ভ্রমণ- 'সাগরকন্যার তীরে' by এস এম ওমর ফারুক

দিনটির তুলনা হয় না অন্য আর কোনো দিনের সাথে।
 
কারণ ঐদিন আমরা কয়েকজন ভাই এক চমৎকার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলাম। সিদ্ধান্ত ছিল এ জার্নি টু কুয়াকাটা।
রমজানের রোজার মধ্যে পর্যালোচনা হচ্ছিল ঈদের পর আমরা কোথাও হারিয়ে যাবো। এ যেন ঈদের পর আর একটি ঈদ। কাক্সিক্ষত সেই দিনটির জন্য আমরা সবাই অপেক্ষার প্রহর গুনছি। আসলেই কি যাওয়া হবে, নাকি হবে না এই আশঙ্কায় আমাদের কেউ কেউ ছিল দিশেহারা।
যাক, শত জল্পনা আর কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ মুহূর্তে আমরা সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছিলাম। যদিও আমাদের কিছু ভাই বিশেষ এই সফরে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। তবুও আমরা তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, যার কারণে শিক্ষাসফরটি পরিপূর্ণ করতে পারা গেল না।
এবার যাওয়ার পালা।
ঘড়ির কাঁটা এগোচ্ছে তার নিজস্ব গতিতে।
যাহোক শেষ পর্যন্ত বিকেল ৪টায় যাত্রা শুরু হলো।
আমাদের এক গ্রুপকে আগেই পাঠিয়ে দেয়া হলো লঞ্চ বুকিং দেয়ার জন্য। চমকে যাওয়ার মতো কথা! লঞ্চ বুকিং! আসলে লঞ্চের ব্যাপারটা এমনই। আগে থেকেই এখানে জায়গা নির্ধারণ করে নিতে হয়। আমাদের প্রায় সবারই এটাই প্রথম লঞ্চ ভ্রমণ। লঞ্চ ভ্রমণ যে এত্ত মজার তা নিজে না করলে বলে বোঝানো যাবে না। এখানে সব ব্যবস্থাই আছে। যেন একটা বাড়ি।
সারা রাত লঞ্চে থেকে ফজরের নামাজ পড়লাম বরিশাল সিটিতে। আমাদেরকে রিসিভ করতে কিশোরকণ্ঠ পাঠক ফোরামের স্থানীয় সদস্য ভাইয়েরা আগে থেকেই এখানে এসে উপস্থিত। তাদের আন্তরিকতায় মনে হলো এ যেন জান্নাতি পরিবেশ। এবার শুরু হলো কখন কোথায় যাবো তার পরিকল্পনা। শেষে সিদ্ধান্ত হলো বরিশাল সিটিতে বেড়ানোর পর আমরা যাব কুয়াকাটায়।
ইজঞঈ-এর গাড়িতে করে সকাল সাড়ে ১১টায় আমরা যাত্রা শুরু করলাম কুয়াকাটার উদ্দেশে। প্রায় ৬-৭ ঘণ্টার জার্নি শেষে পৌঁছলাম বহু প্রত্যাশিত সেই সাগরকন্যা কুয়াকাটায়।
এত দীর্ঘ পথ যার বিবরণ দেয়া সংক্ষিপ্ত পরিসরে সম্ভব নয় তবে এতটুকু বলা যায় যে পাঁচটা ফেরি পার হতে হয়, যা আমাদের জন্য বেদনার হলেও প্রতীক্ষমাণ সেই সাগরকন্যার তীরে পৌঁছার পর সব ভুলে গেলাম।
মনের মধ্যে এতটুকু ভয় যে আমরা কুয়াকাটায় যাব সূর্যি মামাকে বিদায় দেয়ার জন্য যদি না পারি তবে এটা হবে আমাদের সফরের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। যাক, এ যেন আল্লাহর এক অশেষ কৃপা যার মেহেরবানিতে আমরা একেবারে শেষ মুহূর্তে গিয়ে পৌঁছলাম, যখন সূর্যি মামা বিদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
কুয়াকাটা! আল্লাহর যত রকম চমৎকার সৃষ্টি আছে তার মধ্যে অন্যতম একটা। সাগরকন্যা যার অপর নাম। এখানে এলেই না বোঝা যাবে কী অপূর্ব সেই সৃষ্টি! এখানে আল্লাহর রহমত যেন অবারিত।
রাত! আশ্চর্যজনক ভয়ের এক আনন্দঘন পরিবেশ সাগরকন্যার তীরে।
আমরা হামদে বারি তায়ালা, দেশাত্মবোধক গান, বিভিন্ন সুর-সঙ্গীত আর কৌতুকের মাধ্যমে রাতের একাংশ কাটিয়ে দিলাম। আমাদের সফর সঙ্গীদের সুরেলাকণ্ঠে আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, সাগর নদী আর পাহাড় বনে, পাখিদের গুনগুন গুঞ্জরণে এসব গান সাগরের উন্মাদনাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল বহুগুণে। সেই সাথে আমাদের মনকেও।
খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে ওখানকার প্রায় সব মানুষের সাথে আমাদের পরিচয় হলো। মনে হলো তারা যেন আমাদের বহুদিনের পরিচিত। আমাদেরকে আপ্যায়ন আর সবকিছু ঘুরিয়ে দেখানোটা তারা তাদের দায়িত্ব মনে করল। জানি না এটা মহান রবের অস্বাভাবিক ভালোবাসা কি না! প্রশ্ন দেখা দিল রাতে থাকব কোথায়? অবশেষে পেলাম আমাদের আপাতত থাকার জায়গা। সবাই মিলে একসাথে থাকার সে কী মজা!
সকালে ফজরের নামাজ পড়েই সবাই আবার ব্যস্ত সূর্যি মামাকে রিসিভ করতে। কিন্তু মামা যে একটু দূরে অবস্থান করছেন। তার নাগাল পেতে আমাদের কেউ ছুটল পায়ে হেঁটে, কেউবা দৌড়িয়ে, কেউ আবার মোটরসাইকেলে ঝাউবনের পাশ দিয়ে। শুরু হলো ছবি তোলার পালা। আমি ঝিনুক কুড়াতে শুরু করলে অনেকেই এসে আমার সাথে যোগ দিল। মামাকে রিসিভ করেই আমরা সবাই নিজেদের লুটিয়ে দিলাম সাগরকন্যার নীল জলে। বিশাল এই সাগরের বুকে সবাই মিলে এক সাথে গোসল করতে যে কী মজা তা বলে  বোঝাতে পারব না।
এবার বিদায়ের পালা। প্রকৃতির এই নৈসর্গিক এক জায়গা থেকে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে ফিরে যেতে হবে নিজেকে তা বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। এত সুন্দর, অপরূপ সৃষ্টির মাঝখান থেকে বিদায় নেয়াটা একটু কঠিনই বটে। তারপর সব মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে চলে এলাম সাগরকন্যার তীর থেকে।
টানা ৫-৬ ঘণ্টা গাড়িতে করে আমরা চলে এলাম পটুয়াখালীর দুমকিতে নজরুল ভাইয়ের বাড়িতে। সেখানে আমরা দুপুরে ইলিশসহ আরও অনেক রকম মজার মজার খাবার উপভোগ করলাম।
নজরুল ভাইয়ের বাড়ি থেকে সন্ধ্যায় ফিরে এলাম বরিশাল নৌবন্দরে। তারপর আবার সেই লঞ্চে সারারাত অবস্থান করে সকালে এসে পৌঁছলাম আমাদের সবার গন্তব্যস্থল ঢাকায়। ঢাকায় ফিরে এলেও আমাদের মন যেন পড়ে রইল সেই সাগরকন্যার তীরে, মায়াবী নীল জলের ঢেউয়ের ভাঁজে ভাঁজে।
===========================
ইতিহাস- সংবাদপত্রে যেভাবে সংবাদ এলো by জে হুসাইন  ভ্রমণ- 'আমার দেখা নরওয়ে' by অধ্যাপিকা চেমন আরা  রহস্য গল্প- 'আসল খুনি' সৌজন্যে কিশোরকন্ঠ  আলোচনা- 'নজরুল গবেষক শাহাবুদ্দীন আহমদ' by শরীফ আবদুল গোফরান  ফিচার- 'মোরা বড় হতে চাই' by আহসান হাবীব ইমরোজ  ইসলামী গল্প- 'সেনাপতির নির্দেশ' by কায়েস মাহমুদ  ইসলামী গল্প- 'বয়ে যায় নিরন্তর' by কায়েস মাহমুদ  ইসলামী গল্প- 'ভালোবাসার বিশাল' by আকাশ কায়েস মাহমুদ  গল্প- 'একজন ভোলা চাচা' by দিলারা মেসবাহ  গল্প- 'বীথির ভাবনা' by হেলাল আরিফীন গল্প- 'স্বপ্ন' by তাওহীদুর রহমান গল্প- 'আবিরের মাধবী লতা' by নিয়াজুল হাসান জুয়েল মোল্লা  ফিচার- 'ঝাড়ুদার মাছ' by আরিফ হাসান  গল্প- 'এগিয়ে যাবার স্বপ্ন' by মাহফুজা জাহান তাকিয়া  গল্প- 'লাল ফ্রক' by আবু রায়হান মিকাঈল  প্রবন্ধ- ‘আর নয় শিশুশ্রম' by জাকারিয়া হাবিব পাইলট  কিশোর ফিচার- 'আমার ঘুড়ি আকাশ জুড়ি' by মাসুম কবির কিশোর ফিচার- 'চাই চীনাবাদাম' by শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া



কিশোরকন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ এস এম ওমর ফারুক


এই লখা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.