মাহমুদের বিকল্প চান সিডন্স

নাকের ডগাটা লাল হয়ে উঠেছে। একটু ক্ষতের মতোও আছে। কী হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, ‘স্কিন ক্যানসার।’ উত্তরটা জেমি সিডন্স এত অবলীলায় দেন যে ত্বকের ক্যানসারটাকে সর্দি-কাশির মতো মামুলি কোনো অসুখ মনে হতে বাধ্য।
অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য ব্যাপারটা সে রকমই আসলে। সিডন্স যে ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত, আবহাওয়াগত কারণেই নাকি অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য সেটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এই ক্যানসার আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নয়। এর আগেও দুবার শরীরের ক্যানসার-আক্রান্ত অন্য জায়গায় অস্ত্রোপচার করিয়েছেন সিডন্স। এবারেরটা নাকি কী একটা ক্রিম লাগালেই ভালো হয়ে যাওয়ার কথা।
ত্বকের ক্যানসার নিয়ে চিন্তিত না হলেও সিডন্সকে আবারও চিন্তা করতে হচ্ছে তাঁর কোচিং প্যানেল নিয়ে। ফিল্ডিং কোচ ও বোলিং কোচ যোগ হওয়ায় জাতীয় দলের কোচিং প্যানেলের চেহারা যখনই একটা পরিপূর্ণ রূপ পেল, তখনই সহকারী কোচের পদ থেকে খালেদ মাহমুদের সরে দাঁড়ানোর ধাক্কা। সিডন্স চান না বিশ্বকাপের আগে জায়গাটা খালি থাকুক। মাহমুদের জায়গায় শিগগিরই নতুন কাউকে চাইছেন এই অস্ট্রেলিয়ান।
‘ও (খালেদ মাহমুদ) চলে যাওয়ার পর সহকারী কোচ হিসেবে আমার এখন আরেকজন স্থানীয় কোচ দরকার। কোচিং প্যানেলে এই জায়গাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ’—বলেছেন জেমি সিডন্স। শুধু অনুশীলনে সাহায্যের জন্যই নয়, খেলোয়াড়দের সঙ্গে বিদেশি কোচদের ভাষাগত ব্যবধান দূর করার জন্যও দলে একজন স্থানীয় কোচ প্রয়োজন বলে মনে করছেন কোচ।
সিডন্সের ওপর অভিমান করেই সরে দাঁড়িয়েছেন মাহমুদ। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ককে নাকি সহকারী কোচ হিসেবে সিডন্স সেভাবে ব্যবহারই করতেন না। সহকারী কোচ তো নয়, কোচদের সহকারীই হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সিডন্স-মাহমুদের ব্যক্তিত্বের সংঘাতটা চরমে ওঠে গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। একই দলে থেকেও তখন থেকেই দুজন মুখোমুখি। এমনও শোনা যায়, সিডন্স নাকি কখনো কখনো খেলোয়াড়দের সামনেই অপদস্থ করতে চেয়েছেন মাহমুদকে। এ প্রসঙ্গে সিডন্স অবশ্য বলেছেন, ‘আমাদের মধ্যে এত দিনে একবারই মাত্র ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল এবং সেটাও বড় কিছু না।’
তবে সহকারী কোচ হিসেবে মাহমুদকে সেভাবে কাজে না লাগানোর ব্যাপারটি স্বীকার করেছেন সিডন্স। এ ব্যাপারে পরিষ্কার ব্যাখ্যাও আছে তাঁর, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, একজন সাবেক খেলোয়াড় হয়েও সুজন (মাহমুদ) এখনো কোচিংয়ের কোনো জায়গাতেই বিশেষজ্ঞ নয়। এ কারণেই জাতীয় দলের কোচিংয়ে বোর্ড বা আমি তাকে নির্দিষ্ট কোনো দায়িত্ব দিইনি। যত যা-ই বলুন, আমরা একটা আন্তর্জাতিক দল। সামর্থ্যের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে সম্ভাব্য সেরা কোচদেরই প্রয়োজন খেলোয়াড়দের।’ মাহমুদের অনুশীলনে কোচ হিসেবে ভূমিকা রাখতে না পারার হতাশাটাকে তাই যৌক্তিক মনে করছেন সিডন্সও। সঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘সহকারী কোচরা প্রায়ই মনে করে তাদের হয়তো আরও বেশি কিছু করার আছে। কিন্তু তাদের এটাও জানা উচিত, যে কাজটা তাদের দিয়ে করানো হচ্ছে, কোচিং-কাঠামো আর দলের সাফল্যে সেটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটা হয়তো খুব চটকদার কিছু নয়, প্রচারের আলোও অতটা পায় না। তবে জীবনে হাঁটতে শেখার আগে তো আপনাকে হামাগুড়ি দিয়েই এগোতে হবে।’
একজন আদর্শ সহকারী কোচ ঠিক কেমন হওয়া উচিত, সে সম্পর্কেও আছে সিডন্সের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, ‘সাধারণভাবে একজন সহকারী কোচের নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা থাকতে হয়। কোনো একটা জায়গার দুর্বলতা দূর করতে প্রধান কোচই তাঁকে বেছে নেন। সহকারী কোচ সব সময় প্রধান কোচকে সমর্থন করবেন, সব কাজে সব রকম উৎসাহ দেবেন।’ সহকারী কোচকে যে সব সময় প্রধান কোচের মতো ব্যাটিং, বোলিং বা ফিল্ডিং নিয়েই কাজ করতে হবে, সিডন্স সেটা মনে করেন না। তাঁর মতে, নেট বোলার থেকে শুরু করে অনুশীলনের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাও সহকারী কোচের কাজের মধ্যে পড়ে।
মাহমুদের ব্যাপারে একটা জায়গায় সিডন্সের আপত্তির কথা শোনা যায়—বিসিবি মাহমুদকে জাতীয় দলের সহকারী কোচের দায়িত্ব দিয়েছিল সিডন্সের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই। জাতীয় দলের কোচ এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হলেও কোচিং প্যানেলে মাহমুদের উপস্থিতিটা শেষ দিকে প্রয়োজনীয়ই মনে হয়েছে তাঁর কাছে, ‘সুজনই আমার লজিস্টিক ব্যাপারগুলো দেখত। আমার সঙ্গে আলোচনা করে দৈনন্দিন পরিকল্পনা লিখত সে। এসব ক্ষেত্রে সে দারুণ। অনেক অভিজ্ঞ হয়ে উঠছিল, কোচ হিসেবেও প্রতিদিনই উন্নতি করছিল। কঠোর পরিশ্রম করতে পারে ও, বলতে পারেন মাহমুদ জাতীয় দলের জন্য একটা সম্পদেই পরিণত হয়েছিল।’
জেমি সিডন্সের শেষ কথাগুলোকে কীভাবে নেবেন মাহমুদ?

No comments

Powered by Blogger.