ক্ষুদ্রঋণের সুদ ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতিতে হিসাবের প্রস্তাব

দেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) কর্মকাণ্ডে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সুরাহা হতে যাচ্ছে বহুল বিতর্কিত ও আলোচিত এনজিও খাতের, বিশেষত ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার নির্ধারণ পদ্ধতিরও।
অর্থাৎ নির্দিষ্ট সুদহারে (ফ্লাট রেট) ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর বদলে ঋণ দানে আসছে ক্রমহ্রাসমান সুদের হার পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বর্তমানে ঋণ দিয়ে থাকে।
আর সুদের হার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ হতে পারবে বলেও প্রস্তাব করেছে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)।
শুধু সুদের হার নয়, এনজিও খাতের সার্বিক কর্মকাণ্ডেই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে এমআরএ সূত্র। এমআরএ সূত্র আরও জানায়, সবকিছুই করা হচ্ছে ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতাদের স্বার্থের দিক বিবেচনা করে।
এ ছাড়া ঋণের কিস্তির সময়কাল, সঞ্চয়ের বিপরীতে সুদ, গ্রেস পিরিয়ড এবং ঋণ প্রক্রিয়াকরণ মাশুলের বিষয়েও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নিবন্ধিত ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে যা বাধ্যতামূলকভাবে পরিপালন করতে হবে।
এসব বিষয়ে শিগগির এমআরএ একটি নির্দেশনা জারি করবে বলে জানা গেছে।
এমআরএ সূত্র জানায়, দেশের জনগণকে নানা বিষয়ে সচেতন করা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বল্প পরিমাণে ঋণ বিতরণ করা এনজিও দেশের বড় একটি খাত। তবে খাতটিতে নানা ধরনের সমস্যা বিদ্যমান, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সাধারণের ওপর।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও এমআরএর চেয়ারম্যান আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার নির্ধারণসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, এনজিও ব্যুরোর প্রতিনিধি, ক্রেডিট ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (সিডিএফ) নির্বাহী পরিচালক আবদুল আউয়াল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক বাকী খলীলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, এই বৈঠকেও নির্ধারিত সুদহারে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানানো হয়েছে। বৈঠক শেষে আতিউর রহমান সিডিএফের নির্বাহী পরিচালককে ডেকে নিয়ে বলেন, ‘সুদ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এবার এর একটা সমাধান করুন। আর কত আলোচনা করবেন।’
জানা গেছে, ঋণ বিতরণের আগেই এনজিওগুলো সম্ভাব্য ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে কিছু সঞ্চয় নিয়ে নেয়। বর্তমানে এ হার ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। এমআরএ বলছে, এটি অন্যায়। ঋণ বিতরণের আগেই আর সঞ্চয়ের জন্য অর্থ জমা নেওয়া যাবে না। গ্রাহকদের জন্য বিষয়টি বাধ্যতামূলক বা ঐচ্ছিক আকারে রাখতে পারে এনজিওগুলো, তবে অবশ্যই তা বিতরণের পর।
আবার নির্ধারিত হারে উচ্চ সুদ নিলেও ঋণগ্রহীতাদের সঞ্চয়ের বিপরীতে এরা সুদ দেয় সামান্যই। এই হার ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। এমআরএর মতে, এটি ৫ থেকে ৭ শতাংশ করা হবে।
অন্যদিকে, ঋণ বিতরণের পর গ্রহণকারীকে বর্তমানে কোনো গ্রেস পিরিয়ড বা ছাড় দেওয়া হয় না। অর্থাৎ বিতরণের পরের সপ্তাহ থেকেই কিস্তি উত্তোলন শুরু হয়। অন্যদিকে বছর ধরা হয় ৪৫ থেকে ৪৬ সপ্তাহে। নতুন নির্দেশনায় সাপ্তাহিক কিস্তি হবে ৫০টি। আর গ্রেস পিরিয়ড থাকবে দুই সপ্তাহ। অর্থাৎ এক বছরের পূর্ণ সময়ের মধ্যেই সব কিস্তি নিতে হবে।
সূত্র জানায়, আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে পিকেএসএফের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠেয় একটি বৈঠকে বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হবে। তারপর আগামী ২ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় এমআরএর পর্ষদ সভায় উপস্থাপন করা হবে সেগুলো।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বেসরকারি সংস্থা আশার প্রেসিডেন্ট সফিকুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এনজিওগুলোর ক্ষেত্রে সুদের হার নির্ধারিত থাকাটাই ভালো। কারণ চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার ঋণের ওপর ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতিতে সুদ আরোপ করলে জটিলতা বাড়বে।
আশার প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, বিশ্বের সব দেশের তুলনায় কম খরচে ঋণ বিতরণ করা হয় বাংলাদেশে, মাননীয় গভর্নরও তা জানেন। তারপরও বিষয়টি সরকারের কাউকে বিশ্বাস করানো যায় না এবং দুঃখজনক যে সরকার তা যাচাই করেও দেখে না।
তবে এ ব্যাপারে বাকী খলীলী প্রথম আলোকে বলেন, সুদের হার ক্রমহ্রাসমান হওয়াটা খুব জরুরি। বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ পদ্ধতিতে সুদ হিসাব করতে পারলে এনজিওগুলোর না পারার কোনো কারণ নেই। দেশের ৬০ শতাংশ এনজিওর অদক্ষতার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.