উইং ব্যবহারের সুফল পেল হল্যান্ড

লাতিন দেশগুলো মাঝখান দিয়ে আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করে বেশি। ইউরোপিয়ানরা তা নয়। এর তরতাজা প্রমাণ পরশু উরুগুয়ের বিপক্ষে হল্যান্ড। উরুগুয়েকে হারিয়ে হল্যান্ড ফাইনালে গেল কার্যকর উইং প্লের সুফল ঘরে তুলে।
মাঝখান দিয়ে আক্রমণে গেলে বেশি বাধার সম্মুখীন হতে হয়। ডাচরা সে পথে না গিয়ে উইং দিয়ে বেশি খেলেছে। সুবাদে প্রচুর ক্রস করেছে বক্সে। ডিফেন্ডারদের ভুল করার সুযোগ এই ক্ষেত্রে বেশি থাকে। বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে কখনো বাইরে মারে, কখনো কর্নার হয়ে যায়। আর বাতাসে হেরে গেলে তো বড় বিপদ, গোলের সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যায়। এই কাজটা শুধু হল্যান্ড নয়, সব দেশই কম-বেশি করে। হল্যান্ড একটু বেশিই করল এই যা।
আরিয়েন রোবেন একবার বাঁয়ে গেছে, একবার ডানে। চরকির মতো ঘুরে প্রান্ত বদল করেছে সে। এভাবে পজিশন বদলানোয় প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা বিভ্রান্ত হয়েছে। রক্ষণ আর জমাট থাকেনি। হল্যান্ডের জয়ের এটা একটা বড় কারণ।
স্নাইডারের কাছে যা আশা করেছিলাম, সেটা করতে পারেনি বা করতে দেওয়া হয়নি। এদিন ঘাটতিটা পূরণ করে দিয়েছে ফন পার্সি। এই বিশ্বকাপে সেমিফাইনালেই তাকে বেশি সক্রিয় দেখা গেছে। একজনের ঘাটতি আরেকজন পুষিয়ে দেওয়ার এই যে ফুটবল, এটির ফলই পেয়েছে হল্যান্ড।
রোবেন দৌড়াদৌড়ি করেছে অনেক। কিন্তু কখনো কখনো বল পায়ে রেখেছে বেশি। দ্রুত কাট করে ভেতরে ঢুকে নিজে শট নেওয়া বা সুন্দর পাস দেওয়া রোবেনের বিশেষত্ব। কিন্তু সেটি এদিন তেমন দেখলাম না। তবে দলের প্রয়োজনে এদিন প্রান্ত বদল করার পাশাপাশি পেছনে এসে রক্ষণও করেছে। কোনো না কোনোভাবে অবদান রাখায় লাভবান হয়েছে তার দল।
গতিময় ফুটবল, সুন্দর ফুটবল নিয়ে এখন দলগুলো আর তেমন ভাবে না। সেটি বিশ্বকাপের ফাইনালে যাওয়ার লড়াই হোক—তাতে কী! দুদলই খুব সাবধানে শুরু করল ম্যাচটা। হুট করে একটা পাস দিলাম, প্রতিপক্ষ বল নিয়ে আক্রমণে গেল—এটা যেন না হয় সে জন্য খুবই সতর্ক ছিল দুদল। ম্যাচটা তাই উপভোগ্য হয়নি। এবারের বিশ্বকাপে এ ম্যাচেই সবচেয়ে বেশি মিস পাস দেখলাম।
মূল স্ট্রাইকার সুয়ারেজের অভাব অনুভব করেছে উরুগুয়ে। অধিনায়ক লুগানোর না থাকাও রক্ষণে চাপ বাড়িয়েছে। মাঝমাঠ থেকে ওপরের দিকে নেতা ছিল ডিয়েগো ফোরলান। কিন্তু সুয়ারেজ না থাকায় তাকে অতিরিক্ত চাপ নিতে হয়েছে। ফ্রি-কিক, কর্নার সব ও-ই নিয়েছে। বাড়তি চাপ পড়ে যাওয়ায় শেষ দিকে আর পারছিল না ফোরলান। যেটা তার দলকে নিয়ে গেছে পরাজয়ের দিকে।
হল্যান্ডকে নিয়ে আলোচনায় টোটাল ফুটবল প্রসঙ্গটা চলে আসছেই। এই হল্যান্ড সেই পথে কতটা আছে? সবাই আক্রমণে যাবে, সবাই রক্ষণ করবে—মোটা দাগে টোটাল ফুটবল বলতে তো আমরা এটাই বুঝি। এখন আসলে সবাই একই ধাঁচের ফুটবল খেলে। ব্যাপারটা হলো, মান এবং সামর্থ্যের প্রয়োগ মাঠে যারা ভালো করবে জয় তাদেরই। হল্যান্ড তাদের সামর্থ্যের প্রয়োগটা মাঠে করতে পারছে।
সেমিফাইনালে হল্যান্ডের জয় যোগ্যতর দল হিসেবেই।

No comments

Powered by Blogger.