সাহিত্যালোচনা- 'মারিও ভার্গাস ইয়োসা'র সাহিত্যে নোবেলের রাজনৈতিক মোড়' by ফ্লোরা সরকার

পেরুর রাজনীতিক লেখক মারিও ভার্গাস ইয়োসা এবার সাহিত্যে নোবেল পেলেন। এবারের ফ্রাঙ্কফুট বইমেলায় সাহিত্যে নোবেল লোরিয়েটের নাম যখন দাবানলের মতো ছড়িয়ে গেল

তখন আর্জেন্টিনার বিখ্যাত নারী সাহিত্যিক লুইসা ভেলেনজুয়েলা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে মেক্সিকোর দৈনিক ‘লা জর্দানা’র সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বলে উঠলেন-‘‘কী ভয়ঙ্কর! রাজনৈতিক মোড়টি শেষ পর্যন্ত মারিওর দিকেই গেল, এ ক্ষেত্রে আমি হলে কার্লোস ফুয়েনসকে পছন্দ করতাম।’’ টুইটার ওয়েবসাইটের একজন ব্যবহারকারী এবারের নোবেল বিজয়ী মারিও ভার্গাস ইয়োসা সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন-‘‘এবারের সাহিত্যের নোবেল পুরস্কারটি বর্ণবাদী, ফ্যাসিস্ট, প্রো-হিসপানিক, স্বদেশ ও ইন্ডিজেনাস সংস্কৃতির পরিপন্থী এবং রক্ষণশীলতার প্রতিভূ লেখক মারিও ভার্গাস ইয়োসাকে দেওয়া হয়েছে, লাতিন আমেরিকা, যে দেশটি ইউরোপের পশ্চাৎভূমি নামে পরিচিত।’’ নোবেল বিজয়ী মারিও সম্পর্কে এসব মন্তব্যের কারণ তিনি একজন বিতর্কিত লেখক।
বিতর্কিত তিনি দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। বিতর্কিত হওয়ার অনেক কারণ মারিও তার কর্মজীবনেই শুরু করেছিলেন। সে সম্পর্কে যাওয়ার আগে লাতিন আমেরিকান সাহিত্য সম্পর্কে আমরা অল্পবিস্তর ধারণা নিয়ে নেই।
প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ফার্নান্দ ব্রদেল তার সুলিখিত বই ‘এ হিস্ট্রি অব সিভিলাইজেশন’-এ লাতিন আমেরিকাকে বলেছেন ‘The other new world’। লাতিন আমেরিকা সম্পর্কে এ অভিধাটি প্রথম ব্যবহার করেন ফরাসিরা, তাদের নিজেদের স্বার্থেই, ১৮৬৫ সালে। দুই আমেরিকার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের মধ্যে ‘লাতিন আমেরিকা’ ছিল অপেক্ষাকৃত ধনী, ঈর্ষাতুর দৃষ্টিতে সারা ইউরোপ তখন তাকিয়ে দেখত। পরে ভাগ্যের চাকাটি ঘুরে যায়। তা ছাড়া লাতিন আমেরিকান সাহিত্য সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। প্রথম ভুল ধারণাটির কারণ হলো বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে লাতিন আমেরিকান সাহিত্যে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য ফিকশন লেখকের আবির্ভাব ঘটে। এ সময়টাকে ‘The Boom of the Latin American Novel’ অভিধায় ভূষিত করা হয়। এর ফলে এই ভুল ধারণার উৎপত্তি হয় যে লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের উন্নয়ন হলো সাম্প্রতিক এবং এর কোনো পূর্বসূরি নেই।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আইবেরিয়ান সাম্রাজ্যের স্বভাব অনুযায়ী লাতিন আমেরিকা পশ্চিমের বিশেষ করে স্পেনের সঙ্গে তাল রেখে সাহিত্যচর্চার সুযোগ পেয়েছে সেই ষোড়শ শতাব্দী থেকে। আগের ভুলের লেজুড় ধরে আরেকটি ভুল ধারণা করা হয় যে লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের স্বভাব এবং বিষয় গ্রাম্য, যার কারণ এর ইতিহাস এবং ভৌগলিক অবস্থান। কিন্তু উত্তর আমেরিকার ঔপনিবেশিক জীবনযাপনের সঙ্গে বৈষম্য ছিল স্প্যানিশ সাম্রাজ্যের, যা বিশেষভাবে গড়ে উঠেছিল সমৃদ্ধ শহরগুলোকে ঘিরে। এই সাম্রাজ্যের বৈশিষ্ট্য ছিল, বিশদীকৃত রাজপ্রতিনিধি সভা, মহানাগরিক কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা চলত এবং মাঝে মাঝে তাদের ছাপিয়েও যেত।
লাতিন আমেরিকার সাহিত্য প্রথম থেকেই মূলত নাগরিক এবং বাস্তবধর্মী ছিল। ঔপনিবেশিক সময়ে বুদ্ধিজীবী জীবন পরিচালিত হতো ‘নিউ-স্কল্যাস্টিসিজম’ দ্বারা। জোর দেওয়া হতো ধ্রুপদী এবং খ্রিস্টীয় সূত্রগুলোর ওপর, রেটরিক এবং যৌক্তিক পান্ডিত্যের ওপর।
এরপর উনিশ শতকের প্রথম দশকের স্বাধীনতা আন্দোলনের ফল হিসেবে লাতিন আমেরিকান সাহিত্য একটি স্বয়ংসচেতনক্রিয়া হিসেবে গড়ে উঠতে থাকল এবং প্যারিস হয়ে উঠল লাতিন আমেরিকার শৈল্পিক, বুদ্ধিবাদী এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ের কেন্দ্রবিন্দু আর লাতিন আমেরিকা ইউরোপের পশ্চাৎভূমি হিসেবে পরিচিত হলো। প্যারিস এমন একটি শহর যেখানে বিভিন্ন দেশের শিল্পী-সাহিত্যিক মিলিত হন মতবিনিময়ের জন্য, যা আজ পর্যন্ত অব্যাহত আছে। উনিশ শতকের দ্বিতীয় এবং শেষভাগে রিয়ালিস্টিক এবং ন্যাচারেলিস্টিক ঝোঁক ঢুকে পড়েছিল লাতিন আমেরিকার মধ্যে। স্বাধীনতার পর, লাতিন আমেরিকার বুদ্ধিজীবীরা মুখোমুখি হলেন একটি বাধ্যতামূলক কর্তব্যের আর তা হলো অতীতকে নতুন করে উদ্ভাবন করা। ঔপনিবেশিক শাসনের বছরগুলোকে কীভাবে একটি উৎসের গল্পে পরিণত করা যায় সেই চিন্তায় তারা সচেষ্ট হতে থাকলেন। এই কাজের পুরোধা ব্যক্তিটি ছিলেন রিকার্ডো পালমা, যিনি পেরুর জাতীয় লাইব্রেরির উপস্থাপক এবং বহুদিন পর্যন্ত তার ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পালমার পদ্ধতিটি ছিল ঔপনিবেশিক সময়ের বিভিন্ন দিকের ওপর মনোযোগী হওয়া। এক মনোরঞ্জনকারী ছকের মধ্যে গঠন করা হয় সাধারণ মানুষের ধর্মবিশ্বাস এবং বিশ্বাসযোগ্যতা, একটি আপাতমধ্যযুগীয় বিশ্বাস অলৌকিকতা, যা লাতিন আমেরিকার ফিকশনে ‘Magic Realism’ বা ‘জাদুবাস্তবতা’ নামে পরিচিত। প্রচলিত বাস্তবের অাঁধারে সব সত্য প্রকাশ করা যায় না বলে বিকল্প নন্দন ও বিকল্প গ্রন্থনার প্রস্তাব করা। বাস্তবের জমিতে থেকেও বাস্তববহির্ভূত, যে সাহিত্যরীতি বিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে লাতিন আমেরিকান সাহিত্যে প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। আলেহো কার্পেন্তিয়ের, হুয়ান রুলফো, গ্যাব্রিয়াল গার্সিয়া মার্কেজসহ আরো অনেক লেখক এই ধারায় লেখা শুরু করেন।
মারিও ভার্গাস ইয়োসা যার পুরো নাম জর্জ মারিও পেদ্রো ভার্গাস ইয়োসা ১৯৩৬ সালের ২৮ মার্চ পেরুর আরেকুইপা শহরে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই তার বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে মারিওকে নিয়ে যাওয়া হয় বলিভিয়ার কোচাম্বায় যেখানে ১০ বছর পর্যন্ত তিনি মা এবং মাতামহ-মাতামহীর সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন, যতদিন না পর্যন্ত মা-বাবা তাদের পরস্পর ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিয়ে পুনর্বার পেরুতে ফিরে আসেন। তারপর স্বল্পবয়সে মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে পড়াশোনা করে মারিও মাদ্রিদে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পেরুতেই সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর ১৯৫১ সালে তার প্যারিসে গমন। ১৯৫৫ সালে তার থেকে তের বছরের বড় সম্পর্কে চাচি আন্ট জুলিয়া উর্কিদিকে বিয়ে করেন, তখন তার বয়স মাত্র ১৯ বছর। কিন্তু পেরুভিয়ন আইনানুযায়ী বিয়ের ন্যূনতম বয়স ২১ বছর না হওয়ায় গোপনে বিয়ে করতে হয় তাদের। যার কিছুটা আভাস আমরা তার অন্যতম উপন্যাস ‘আন্ট জুলিয়া অ্যান্ড দ্য স্ক্রিপরাইটার’ (প্রকাশকাল ১৯৭৭) এ পাই। কিন্তু এই বিয়ে বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৬৩ সালে আন্ট জুলিয়ার কাছ থেকে তালাক হওয়ার পর ১৯৬৫ সালে তার কাজিন প্যাট্রিশিয়া ইয়োসাকে বিয়ে করেন।
কিছু ছোটগল্পের সংকলন প্রকাশের মাধ্যমে ১৯৫৯ সালে মারিওর লেখক-জীবনের যাত্রা শুরু। ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয় উপন্যাস ‘দ্য টাইম অব দ্য হিরো’, যেখানে তিনি লিওনসিও প্রাদো সামরিক অ্যাকাডেমিতে যৌনতা ও দুর্নীতির বিষয়ে তার সঞ্চিত অভিজ্ঞতা হালকা মোড়কে তুলে ধরেন। ফল হিসেবে বিদ্যালয়প্রাঙ্গণে এই উপন্যাসের কয়েক শ অনুলিপি পোড়ানো হয় কিন্তু ইতোমধ্যে বইটি আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসিত হয়। ১৯৬৬ সালে তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য গ্রিন হাউস’ প্রকাশিত হলে তার খ্যাতি স্থায়ী হয় এবং ১৯৬৭ সালে ভেনিজুয়েলায় রোমিউলো গাইয়েগোস পুরস্কার লাভ করেন। এভাবে একে একে দ্য স্টোরিটেলার, এ ফিস ইন দ্য ওয়াটার, দ্য ফিস্ট অব দ্য গোটসহ আরো উপন্যাস এবং বেশকিছু নন ফিকশন ও নাটক রচনা করেন, সঙ্গে প্রেমিও দে লা ক্রিতিকা এস্পানোলা, রোমুলো গায়েগোস ইন্টারন্যাশনালসহ বেশকিছু পুরস্কার। তার শ্রেষ্ঠ কীর্তির মধ্যে ‘দ্য টাইম অব দ্য হিরো’ এবং ‘দ্য ওয়ার অব দ্য এন্ড অব দ্য ওয়ার্লন্ড’কে ধরে নেওয়া হয় সাধারণভাবে। ‘দ্য ওয়ার অব দ্য এন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ উপন্যাসটিতে মহাকাব্যের রীতিতে লাতিন আমেরিকার পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। তার নিজের মতে-‘‘এটি লাতিন আমেরিকানবাসীর ধর্মগ্রন্থ। এই গ্রন্থে পাঠক প্রথম আবিষ্কার করবেন লাতিন আমেরিকানরা কী নন। এর চেতনা ইউরোপ, আফ্রিকা, প্রাক্হিসপানিক, আমেরিকা বা স্বদেশজাত সমাজ নয় তবে একই সঙ্গে এটি সবকিছুর সংমিশ্রণে একটি জগৎ তৈরি করা হয়েছে, সাহিত্য এবং বুদ্ধিসত্তার অপূর্ব সংমিশ্রণ।’’
১৯৮২ সালে তার এক লেখায় তিনি বলেন, ‘‘সাহিত্য রাজনীতির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।’’ এ সম্পর্কে তাকে এক সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি বোঝাতে চেয়েছি যে সাহিত্য, রাজনীতির চেয়ে অনেক বেশি প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে এবং একজন লেখক সাহিত্য ও রাজনীতিকে একই পঙ্ক্তিতে বসাতে পারেন না, যদি না তিনি লেখক অথবা রাজনীতিবিদ হিসেবে ব্যর্থ হন। আমরা সব সময় মনে রাখব যে রাজনৈতিক কাজ ক্ষণজীবী, যেখানে সাহিত্যকর্ম অনেক সময়ের জন্য টিকে থাকে।’’
১৯৮৮ সালে সরকার পতনের পর পেরুতে তিনি লিবারেটেড দলের প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দাঁড়ান এবং আলবার্তো ফুজিমোরির কাছে ১৯৯০ সালের নির্বাচনে হেরে যান এবং পরবর্তী সময়ে স্পেনে চলে গিয়ে স্প্যানিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। নির্বাচনে জিতলে মারিও কী করতেন এখন তা বলা দুরূহ হলেও তিনি মূলত নির্বাচনের চেয়ে নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতির ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করেন, যার ফলে তিনি স্বৈরশাসক লিওনিদাস ট্রুজিলোর যেমন সমালোচনা করেন তেমনি এককাতারে ফেলেন ফুজিমোরিকেও। তবে তার বিশ্বাস, একজন লেখক রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ এড়িয়ে যেতে পারেন না। একই সঙ্গে তিনি এও মনে করেন, লেখকরা রাজনীতিতে অংশ্রগ্রহণ এবং বিচারকের মতো মতামত তৈরি করলেও তারা কখনই রাজনীতিকে সাহিত্যের অঙ্গনে আক্রমণাত্মক বা হিংসাত্মক হবেন না।
মারিও সাহিত্যের অঙ্গনে বেশ আক্রমণাত্মক না হলেও তার কিছু মতামত ইতোমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠায় সমালোচকদের কাছে তিনি খানিকটা বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। যেমন তিনি ইরাক যুদ্ধের প্রতি তার পক্ষপাতিত্বের কথা বলেছেন। মার্গারেট থ্যাচারের লিবারেল দলের প্রতি তার আনুগত্য আমরা অতীতে দেখেছি। কিউবার ফিদেল ক্যাস্ট্রো (একসময় ক্যাস্ট্রোর মতাদর্শের প্রতি তিনি সমর্থন জ্ঞাপন করেছিলেন) এবং ভেনিজুয়েলার হুগো শ্যাভেজের সমালোচনা করে বলেন, দুজনেরই ক্ষমতা ত্যাগ করা উচিত, কারণ তারা তাদের দেশের উন্নতির পথে প্রধান বাধা। তার মতে, ভেনিজুয়েলায় টোটালেটেরিয়ান কমিউনিজম ত্যাগ করা উচিত। রাজনীতিতে প্রথম দিকে বামপন্থার সমর্থক হলেও পরবর্তীতে তার রক্ষণশীল অবস্থান লক্ষ্য করার মত। তার রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে যখন উপন্যাসের মতাদর্শের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় এবং এমন একজন লেখককে যখন সাহিত্যের সর্বোচ্চ পুরস্কারটি প্রদান করা হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই পাঠক-লেখকসমাজ বিস্মিত না হয়ে পারেন না। আর তাই আমরা সাহিত্যিক লুইসার মুখে সেই বিস্ময়কর বাণীটি শুনি।
তবে একজন চিন্তাশীল লেখকের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে এবং সেই মতাদর্শের প্রতিফলন কিছুটা হলেও তার লেখায় প্রতিফলিত হয়। তবু তার লেখার প্রতি আমরা সম্মান প্রদর্শন করি। সম্মান এই কারণে নয় যে তিনি একজন নোবেল লোরিয়েট, সম্মান একজন লেখকের স্পষ্ট মতাদর্শ প্রদর্শনের জন্য। তার লেখায় একদিকে যেমন তিনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ঐতিহাসিক বিষয়বস্ত্ত নিয়ে তার উপন্যাস নির্মাণ করেছেন (দ্য টাইম অব দ্য হিরো) তেমনি পীড়নদায়ক বাস্তবতার মাঝে ব্যক্তি-স্বাধীনতার সংগ্রামকেও তুলে এনেছেন (কনজারভেশন ইন দ্য ক্যাথেড্রেল)। তার উপন্যাসের ধারা অধিবাস্তব বা পরাবাস্তবতার ওপর নির্মিত হলেও, মার্কেজ বা হুয়ান রুলফোর মতো জাদুবাস্তবতার আদলে নির্মাণ করেননি। তবে তার প্রধান বিষয় ছিল ক্ষমতার কাঠামো এবং ব্যক্তির প্রতিরোধবিষয়ক সংগ্রামের কাহিনী। ব্যক্তি ও সমাজের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তার কথা তার ভেতরে সব সময় কাজ করেছে। বিশেষত লাতিন আমেরিকার ইতিহাসের বিভিন্ন কোণে পেরুর মতো দেশে যেখানে নিজেরা নিজেদের মধ্যে ক্রমাগত দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে এবং গৃহযুদ্ধের মাঝখানে প্রচন্ড উৎপীড়ন ঘটেছে শুধু পারস্পরিক অন্ধ মতবাদের কারণে, এ রকম পরিস্থিতিতে বিদ্রোহ করার জন্য কলম হাতে নিতে হয় বইকি। সেই কলম ধরার মাঝে তার প্রতিক্রিয়াশীল মতাদর্শ, টোটালেটেরিয়ানের বিরুদ্ধ মতামত ব্যক্ত হতে পারে, যে মতামতের সঙ্গে সবাই একমত নাও হতে পারেন, সেই উপন্যাসগুলো কতটা তার রক্ষণশীল রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতিফলন এবং কতটা যৌক্তিক তা তার উপন্যাস পড়ার আগে আমরা বলতে পারি না। তাই এখন আমরা মারিও ভার্গাস ইয়োসার লেখা উপন্যাসগুলো পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
=========================
রাজনৈতিক আলোচনা- 'জনগণ ও সেনাবাহিনীর বিপজ্জনক বিচ্ছিন্নতা by নূরুল কবীর  রাজনৈতিক আলোচনা- 'নির্মানবীয় রাজনীতি ও জনসমাজের বিপজ্জনক নীরবতা by নূরুল কবীর  আলোচনা- 'সত্য প্রকাশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের ত্রিমুখী অভিযান by নূরুল কবীর  খাদ্য আলোচনা- 'খাদ্য উৎপাদনের বাধা দূর করাই ক্ষুধার বিরোদ্ধে প্রধান সংগ্রাম' by ফরিদা আক্তার  রাজনৈতিক আলোচনা- ' কোন পথে ক্ষমতা! হস্তান্তর নয় রূপান্তর চাই   আলোচনা- 'শিল্পনীতি-২০১০:সামর্থ্যের অপব্যবহারে পঙ্গ  আলোচনা- যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিদের স্বার্থ রক্ষাকারী ইসরাইল লবি ইভটিজং আলোচনা- নারী উৎপীড়ক সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া  রাজনৈতিক আলোচনা- 'ছাত্ররাজনীতি তার হারানো গৌরব ফিরে পাক by ফরহাদ মাহমুদ  আলোচনা- 'দেশ কাঁপানো নূরজাহান' by আবদুল হামিদ মাহবুব  ইতিহাস- 'বাংলা ভাষার স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ' by রফিকুল ইসলাম  গল্পালোচনা- 'অরণ্যে যুদ্ধ' by অরুন্ধতী রায়  রাজনৈতিক আলোচনা- 'বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা আর ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ  নিবন্ধ- 'আইলা, কৃষি এবং কোপেনহেগেন প্রাপ্তি'  গল্পিতিহাস- 'এত যে সফলতা, তবুও বিফলতা' by সনৎ কুমার সাহা  আলোচনা- 'মুনাফার মালা গলায় ঝুলিয়ে পুঁজিবাদীরা মানবজাতি ধবংসের ব্যবস্থা করছে by বদরুদ্দীন উমর  গল্পালোচনা- 'স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি' by লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান  আলোচনা- 'টেলিভিশন কি পত্রিকার প্রতিদ্বন্দ্বী


সাপ্তাহিক বুধবার এর সৌজন্যে
লেখকঃ ফ্লোরা সরকার


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.