আফগানিস্তানে নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের সদ্য সমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দেশটির স্বাধীন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা বলেছে, ব্যাপক অনিয়মের কারণে নির্বাচনের ফলাফল ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তারা ‘খুবই উদ্বিগ্ন’। আফগান নির্বাচনী নালিশ কমিশনও একই অভিযোগ করে বলেছে, নির্বাচনে বড় ধরনের অন্যায় ও অনিয়মের কথা তারাও শুনেছে। গত শনিবার এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে ন্যাটো বলেছে, গত বছরের তুলনায় এবারের নির্বাচনে সহিংসতা কম হয়েছে। এ কারণে হতাহতের ঘটনাও কম ঘটেছে। এবার সর্বমোট ৪৮৫টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৯৪টি হলো জঙ্গি হামলার ঘটনা। অথচ গত নির্বাচনে জঙ্গি হামলার ঘটনাই ঘটেছে ৪৭৯টি। ন্যাটো দাবি করেছে, শনিবারের নির্বাচনী সহিংসতায় ২২ জন নিহত হয়েছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫৭ জন।
ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন ফাউন্ডেশন অব আফগানিস্তান (এফইএফএ) নামের ওই নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থাটি নির্বাচনোত্তর একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, অন্তত ৩৮৯টি ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা হয়েছে। প্রার্থীদের পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষ ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে। অনেক ভুয়া ভোট জমা পড়েছে ব্যালট বাক্সে। অপ্রাপ্ত বয়স্করা পর্যন্ত ভোট দিয়েছে। ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তারা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করেছেন।
নির্বাচনী নালিশ কেন্দ্র ‘ইলেক্টোরাল কমপ্লেন্টস কমিশন’ বলেছে, তাদের কাছেও নানা ধরনের অভিযোগ এসেছে। দেরিতে ভোটকেন্দ্র খোলা হয়েছে অনেক জায়গায়। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। ভুয়া ভোট পড়েছে অনেক। নিবন্ধন কার্ডের অপব্যবহার হয়েছে। কেউ কেউ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখেন, তাঁদের ভোট আগেই দেওয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিম্নমানের কালি ব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও কোথাও ব্যালট পেপারের টানও পড়েছে।
এফইএফএ আরও বলেছে, কুনার, খোস্ত ও কান্দাহার প্রদেশে বেশকিছু ভোটকেন্দ্র বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া লাঘমান, কুন্দুজ ও বাদগিজে ভোটকেন্দ্র দখল করে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অনেক স্থানে ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সংস্থাটি বলেছে, কিছু কিছু স্থানে প্রার্থী, তাঁর সমর্থক ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সরাসরি সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছেন। সরকারি কর্মকর্তারা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোটদান-প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেছেন।
পর্যবেক্ষকেরা বলেছেন, ভোট দিতে যে কালি ব্যবহার করা হয়েছে, তা মানসম্পন্ন ছিল না। অনেক স্থানে ভোটাররা পানিতে কালি মুছে আবার ভোট দিয়েছেন। এ কারণে প্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এই সুযোগে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সমর্থকদের দিয়ে একাধিক ভোট দিয়েছেন।
এফইএফএ জানায়, ভোট নেওয়ার শেষ দিকে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। অনেক স্থানে নির্ধারিত সময়ের আগেই ভোট নেওয়া বন্ধ করে ভোট গণনা শুরু করা হয়। এ কারণে অনেকে ভোট দিতে পারেননি। কোনো কোনো স্থানে ভোট নেওয়ার দীর্ঘ সময়ের পরও ভোট গণনা শুরু করা হয়নি। আবার কিছু স্থানে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়ায় ভোটই দিতে পারেননি অনেকে।
এসব অনিয়ম ও অন্যায় বিবেচনা করে এফইএফএ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ-পরবর্তী বাকি কাজ স্বচ্ছতার সঙ্গে করার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি এসব অনিয়মের তদন্তেরও দাবি জানানো হয়েছে। এফইএফএ বলেছে, তারা অনিয়মের আরও নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রাখবে।
এদিকে অপহূত তিনজন নির্বাচনী কর্মকর্তার লাশ গতকাল রোববার দেশটির উত্তরাঞ্চল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার নির্বাচনের দিন তাঁদের বালখ প্রদেশ থেকে অপহরণ করা হয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.