোগ কিংবা অভিন্ন রাজনৈতিক লক্ষ্য আছে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। কিন্তু এই ভিন্ন ভিন্ন আক্রমণের অভিন্ন কুফল সংবাদমাধ্যমকে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় নিপতিত করে ফেলার উপক্রম করেছে।
সমাজ ও রাষ্ট্রের গণতন্ত্রায়নের জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, বিচারিক প্রভৃতি রাষ্ট্রীয় তথ্যের অবাধ প্রবাহ প্রয়োজন – প্রয়োজন সেই সব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সমাজের নানান শ্রেণীর মানুষের চিন্তাদীপ্ত আলাপ-আলোচনা ও বুদ্ধিদীপ্ত তর্ক-বিতর্ক জারি রাখা।
কিন্তু সংবাদমাধ্যমের ওপর রাষ্ট্রের ভয়াবহ আক্রমণ সমাজ ও রাষ্ট্রের গণতন্ত্রায়নের গণসংগ্রাম এগিয়ে নেওয়ার জন্য অনিবার্য সেই আলাপ-আলোচনা ও তর্ক-বিতর্কের অন্তরায় হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। কেননা, মানুষ তার জীবন ও গণতান্ত্রিক বোধসংশ্লিষ্ট তর্ক-বিতর্ক যেসব ‘মাধ্যমের’ ভেতর দিয়ে চালিয়ে যায়, তার মধ্যে সংবাদপত্র ও রেডিও-টেলিভিশন অন্যতম। সংবাদমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা কিংবা তার গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাকে খর্ব করা এ কারণেই সমাজ ও রাষ্ট্রের গণতন্ত্রায়ন প্রক্রিয়ার পরিপন্থী।
প্রথমেই দেখা যাক, সংবাদমাধ্যমের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, গণমাধ্যমে রাষ্ট্রসংশ্লিষ্ট সত্য প্রকাশের বিরুদ্ধে, কীভাবে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র একটি – সমন্বিত কিংবা অসমন্বিত – অভিন্ন জিহাদে লিপ্ত হয়েছে।
সরকারি দল আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত একজন জাতীয় সংসদ সদস্য, ইস্রাফিল আলম, ৪ অক্টোবর জাতীয় সংসদে উপস্থিত তথ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছেন, সরকার দেশের সংবাদপত্র ও সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য কোনো ‘গাইডলাইন’ কিংবা দিকনির্দেশনা তৈরি করছে কি না। প্রশ্নটি করার প্রাক্কালে, তার জিজ্ঞাসাটিকে শব্দ ও বাক্য দিয়ে গড়ে তুলবার ছলে, তিনি মন্ত্রীবাহাদুরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, সরকারের দিক থেকে একটি ‘গাইডলাইন’ তৈরি করা প্রয়োজন। সাংবাদিকদের জন্য একটি ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ তৈরি করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলতেও ভোলেননি তিনি।
তথ্যমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, বিষয়টি খুব ‘স্পর্শকাতর’। এ রাস্তায় ‘খুব সতর্কভাবে’ এগোতে হবে। তবে সংসদকে তিনি অবহিত করেছেন যে, সরকার সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথাবার্তা চালাচ্ছেন। নেতৃবৃন্দ না কি একটা সরকারি ‘সম্প্রচার নীতিমালা’ তৈরির ব্যাপারে একমতও হয়েছেন, ইত্যাদি। সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মন্ত্রী মহোদয়ের কী আলাপ-আলোচনা হয়েছে, আমরা জানি না। জানার আগ্রহও নেই। কেননা, সমাজের অপরাপর নানান অংশের মতো সংবাদকর্মীদের বিপুল অধিকাংশ দলীয় রাজনৈতিক লাইনে বিভক্ত। সাংবাদিকদেরও রয়েছে দলীয় সমর্থনভিত্তিক দুটো আলাদা ইউনিয়ন। এটা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য, সংবাদপত্রের মাধ্যমে সমাজের স্বাধীন মতামত তুলে ধরে প্রগতিশীল আলাপ-আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক জারি রাখার জন্য, এমনকি সাংবাদিকতার মর্যাদার জন্য, একটি বিপত্তি ছাড়া কিছু নয়। সংবাদকর্মীদের আপন আপন হৃদয় ও মগজে কোনো রাজনৈতিক ভাবাদর্শ জারি থাকা এক কথা, কিন্তু সেই হৃদয় ও মগজকে কোনো না কোনো দলীয় রাজনীতির উপনিবেশে রূপান্তরিত করা আর এক বস্ত্ত। এমতাবস্থায়, যখন যে রাজনৈতিক দলের শাসন দেশ ও রাষ্ট্রের ওপর জারি থাকে, সরকার প্রধানত সেই দলের অনুগামী সাংবাদিক ইউনিয়নের সঙ্গে সলাপরামর্শ করেই তাদের সংবাদপত্র কিংবা সম্প্রচার নীতিমালা নিরূপণ করেন। এটা গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক সাংবাদিকতা পরিপন্থী একটি নেতিবাচক উপসর্গ ছাড়া কিছু নয়।
যা হোক, মাননীয় তথ্যমন্ত্রী কয়েক সপ্তাহ আগে, তার মন্ত্রণালয়ের ভাষায়, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের একটা সভা ডেকেছিলেন। সেখানে সংবাদপত্র ও সম্প্রচারমাধ্যমের জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি খসড়া গাইডলাইন আলোচনার জন্য উপস্থিত করা হয়েছিল। সে এক ভয়ঙ্কর খসড়া। এতই ভয়ঙ্কর যে, মন্ত্রীবাহাদুর নিজেই ওটাকে পুরোপুরি সমর্থন করতে পারেননি। গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি সামান্য শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে, এমন কারো পক্ষেই সেই প্রস্তাবিত নীতিমালা সমর্থন করা সম্ভব নয়। মন্ত্রীপ্রবর নিজেই যেহেতু প্রস্তাবিত নীতিমালায় অনেক আপত্তিকর বিষয়বস্ত্তর সন্ধান পেয়েছেন, সেটা নিয়ে আমরা অতএব এ মুহূর্তে আলোচনা করার প্রয়োজন দেখছি না। কিন্তু যে বিষয়টা এখানে গুরুত্বপূর্ণ, তাহলো তাঁর মন্ত্রণালয়ের ওই প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে সংবাদমাধ্যমের জন্য একটি ‘গাইডলাইন’ ‘উপহার’ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা মূর্তিমান হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় সংবিধানে, কতিপয় শর্তসাপেক্ষে, সংবাদমাধ্যমের যে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে, নাগরিকদের যে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা মঞ্জুর করা হয়েছে, নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য তা মুশকিল এর কারণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কেননা, সাংবিধানিক স্বাধীনতার ওপর ভর করে নানান সংবাদমাধ্যমে লীগের অগণতান্ত্রিক শাসনের এবং লীগ কর্মী-সমর্থকদের অবিচার-অত্যাচার ও অপকর্মের যে খবরাখবর নানান পত্রপত্রিকা ও রেডিও-টেলিভিশনে, নানান মাত্রায়, প্রকাশিত হয়ে চলেছে, তা বর্তমান সরকারের বহুমুখী ব্যর্থতার ছবিটিকে জনগণের সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরছে। এই মুশকিল থেকে মুক্তিলাভের জন্য সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যেই সংবাদমাধ্যমের জন্য সরকারি ‘গাইডলাইন’ কিংবা ‘নীতিমালা’ তৈরি করা আওয়ামী লীগের জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। সেই ‘প্রয়োজন’ মেটাতে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকারি দলের এই ‘প্রয়োজন’ ও ‘স্বার্থ’ জনগণের ‘প্রয়োজন’ ও ‘স্বার্থের’ পুরোপুরি পরিপন্থী।
সংবাদমাধ্যমের প্রতি রাষ্ট্রের আইন পরিষদ কিংবা জাতীয় সংসদের ক্ষোভ সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ভয়ঙ্করভাবে প্রকাশিত হয় ২১ সেপ্টেম্বর। বেশ ক’জন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য সেদিন গোটা সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিষোদগারে অবতীর্ণ হন। কয়েকটি পত্রিকার নাম ধরে এবং একজন সম্পাদকের নামোল্লেখ করে, তাদের তলব করার ‘গণতান্ত্রিক’ প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন কেউ কেউ। কেউ আবার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করে সামরিক শাসন, আধাসামরিক শাসন, ইত্যাদি ডেকে আনবার জন্য প্রধান আসামি হিসেবে শনাক্ত করেন নানান পত্র-পত্রিকাকে। এসব কাগজের সম্পাদকদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যও সরকারকে পরামর্শ দেন কোনো কোনো সংসদ সদস্য। সে এক ভয়াবহ সংসদ অধিবেশন। এ কথা সত্য, দেশের সব পত্র-পত্রিকা ও রেডিও-টেলিভিশন দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বিকাশে নিরন্তর সক্রিয় থাকে না, যেমন দেশের সব রাজনৈতিক দল ও তার সব নেতা-নেত্রী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখা ও তাকে বিকশিত করার জন্য সচেষ্ট থাকেন না। এ কথাও সত্য, কোনো কোনো পত্র-পত্রিকা ও সম্প্রচার সংগঠন বিগত সেনাসমর্থিত অবৈধ জরুরি শাসনকে সক্রিয় সমর্থন জ্ঞাপন করেছিল, একই ভাবে যেমন সত্য অনেক রাজনৈতিক সংগঠন ও তাদের নেতা-নেত্রী সেনাসমর্থিত সরকারকে সমর্থন করেছিলেন।
বিগত ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে এ দেশে অবৈধ আধাসামরিক শাসন এসেছিল দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের ভেতরকার গণতান্ত্রিক আদর্শবিবর্জিত স্থূল ক্ষমতার লড়াইয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট সাংঘর্ষিক রাজনীতির পথ বেয়ে। সেনাসমর্থিত সেই সরকারকে আওয়ামী লীগ অভিনন্দন জানিয়েছিল, অবৈধ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানকে লীগ নেতৃবৃন্দ তাদের হাস্যোজ্জ্বল উপস্থিত দিয়ে ‘রাজনৈতিক ন্যায্যতা’ যুগিয়েছিলেন, তাদের অবৈধ কার্যকলাপকে ভবিষ্যতে ‘আইনগত ন্যায্যতা’দানের আগাম প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিল লীগ। সেই প্রক্রিয়ায় দুই-একটি পত্র-পত্রিকা, কিংবা তাদের সম্পাদকগণ, জড়িত ছিলেন বৈকি! কিন্তু অবৈধ রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা ছিলেন ‘পার্শ্বচরিত্র’ মাত্র। সেই অবৈধ সরকারের যারা কেন্দ্রীয় চরিত্র, মূল কুশীলব, তাদের ব্যাপারে লীগ সরকারের কোনো অভিযোগ নেই – আক্রোশ তো দূরের কথা। কিন্তু সরকারি সংসদ সদস্যরা তাদের আক্রোশ ঝাড়লেন পার্শ্বচরিত্রের ওপর। দুর্বলের প্রতি প্রবলের এই আক্রোশ আসলে কথিত প্রবলের অন্তর্গত দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ মাত্র – নৈতিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক দুর্বলতা ও সাংস্কৃতিক দুর্বলতা। নিজেদের এ দুর্বলতা কাটিয়ে তোলার জন্য সুচিন্তিত ও সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণের পরিবর্তে লীগ সদস্যরা সংবাদপত্রের সাংবিধানিক স্বাধীনতা সংকুচিত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছেন। কেন?
কারণ সংবাদপত্র ও সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন মাত্রায় তাদের অগণতান্ত্রিক আচরণের কথা তুলে ধরে, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার কথা মনে করিয়ে দেয়, বৈধ সুযোগ-সুবিধার অবৈধ ব্যবহারের বিরুদ্ধাচরণ করে, বিরুদ্ধ মতামতের প্রতি সরকারি অসহিষ্ণুতার সমালোচনা করে, ইত্যাদি। দেশের গণতন্ত্রপরায়ণ পত্র-পত্রিকা ও সম্প্রচারমাধ্যমের এটাই তো কাজ। আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল, দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো তো এই ভূমিকাই পালন করেছে। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিএনপি যখন সাংবাদিকদের প্রতি বৈরী আচরণ করেছে, তখন লীগ তার তীব্র সমালোচনা করেছে। কিন্তু আজ সেই সরকারি বৈরিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে লীগ শাসনাধীন রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভা।
রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ থেকে আক্রমণটা এসেছে ভিন্নভাবে। আদালত অবমাননার অভিযোগের মোড়কে। ‘আমার দেশ’ পত্রিকা তার একটি উদাহরণ। দৈনিক ‘আমার দেশের’ বিরুদ্ধে প্রথম হানা আসে অবশ্য নির্বাহী বিভাগের দিক থেকেই। নির্বাহী বিভাগেরই সৃষ্ট এক আইনি জটিলতার ফাঁক ব্যবহার করে প্রথমে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়া হয়। গ্রেফতার করা হয় কাগজটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আসে। অভিযোগের ভিত্তি হিসেবে এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সংবাদকে ব্যবহার করা হয়, যেখানে সর্বোচ্চ আদালতের চেম্বার জজের রায় প্রদানের একটি প্যাটার্ন তুলে ধরা হয়েছিল। কয়েকটি মামলার রায় বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছিল, চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সব কটি আবেদন মঞ্জুর করেছেন – যার প্রধান শিকার হয়েছেন বিরোধীদলীয় কয়েকজন রাজনীতিক।
মামলার শুনানির সময় ‘আমার দেশ’ এর সম্পাদক যখন সংবাদটির ‘সত্যতা’ সম্পর্কে তখনো নিঃসন্দেহ হিসেবে যুক্তি তুলে ধরলেন, দেশের সব চিন্তাশীল মানুষকে বিস্মিত করে দিয়ে উচ্চ আদালত তখন বললেন, সংবাদটি সত্য কি না তাদের পরীক্ষা করার বিষয় নয় – সংবাদটি আদালতের জন্য অবমাননাকর কি না সেটা দেখাই তাদের একমাত্র বিবেচ্য। ফলে সম্পাদকের জেল-জরিমানা হয়ে গেল। তিনি এখন সাজা খাটছেন। সাজার মাত্রাও আইনানুগ মাত্রার চেয়ে বেশি!
আমাদের বিশ্বাস, ন্যায়বিচারের সঙ্গে সত্যের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সত্যের ওপরই প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যায়বিচার। ফলে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারিক কার্যক্রমে সত্যের স্থানই সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকার কথা। কিন্তু কোনো মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি ‘সত্যের’ পক্ষে দাঁড়ালে আদালত বিবেচনায় নেবেন না – এ অবিশ্বাস্য। কিন্তু ‘আমার দেশ’-এর ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। ঘটনাটি শুধু সাধারণ্যে বিস্ময়েরই জন্ম দেয়নি, সংবাদমাধ্যমের ভেতর একধরনের ভীতিরও সঞ্চার করেছে। সত্য প্রকাশের দায়ে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ যদি পত্র-পত্রিকার টুঁটি চেপে ধরতে চায়, আইনসভা যদি চাপিয়ে দেয় নিপীড়নমূলক বিধিবিধান, বিচার বিভাগই তখন সাংবাদিকতার আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠার কথা। কিন্তু বিচার বিভাগের কাছে ‘সত্য’ যদি মর্যাদা হারায়, তাহলে সংবাদকর্মীদের শেষ ভরসাস্থল জনগণ – রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার যিনি উৎস। কিন্তু জনগণ রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে বিভক্ত সাংবাদিকতাকে সম্মান করবে, কিংবা প্রশ্রয় দেবে, বলে আমরা মনে করি না।
সাংবাদিকতা, বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি বৈরী সময় অতিক্রম করছে। এ বৈরিতার সফল মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন পেশাগত সাহসী সঙ্ঘবদ্ধতা। দলীয় রাজনীতির সংকীর্ণ গন্ডির বাইরেই কেবল গড়ে উঠতে পারে সংবাদকর্মীদের সেই পেশাগত গণতান্ত্রিক সঙ্ঘবদ্ধতা। সেই নির্দলীয় পেশাগত সঙ্ঘবদ্ধতা জনগণের শক্তিমান সমর্থন জয় করতে সহযোগিতা করবে। জনগণের সচেতন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর নিষ্পন্ন হয় না।
=================================
খাদ্য আলোচনা- 'খাদ্য উৎপাদনের বাধা দূর করাই ক্ষুধার বিরোদ্ধে প্রধান সংগ্রাম' by ফরিদা আক্তার  রাজনৈতিক আলোচনা- ' কোন পথে ক্ষমতা! হস্তান্তর নয় রূপান্তর চাই   আলোচনা- 'শিল্পনীতি-২০১০:সামর্থ্যের অপব্যবহারে পঙ্গ  আলোচনা- যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিদের স্বার্থ রক্ষাকারী ইসরাইল লবি ইভটিজং আলোচনা- নারী উৎপীড়ক সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া  রাজনৈতিক আলোচনা- 'ছাত্ররাজনীতি তার হারানো গৌরব ফিরে পাক by ফরহাদ মাহমুদ  আলোচনা- 'দেশ কাঁপানো নূরজাহান' by আবদুল হামিদ মাহবুব  ইতিহাস- 'বাংলা ভাষার স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ' by রফিকুল ইসলাম  গল্পালোচনা- 'অরণ্যে যুদ্ধ' by অরুন্ধতী রায়  রাজনৈতিক আলোচনা- 'বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা আর ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ  নিবন্ধ- 'আইলা, কৃষি এবং কোপেনহেগেন প্রাপ্তি'  গল্পিতিহাস- 'এত যে সফলতা, তবুও বিফলতা' by সনৎ কুমার সাহা  আলোচনা- 'মুনাফার মালা গলায় ঝুলিয়ে পুঁজিবাদীরা মানবজাতি ধবংসের ব্যবস্থা করছে by বদরুদ্দীন উমর  গল্পালোচনা- 'স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি' by লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান  আলোচনা- 'টেলিভিশন কি পত্রিকার প্রতিদ্বন্দ্বী


সাপ্তাহিক বুধবার এর সৌজন্যে
লেখকঃ নূরুল কবীর


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.