প্রবাসীদের মালিকানায় নতুন একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক আসছে

আরও একটি নতুন বাণিজ্যিক ব্যাংক হতে যাচ্ছে। এই ব্যাংকের উদ্যোক্তারা হবেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। প্রাথমিকভাবে এই ব্যাংকের নামকরণ করা হচ্ছে এনআরবি ব্যাংক।
সরকারের সদিচ্ছায় দেশে স্থাপিত অন্য ব্যাংকের আদলে এই প্রবাসী ব্যাংকের প্রাথমিক নীতিমালা তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
শিগগির এই ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের জন্য নীতিমালা সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে। প্রবাসীরা যাঁরা এই ব্যাংকের উদ্যোক্তা হবেন, তাঁদের মালিকানার টাকা বিদেশে কর পরিশোধ করা আয় হতে হবে।
প্রস্তাবিত এই ব্যাংকের নীতিমালাটি খসড়া হিসেবে শিগগিরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, এনআরবি ব্যাংক হবে একটি লিমিটেড কোম্পানি। এর পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকার কম হবে না। ব্যাংকটিকে দুই বছরের মধ্যে শেয়ারের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৫০ ভাগ অর্থ উত্তোলন করতে হবে।
কাউকে উদ্যোক্তা হতে হলে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার শেয়ারের মালিকানা থাকতে হবে। তবে এর পরিমাণ কোনো অবস্থাতেই পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।
উদ্যোক্তা বা তাঁর পরিবারের সদস্য একক বা যৌথভাবে পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেয়ারের মালিক হতে পারবেন।
পরিবার বলতে ব্যাংক কোম্পানি আইনে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। সে অনুসারে বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যাসহ উদ্যোক্তার ওপর নির্ভরশীলদের বোঝানো হয়।
উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন যদি ৪০০ কোটি টাকা হয় তবে ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৪০ কোটি টাকার শেয়ার কোনো ব্যক্তি বা তাঁর পরিবার ধারণ করতে পারবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, ব্যবসায় শুরুর তিন বছরের মধ্যে কোনো উদ্যোক্তা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া তাঁর শেয়ার হস্তান্তর করতে পারবেন না। উদ্যোক্তা প্রবাসীদের অর্থ ব্যাংক চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে আসতে হবে এবং সেই অর্থ দেশের কোনো ব্যাংকে সংরক্ষিত থাকতে হবে।
উদ্যোক্তাকে সংশ্লিষ্ট দেশের কর বিভাগ থেকে নিশ্চিত করতে হবে যে তাঁর বিনিয়োগ করা অর্থের আয়কর দেওয়া আছে। প্রস্তাবিত ব্যাংকের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সংগৃহীত অর্থ যে কোথাও থেকে ধার করে আনা হয়নি—এ ব্যাপারেও প্রত্যয়ন করা থাকতে হবে। অর্থাৎ অন্যের কাছ থেকে ধার করে এনে সেই টাকায় এনআরবি ব্যাংকের উদ্যোক্তা হওয়া যাবে না।
আইপিওর মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে পুঁজি উত্তোলনের সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে, ব্যাংক ব্যবসায় শুরু করার দুই বছরের মধ্যে।
আবেদন করার পরপরই উদ্যোক্তাদের যোগ্যতা মূল্যায়ন ও যাচাই করা হবে। এর মধ্যে তাঁদের সততা, অতীত কর্মকাণ্ড, আদালত কর্তৃক দোষী হয়ে জেল খাটা ইত্যাদি বিবেচনায় নেওয়া হবে।
তার পরের ধাপ হচ্ছে প্রস্তাবিত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার দিক। অন্য কোনো ব্যাংকের পরিচালক বা কর্মকর্তা প্রস্তাবিত ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না। কোনো পরিচালক ইচ্ছে করলে বিকল্প পরিচালক নিয়োগ দিতে পারবেন, তবে এই সংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি হবে না। বিকল্প পরিচালকদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে।
আর প্রস্তাবিত ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে (সিইও) আর্থিক খাতের ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, নিবন্ধনের জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বরাবর অফেরতযোগ্য ১৫ হাজার ডলারের ড্রাফট জমা করতে হবে। এ ছাড়া আবেদনকারীদের নাম, ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, সিইওর বেতন, শেয়ারহোল্ডারদের সভার কার্যপত্র, মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন এবং মেমোরেন্ডাম অব আর্টিক্যালসের খসড়া ইত্যাদি জমা দিতে হবে।
ব্যাংকটিকে কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন নিতে হবে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে। এই আবেদন মূল্যায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মনোনীত একটি নির্বাচক প্যানেল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৩১ ধারা অনুযায়ী এনআরবি ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং নীতিমালা করা হয়েছে।
তবে নীতিমালাটি এখনো খসড়া। অনুমোদনের জন্য নীতিমালাটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.